প্যারিস, 6 জুলাই : কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৷ সুস্থও হয়েছেন ৷ কিন্তু , এরপর থেকেই এক নাম না জানা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার আপনাকে ভুগতে হচ্ছে ৷ গন্ধ পাচ্ছেন না কিছুরই ৷ হারিয়ে ফেলেছেন ঘ্রাণশক্তি ৷ গবেষণা বলছে, কোরোনায় সুস্থ হয়ে গেলেও দীর্ঘমেয়াদি ঘ্রাণশক্তি হারাতে পারেন ৷ কোরোনা যুদ্ধে জিতেও বিশ্বের অনেকেই এই অক্ষমতার শিকার ৷ এ এক অদ্ভুত প্রতিবন্ধকতা ৷
বিশ্বব্যাপী চলছে কোরোনা প্যানডেমিক ৷ ইতিমধ্যেই মারা গেছে বিশ্বের বহু মানুষ ৷ কোরোনা সংক্রমণ রুখতে তৎপর ওষুধ তৈরির সংস্থাগুলি ৷ এখনও পর্যন্ত এই রোগের উপসর্গ হল অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো - জ্বর , সর্দি, কাশি ৷ তবে এছাড়াও আপনি দীর্ঘদিনের জন্য হারাতে পারেন ঘ্রাণশক্তি ৷ গবেষণায় দেখা গেছে, কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরও ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছেন অনেকেই ৷
অ্যানসমিয়া, ঘ্রাণের ক্ষমতা হারানো ৷ শারীরিকভাবে চোখে দেখা না গেলেও ৷ এই সমস্যা নিয়ে বাঁচা কষ্টকর ৷ আর এই রোগের নেই কোনও ওষুধ ৷ এমনই তথ্য উঠে এসেছে গবেষণা থেকে ৷ বললেন জিন মিশেল মাইলার্ড ৷ তিনি anosmie.org নামের একটি ফ্রেঞ্চ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ৷ তিনি বলেন, " অ্যানসমিয়া , জীবন থেকে সব গন্ধ , ঘ্রাণ মুছে ফেলে ৷ আপনি যখন বুঝতে পারবেন , সকালে উঠে প্রথম কফির গন্ধ আর পাচ্ছেন না কিংবা স্নানের সময় সুগন্ধি সাবানের গন্ধ আর পাচ্ছেন না ৷ শুধুমাত্র জীবনের ভালো কিছু মূহুর্তই নয়, পড়তে পারেন কোনও মারাত্মক পরিস্থিতর মধ্যেও ৷ কারণ অ্যানসমিয়ায় আক্রান্তরা পান না আগুনের ধোঁয়ার গন্ধ বা গ্যাস লিকের গন্ধ কিংবা আবর্জনার গন্ধ ৷ এটা একটা অত্যাচার ৷ "
হাসপাতাল ফাউন্ডেশন রথসচাইল্ডের এক ENT বিশেষজ্ঞ অ্যালান করে বলেন, ঘ্রাণশক্তি হারালে খাওয়ার অভ্যাসেও পরিবর্তন হয় ৷ কারণ , আমরা খাবার খাওয়ার আগে গন্ধ শুকে খাবার কতটা সুস্বাদু তা বুঝতে পারি ৷ তবে, শুধুমাত্র কোরোনাই নয়, অ্যানসমিয়া হতে পারে নানা রোগ থেকে ৷ যেমন - ন্যাসাল পলিপস, ক্রনিক রিহনিটিস, ডায়াবেটিস , অ্যালজ়েইমারস ও পারকিনসনস ৷ এর লিস্টে এবার যুক্ত হয়েছে কোরোনা সংক্রমণও ৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ তাদের ঘ্রাণশক্তি হারায় , আর তা কোনওভাবেই ফিরে পায় না ৷ তখন তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যায় ৷ তাদের কাছে জীবনের মূল্য কমে যায় ৷ কখনও মানুষকে ভুগতে দেখা যায় অবসাদে ৷ সমস্যা তখনও হয়, যখন এই সমস্যা চলতেই থাকে ৷
এবিষয়ে মাইলার্ড বলেন, ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়ার প্রথম এক মাসে অবস্থা অতটাও গুরুতর হয় না ৷ কিন্তু, দু'মাস থেকে শুরু হয় সমস্যা ৷ আর ছয় মাস অবধি এই সমস্যা চলতে থাকলে শুরু হয় মানসিক অবসাদ ৷ এই অবস্থায় বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে ৷ আপনার এই সময় সাহায্যের প্রয়োজন ৷
অ্যানসমিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি -
এর নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই ৷ বিশেষজ্ঞ করের মতে, আপনাকে সমস্যার কারণটা বুঝতে হবে ৷ কোনও ভাইরাস থেকে অ্যানসমিয়া হলেও ভাইরাল ইনফেকশনের চিকিৎসায় কোনও প্রভাব পড়ে না ৷ গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে , প্রায় 80 শতাংশ কোরোনায় আক্রান্ত রোগীই প্রথম 8 থেকে 10 দিন কিংবা এক মাসের মধ্যে সেরে উঠেছেন ৷ কিন্তু বাকীরা যাদের সারতে দেরি হচ্ছে , তাদের ঘ্রাণ নেওয়ার স্নায়ু নষ্ট হয়ে যায় ৷ তবে, নাকের একদম ভিতরের দিকের স্নায়ুগুলি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে ৷
করে জানান, প্যারিসের দুটি হাসপাতাল রথসচাইল্ড ও লারিবইসিয়ের CovidORL নামের একটি স্টাডি লঞ্চ করেছে ৷ এই স্টাডিটি অ্যানসমিয়া হলে, নাক ভালোভাবে ধুয়ে তা কীভাবে সারানো যায় সেবিষয়ে তদন্ত করছে ৷ একটি কর্টিসন - বেসড চিকিৎসা এই অ্যানসমিয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা আশাদায়ক ৷ তিনি আরও বলেন, আরও একটি উপায় আছে এর চিকিৎসার ৷ করতে হবে ঘ্রাণ নিয়ে পড়াশোনা ৷ যেমন - ঘ্রাণশক্তি হারালেও কোন বস্তুর কেমন গন্ধ ছিল তা থেকে যায় স্মৃতিতে ৷ তাই বেছে নিন পাঁচটি গন্ধযুক্ত জিনিস ৷ তারপর দিনে 2 বার 5 থেকে 10 মিনিট জিনিসটি শুকতে হবে আর ভালোভাবে দেখতে হবে জিনিসটি কী ৷ অভ্যাস করতে হবে প্রতিদিন ৷
এবিষয়েই CNRS ( ন্যাশানাল সেন্টার ফর সায়ন্টিফক রিসার্চ ) - এর প্রধান হাইরাক গার্ডেনের সঙ্গে এসেন্সিয়াল তেল নিয়ে গবেষণা করছে anosmie.org সংঠনটি ৷ থমাস হামেলের ড্রেসডেন - বেসড কাজের উপর নির্ভর করে এই গবেষণা চলছে ৷ গার্ডেন বলেন, " মার্চের শুরু থেকেই আমরা মানুষের প্রচুর ফোন কল , ইমেল পাচ্ছি ৷ যারা বলেছেন কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে ওটার পরও তারা কোনওকিছুর গন্ধ পাচ্ছেন না ৷ "