আসানসোল, 20 ডিসেম্বর: বাঙালিরা ক'জনই বা জানে 'কোমাগাতামারু'র সেই রক্তক্ষয়ী ঘটনা । ইতিহাস বইয়ে ধুলোতেই চাপা পড়ে যাচ্ছে বজবজ বন্দরে সেই ব্রিটিশ পুলিশদের গুলিতে 26 জনের হত্যাকাণ্ড । ঠিক তার পাঁচ বছর পর হয় জালিয়ানওলাবাগের হত্যাকাণ্ড । আর এই দু’টি ঘটনাকে পুনরায় স্মরণ করাতে বজবজের 'কোমাগাতামারু' থেকে জালিয়ানওলাবাগের উদ্দেশে পদযাত্রা করছেন অতীন হালদার ।
তাঁর বয়স প্রায় 60 ছুঁইছুঁই । এই বয়সেও বজবজ থেকে জালিয়ানওয়ালাবাগের উদ্দেশে হেঁটে রওনা দিয়েছেন এই প্রবীণ । চলার পথ প্রায় 1950 কিলোমিটার । এতটা পথ হাঁটতে পারবেন? দৃপ্ত প্রত্যয় নিয়ে অতীন হালদার বলেন, "মানুষকে ইতিহাস জানাতে যে পারতেই হবে ।"
কী সেই ইতিহাস?
অতীন হালদার আরও বলে চলেন, "1919 সালের 13 এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল । তার ঠিক পাঁচ বছর আগে 1914 সালে দক্ষিণ 24 পরগনার বজবজ বন্দরেও একই ভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল । দু’টি ক্ষেত্রেই বহু শিখ মানুষ শহিদ হয়েছিলেন । স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার সঙ্গে পঞ্জাবের একটা যোগ ছিল । সেই ঘটনাক্রমকে মানুষের স্মৃতিতে ফেরানোর উদ্দেশেই আমার এই পদযাত্রা ।"
কেন বজবজ স্টেশনের নাম কোমাগাতামারু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, নেপথ্য ইতিহাস অনেকেই জানেন না । ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, 1914 সালে 'কোমাগাতামারু' নামে একটি জাপানি জাহাজে বহু শিখ, মুসলিম ও হিন্দুরা কানাডার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে । ইংরেজদের অত্যাচারেই সম্ভবত তারা হংকং থেকে যাত্রা শুরু করে । কিন্তু নানা জটিলতায় কানাডায় স্থান হয়নি তাদের । অনান্য দেশেও ঠাঁই মেলেনি । এরপর ভারতে আসার জন্য তারা চেষ্টা করে । বজবজ বন্দরে জাহাজ দাঁড়ালে ব্রিটিশ পুলিশ শুরু করে বন্দুক দিয়ে দমন-পীড়ন । নির্বিচারে গুলি চালানো হয় । তাতে 27 জন শহিদ জন । যাদের মধ্যে অনেকেই শিখ সম্প্রদায়ের ছিলেন ।
একই ভাবে পাঁচ বছর পর জালিয়ানওয়ালাবাগে গুলি চালানো হয় নির্বিচারে । আর এই দু’টি ঐতিহাসিক ঘটনাকে ফিরিয়ে আনতেই বজবজের বাসিন্দা অতীন হালদার পদযাত্রা শুরু করেছেন । পথচলতি মানুষকে ইতিহাস বোঝাচ্ছেন । 11 ডিসেম্বর ভোরবেলায় যাত্রা শুরু করেছেন তিনি । এর আগেও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করেছেন তিনি । এবারও আশা নিশ্চয় পৌঁছাবেন জালিয়ানওয়ালাবাগে । শুক্রবার বাংলা ছাড়িয়ে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করলেন তিনি ।