কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : গ্রুপ-ডি নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় (SSC Recruitment Scam) এবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন । গতকাল, বুধবার সিবিআইয়ের (CBI) দেওয়া রিপোর্টকে হিমশৈলের চূড়ামাত্র বলে উল্লেখ করলেন এই বিচারপতি । পাশাপাশি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Justice Abhihjit Ganguly) সমর্থন জানালেন তিনি । এমনকী, পুরো নিয়োগ প্যানেল বাতিলের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু । ফলে গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় আরও অস্বস্তিতে পড়ল স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission) ৷
বৃহস্পতিবার শুনানিতে গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় সঞ্জীব মাইতি-সহ 50 জনকে নিয়ে সিবিআইকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ শুনানিতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র, গোটা হিমশৈল জলের নিচে আছে । গতকালের সিবিআইয়ের পেশ করা রিপোর্টের নির্যাস দেখে এমনই মনে হচ্ছে ।’’ এখানেই না থেমে তিনি এই পরিসংখ্যানকে ভয়ঙ্কর বলেও ব্যাখ্যা করেন ৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরা শিক্ষক, এরা সমাজ গড়ে, এরা অন্য কোনও পেশায় নেই । ভবিষ্যতে ছাত্ররা শিক্ষকদের দিকে আঙুল তুলবে, জিজ্ঞাসা করবে এমন শিক্ষকদের যোগ্যতা কী ?’’ এর পর বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর গলায় আক্ষেপ শোনা যায় ৷ তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আমি জানি না এর শেষ কোথায় ।’’
তার পরই তিনি কড়া নির্দেশ দেন ৷ বলেন, ‘‘আগে আবর্জনা পরিষ্কার করুন ।’’ একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘গোটা প্যানেল খারিজ করা উচিত । সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অবৈধ ভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে ভবিষ্যতে অংশগ্রহণ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা উচিত । দুর্নীতিবাজদের ফল ভুগতে হবে ।’’
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে গত কয়েকমাসে হইচই ফেলে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ একই সঙ্গে বিভিন্ন দিন শুনানিতে তাঁর কড়া নির্দেশ, কড়া মন্তব্য বিভিন্ন মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে ৷ এদিন বিচারপতির বসুও সেই প্রসঙ্গ তোলেন৷ বলেন, ‘‘বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন৷ আমিও তাতে সামিল হচ্ছি ।’’
শুনানি শেষে তিনি জানান, স্কুলে গ্রুপ ডি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার পরবর্তী শুনানি 18 নভেম্বর ৷ ওই দিনের মধ্যে তিনি সিবিআই-কে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গতকাল বুধবার হাইকোর্টে সিবিআইয়ের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয় ৷ সেখানে জানানো হয়েছে, স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি এবং গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পর্যায়ে চাকরিতে মেধাতালিকায় এমন 8 হাজার জনের নাম রয়েছে, যাঁরা একটি বা দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কিংবা সাদা খাতা জমা দিয়েছেন ৷
এই আট হাজারের মধ্যে কারা সুপারিশপত্র এবং নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি । সিবিআই রিপোর্টে বলা হয়েছে , নবম-দশমে 952 জন, একাদশ-দ্বাদশে 907 জন, গ্রুপ-সি 3481 জন এবং গ্রুপ-ডি পর্যায়ে 2823 জন ওএমআর জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন । সব মিলিয়ে সংখ্যাটা 8 হাজারের বেশি ৷
আরও পড়ুন : প্রাথমিকে আরও 22 জনকে চাকরির নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের