কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: কলকাতায় এখন সবার মুখে মুখে ঘুরছে জোড়াবাগানে বালিকা খুনের ঘটনা। 8 বছরের নাবালিকার উপর পৈশাচিক অত্যাচারের কাহিনি শিউরে দিয়েছে শহরবাসীকে। এই ঘটনা ফিরিয়ে এনেছে 31 বছর আগে শহরের বুকে ঘটে যাওয়া আর এক কন্যার নৃশংস হত্যার স্মৃতি। অপরাধের ধরনেও সেই ঘটনার সঙ্গে জোড়াবাগান কাণ্ডের বেশকিছু মিল খুঁজে পাচ্ছে অনেকে।
স্মরণে হেতাল পারেখ
হেতাল পারেখ হত্যা মামলা। 1990 সালের 5 মার্চের ঘটনা। কলকাতার পদ্মপুকুর এলাকার আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার হয় 18 বছর বয়সের আইসিএসই পরীক্ষার্থিনী হেতাল পারেখের দেহ। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পরই নিজের বেডরুমে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। হেতালকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ওই অ্যাপার্টমেন্টের কেয়ারটেকার তথা নিরাপত্তারক্ষী ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে। 14 বছর ধরে চলে ট্রায়াল। অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হয় ধনঞ্জয়। 2004 সালের 14 অগাস্ট আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
কোথায় মিল ?
জোড়াবাগানের ঘটনাতেও অর্ধনগ্ন অবস্থায় মেলে বালিকার দেহ। হেতালের মতোই তার উপরও যৌন নির্যাতন চালিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয় একরত্তিকে। হেতাল পারেখ মামলায় দোষী সাব্যস্ত তার অ্যাপার্টমেন্টের কেয়ারটেকার। আর জোড়াবাগানে মূল অভিযুক্ত ওই বাড়িরই দারোয়ান রামকুমার ওরফে লম্বু। তাকে আটক করার পর রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ ক'রে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে গোয়েন্দা বিভাগের। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত মামার বাড়িতে বেড়াতে আসা বালিকাকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর তার উপর নৃশংস যৌন অত্যাচার চালানো হয়। এরপর মদের নেশায় অচৈতন্য হয়ে পড়েছিল অভিযুক্ত। কিন্তু সম্বিত ফিরতেই আতঙ্কে বুক কেঁপে ওঠে তার। বাড়ি ফিরে কাউকে ওই বালিকা সব ঘটনা জানিয়ে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় অপরাধের কোনও প্রমাণ রাখতে চায়নি অভিযুক্ত। সে গলা টিপে হত্যা করে নাবালিকাকে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সে ছুরি দিয়ে মেয়েটির গলার নলি কেটে দেয়। বালিকাটি মারা যাওয়ার পর এলাকা থেকে চম্পট দেয় সে। একই রকমভাবে খুন করা হয়েছিল হেতাল পারেখকেও। তার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে নৃংশসভাবে তাকে খুন ক'রে পালিয়েছিল অপরাধী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন: জোড়াবাগানে নাবালিকা খুনে উদ্ধার 'মার্ডার ওয়েপন', মিলেছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট
তদন্ত কোন পথে?
তবে নৃশংসতায় হেতাল পারেখের মামলাকে ছাপিয়ে গিয়েছে জোড়াবাগানের ঘটনা। এখানে অপরাধস্থল থেকে মিলেছে মৃত শিশুর দাঁত, গোছা গোছা চুল। যে ছাদের কোণ থেকে তার দেহ মিলেছে, সেখানে প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ছিল ধস্তাধস্তি ও অত্যাচারের ছবি। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে ভর ক'রে গোয়েন্দারা মনে করছেন, শুধু যৌন নির্যাতনই নয়, বালিকার উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে অভিযুক্ত। এতটাই যে, মেয়েটির দাঁত উপড়ে এসেছে, টেনে ছিঁড়ে আনা হয়েছে মুঠি মুঠি চুল। 8 বছরের মেয়ের প্রতিরোধ আটকাতেই যে শুধু তার উপর এই নির্যাতন চালানো হয়, তা বিশ্বাস করা কঠিন। অপরাধের ধরন দেখে পুলিশের একাংশের ধারণা, অভিযুক্ত রেগুলার অফেন্ডার। এর আগেও সে কোথাও একই ধরনের অপরাধ করেছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা যোগাযোগ করছেন রামকুমারের ঝাড়খণ্ডের বাড়িতে।
হেতাল পারেখ মামলায় সুদীর্ঘ 14 বছরের বিচারপর্বে বিরাট বিতর্কের সাক্ষী হয়েছিল রাজ্য। এটা হয়ে ওঠে বিরাট হাই প্রোফাইল মামলা। তবে অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করেছিলেন তদন্তকারী অফিসাররা। জোড়াবাগানের ঘটনাতেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই খুনের যবনিকা পতনের দিকে অনেকটাই এগিয়েছে পুলিশ। তথ্য ও প্রমাণ জোগাড়ের মাধ্যমে অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করে মৃত বালিকার প্রতি সুবিচারের চেষ্টায় মরিয়া গোয়েন্দারা।