মালদা, ৭ মার্চ : মালদায় ক্ষেত নদী উৎসবে ২৫২ ক্লাবকে পুরস্কৃত করল রাজ্য সরকার। এই উৎসবের মূল উদ্যোক্তা ছিল জেলা পুলিশ। গতকাল মালদা শহরের সত্য চৌধুরি ইনডোর স্টেডিয়ামে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, মেন্টর কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি, উত্তর মালদার সাংসদ মৌসম বেনজির নুরসহ আরও অনেকে। কিন্তু সাধারণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীতেও উঠে গেছে রাজনৈতিক প্রশ্ন।
২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শুরু হয় এই উৎসব। এটি মূলত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যাতে অংশ নেয় জেলার বিভিন্ন ক্লাব। তাছাড়া, ব্যক্তিগতভাবেও এই উৎসবে অংশ নেওয়া যায়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় সফল ২৫২ ক্লাবের প্রতিটিকে পুরস্কারস্বরূপ ১০ হাজার টাকা ও ব্যক্তিগত স্তরে সফল ২৯১ জনকে ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
ক্ষেত নদী উৎসব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সাংসদ মৌসম বেনজির নুর বলেন, "পুলিশের সঙ্গে যুবকদের নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করার জন্যই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। প্রচুর যুবক এই প্রতিযোগিতায় উঠে এসেছেন। আমি চাই, আরও বেশি সংখ্যক যুবককে এই কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হোক।"
পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, "২০১৮ সালের শেষদিকে এই উৎসব শুরু হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন জঙ্গলমহল উৎসবের মতো নামাঙ্কিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা রয়েছে, ঠিক সেভাবেই গৌড়বঙ্গের তিনটি জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। মালদা জেলায় প্রায় ৩০০টি রেজিস্টার্ড ক্লাব রয়েছে। সেইসব ক্লাব এবং ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এর মধ্যে যারা জিতেছে, তাদের আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করা হল।"
জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, "জনসংযোগের অঙ্গ হিসাবে জেলা পুলিশই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। জেলা থেকে বিভিন্ন ক্লাব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। সফল ক্লাবগুলোকে এই অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যজুড়ে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের জনসংযোগ বাড়াতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।"
তবে, নির্বাচন ঘোষণার ঠিক আগে পুলিশের এই অনুষ্ঠানে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। CPI(M) জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, "বর্তমান সরকারের আমলে একাধিক উৎসব চালু হয়েছে। অতীতেও আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ক্লাবকে লাখ লাখ টাকা বিলি করা হচ্ছে। রাজ্যে বেকার যুবক যুবতিদের কোনও কাজ নেই। SSC কর্মপ্রার্থীরা অনশনে বসে রয়েছেন। এরাজ্যে নিয়োগ হয় না। আর উৎসবের নাম করে কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করা হচ্ছে। খেলাধুলোর উন্নতির জন্য কিছু করা হলে তা ভালো কথা। কিন্তু, তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। আসলে নির্বাচনের আগে জনমানসে কিছুটা প্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য এই কাজগুলি করা হচ্ছে। তবে, এই রাজ্য সরকারের এটাই সংস্কৃতি।"
তিনি আরও বলেন, "এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনে ক্লাবগুলিকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন কীভাবে হয়েছে তা রাজ্য তথা মালদা জেলার মানুষ জানে। এইসব উৎসব করে বেকারদের বিভ্রান্ত করা হয়। তাঁদের কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়। সরকারের এই প্রচেষ্টায় কারও রাজনৈতিক লাভ হতে পারে। তবে, সমাজের কোনও লাভ হয় না। বর্তমান শাসকদল এভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু, এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।"