কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর : অর্থহীনভাবে BJP-র বিরোধিতা করার জন্য রাজ্যের মানুষকে পিছিয়ে দিচ্ছে বর্তমান শাসকদল । অভিযোগ, রাজ্যের বিরোধী দলগুলির । BJP-র বিরোধিতার নাম করে রাজ্যের গরিব মানুষের উন্নয়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে না একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ । রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনল রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস । এ রাজ্যের গরিব শ্রমিকরা কর্মসংস্থানের জন্য অন্য রাজ্যে চলে গেছে । পরে তারা কাজ হারিয়ে ঘরে ফিরে আসলে, তাদেরকেই বলা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক । কর্মহীন শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বহু কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিক সুযোগ পায়নি বলে অভিযোগ করলেন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বর্তমান শাসকদল প্রতিবছর অতিরিক্ত শ্রমদিবস তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় । তিনি জানিয়েছেন, 2018-19 অর্থবর্ষে 48 শতাংশ বেশি শ্রমদিবস তৈরি করে সারাদেশে 100 দিনের কাজে রেকর্ড গড়েছে রাজ্য । চলতি অর্থবর্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রায় 26 কোটি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে । গ্রামের কাজে পুরনো রেকর্ড ভেঙে সর্বাধিক মহিলাও 100 দিনের প্রকল্পের কাজের সুযোগ পেয়েছেন । 49.45 শতাংশ মহিলা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন ।
মূলত, সেচের কাজে মহিলা কর্মীদের যুক্ত করা হয়েছে । কোরোনার সংক্রমণকালে প্রতিকূলতার মধ্যেও 100 দিনের কাজ এ রাজ্য দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে । গতবছর 25 কোটি কর্মদিবস তৈরি হয়েছিল । চলতি আর্থিক বছরে এক কোটি বেড়েছে । রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় 20 লাখ পরিবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ পেয়েছেন । বিরোধীদের কথাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, " গঠনমূলক সমালোচনা হওয়া উচিত । বিরোধীরা তথ্য না জেনে আবোল তাবোল বকছেন । একশো দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও চলতি বছরের এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছেন । এলাকার মৃত নদী, বৃক্ষরোপণ, গাছের রক্ষণাবেক্ষণ, ঢালাই রাস্তা নির্মাণ সহ বিভিন্ন কাজে একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে বহু মানুষকে যুক্ত করা হয়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকরাও 100 দিনের কাজে অংশগ্রহণ করছেন।"
আরও পড়ুন : কর্মসংস্থান বাড়াতে MNREGA-র খাতে অতিরিক্ত 40,000 কোটি বরাদ্দের ঘোষণা
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান মনে করেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মতুষ্টির লড়াই রয়েছে । সেই কারণে দেশের সমস্ত রাজ্যের MNREGA-র কাজ সফলতার সঙ্গে হলেও পশ্চিমবঙ্গে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে । দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রবর্তিত MNREGA কর্মসূচি 100 দিনের কাজের সূচনা করেছিল । সোনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধির সুপারিশে দেশজুড়ে এর সুফল পাচ্ছিলেন দরিদ্র গরীব মানুষেরা ।
আবদুল মান্নানের দাবি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রবর্তিত কর্মসূচির সুযোগ যখন গোটা দেশের সর্বত্র নেওয়া হচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গ অন্য পথে হাঁটছে ।
কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন 100 দিনের কাজে প্রথম হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ । সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কর্মদক্ষতায় প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে । বেকারত্ব দূর হয়েছে । গ্রামীণ উন্নয়নের কাজ হয়েছে । একথা স্বীকার করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান ।
তিনি বলেন, " কয়েকদিন আগেও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন 100 দিনের কাজে উল্লেখযোগ্য ভাবে এগিয়ে রয়েছে এ রাজ্য । তবে এখন আর তিনি একথা বলছেন না । কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিক, দেশজুড়ে বেড়ে চলা বেকারত্ব, লকডাউন এবং আমফান ঝড়ের পর 100 দিনের কাজ বাড়িয়ে 125 দিন করেছে । আমাদের সেই সুযোগ নেওয়ার নেতৃত্ব নেই । সবটাই আত্মতুষ্টির লড়াই । এভাবে BJP-র বিরোধিতা করা যায় না । এই রাজনীতি করে গরিব মানুষের বিপদ বেড়ে যাচ্ছে । খাদ্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্প গ্রহণ করছে না । রাজ্যের টাকাতেই কেন্দ্রীয় প্রকল্প লাগু হয় । অথচ রাজ্য সরকার সেই প্রকল্প থেকে বহুদূরে ।"
দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় বিধায়ক আলি ইমরান রামজের সমগ্র বিধানসভা এলাকা পঞ্চায়েত নির্ভর । দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় 42 লাখ পরিযায়ী শ্রমিক কাজের সন্ধানে গেছিলেন । এখন তাঁরা কর্মহীন । মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল কাজহারাদের পঞ্চায়েতের মাধ্যমে 100 দিনের বদলে 200 দিনের কাজ দেওয়া হবে । তিনি বলেন, " মহাত্মা গান্ধি কর্মসংস্থান স্কিমের কাজ নিয়ে দেশ ও রাজ্যের সরকার কোনো হদিস দিতে পারছে না । চাকুলিয়ায় কর্মহীন শ্রমিকরা 200 দিনের কাজের হদিস পায়নি । বেকার থাকায় না খেয়ে মরার অবস্থা । আমাদের দাবি, যখন 200 দিনের কাজ দিতে পারছে না রাজ্য সরকার, তখন বেকার শ্রমিকদের প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা করে রাজ্য সরকারের দেওয়া উচিত । কেন্দ্রীয় প্রকল্পের জন্য রাজ্যগুলিকে টাকা দেওয়া হলেও সেই টাকা কাজে লাগাতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ । মুখ্যমন্ত্রী কেবল বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সব গুলিয়ে দিচ্ছে । কেরালায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় প্রচুর কাজ হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচিগুলি এরাজ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে না । পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দিতে পারেনি এ রাজ্য । কেবলমাত্র আমার এলাকায় 16 হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে রয়েছেন । 100 দিনের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি তাঁদের। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে কোনও উপকার হয়নি রাজ্যের কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের ।"