কলকাতা, 4 অগাস্ট : ETV ভারতের বীরভূমের সাংবাদিক অভিষেক দত্ত রায়ের পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের বিরোধী নেতৃত্ব । বেআইনি কাজের খবর করেছিলেন ETV ভারতের এই সাংবাদিক । তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয় । আগাম জামিনের আবেদন করেন অভিষেক দত্ত রায় ৷ আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করে ৷ সেইসঙ্গে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকের স্বাধীনতার পক্ষে বেশ কিছু মন্তব্য করে ৷ আদালতের সেই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, CPI(M) নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, BJP নেতা শমীক ভট্টাচার্য, বীরভূমের কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদ, প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার প্রমুখ ।
সাংবাদিকের সঙ্গে যা ঘটেছে তার নিন্দা করেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান । ETV ভারতের সাংবাদিকের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "আদালতের রায় দেখে পুলিশ মন্ত্রী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর লজ্জা হওয়া উচিত । সৎ সাংবাদিককে বেআইনিভাবে হেনস্থা করা হয়েছে । মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করার চক্রান্ত করছে রাজ্য প্রশাসন ৷ রাজ্য সরকারি আইনজীবীরা রাজ্যের অর্থ ধ্বংস করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই লড়ছেন । তবে, মহামান্য আদালত খারিজ করে দিয়েছে তাঁদের অপব্যাখ্যা ।"
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, "রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের বিবেক নেই । নির্লজ্জতার চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার । অবিলম্বে এই সাংবাদিককে পুরস্কার দেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের । মিথ্যা মামলার দেওয়ার জন্য পুলিশ অফিসারদের শোকজ় করা উচিত । রাজ্য সরকার প্রশাসনকে দিয়ে বেআইনিভাবে কীভাবে বালি পাচার করছে, সেই সত্য ঘটনা সামনে তুলে আনেন সাংবাদিক । সত্য ঘটনা পরিবেশন করায় তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য চক্রান্ত করছে রাজ্য প্রশাসন !"
CPI(M) বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "দেশের সব রাজ্যেই প্রশাসনের মনের মতো কথা না বললে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয় । গৌরী লঙ্কেশ তার দৃষ্টান্ত । সাংবাদিকদের মার খেতে হয়েছে, এমনকী খুনও হতে হয়েছে । বালি খাদান থেকে বেআইনি বালি তোলার ঘটনা বীরভূম জেলাজুড়ে দিনের পর দিন চলছে । মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এর সঙ্গে যুক্ত । তাই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টির বিরোধিতা করেননি । বালির গাড়ির টাকা কালীঘাটেও যায় । "
তন্ময় ভট্টাচার্য আরও বলেন,"সাংবাদিকের মৌলিক অধিকার খবর করা । প্রশাসনের পক্ষে স্বস্তির খবরই সাংবাদিক করবেন এমন হয় না । তাই শাসক চায় তাঁর কণ্ঠ রোধ করতে ।"
অভিষেক দত্ত রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে BJP নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "আদালতের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্যকে স্বাগত । পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক যুগসন্ধিক্ষণে ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ । বীরভূম জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বহু মানুষ বালি পাচার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল । বালি পাচার, কয়লা পাচার, গোরু পাচার কাদের অঙ্গুলি হেলনে চলছে তা রাজ্যের মানুষ জানে । আদালতের এই পর্যবেক্ষণ সাহসী সাংবাদিকদের উজ্জীবিত করবে । বাংলার প্রত্যেকটি এলাকায় বার্তা পৌঁছবে ।"
বীরভূম জেলার কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদও ঘটনার নিন্দা করেন । বলেন, "আদালতের মন্তব্যে সরকার এবং প্রশাসনের লজ্জিত হওয়া উচিত । সরকার এবং প্রশাসন ভেবেছিল বীরভূম জেলার কয়লা এবং বালি পাচারের খবর কেউ করতে পারবে না । আদালত বুঝিয়ে দিল সৎ এবং নির্ভীক সাংবাদিকের পক্ষেই আইন রয়েছে ।"
প্রাক্তন CPI(M) সাংসদ তড়িৎ তোপদার রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, "গণতন্ত্র যে ধ্বংস হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে সাংবাদিকের উপর মিথ্যে মামলা আরোপ করায় । আদালতের মন্তব্য যথাযথ । রাজ্য সরকারকে আরও সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি । সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করলে সংবিধান লঙ্ঘিত হয় । "