কলকাতা, 17 এপ্রিল: কোরোনা ত্রাস মুছে দিয়েছে ব্যবধান। রক্তের ঘাটতি মেটাতে এক প্লাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ৷ আজ রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যের রক্তের সংকট মেটাতে মিলিত হলেন একস্থানে। দেখা হতেই একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন তাঁরা। শুক্রবার বিরোধী বামেদের আয়োজিত রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই হাজির হলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রীও। মারণ ভাইরাস কোরোনার প্রকোপ মিলিয়ে দিল রাজ্যের যুযুধান দুই প্রতিপক্ষকে।
ব্যালকনিতেই ব্লাড ক্যাম্প ৷ এই নামেই আজ CPI(M)-এর টালিগঞ্জ টু এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে রক্তদান শিবিরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোরোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে গোটা রাজ্যে। এদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পূর্ব ঘোষিত বেশকিছু রক্তদান শিবির বাতিল করে দেয় প্রশাসন। একমাত্র পুলিশই ব্লাড ক্যাম্পের আয়োজন করতে পারবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিকে গ্রীষ্মের এই সময় রক্তের সমস্যায় পড়ছেন বহু মানুষ। প্রয়োজনে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। এই অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থার জন্য প্রশাসনকে বহুবার আবেদন নিবেদন করেও কাজ না হওয়ায় যাদবপুরের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে বামনেতা দাবি করেন, রক্তদান কর্মসূচি এভাবে বন্ধ করা ঠিক নয়। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে শাসক দল ও পুলিশের পাশাপাশি অন্য দল ও সংস্থাকেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রক্তদান শিবির করার অনুমতি দিক রাজ্য সরকার। যাদবপুরের বিধায়কের এই আবেদন মেনে নেয় রাজ্য সরকারও । আজ থেকে মোবাইল ভ্যানে রক্তদান শিবির করার অনুমতি দেয় রাজ্য প্রশাসন। এরপর একটি বড় গাড়িকে ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবির হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অত্যাধুনিক এই বাতানুকূল গাড়িতে একসঙ্গে তিন থেকে চারজনের রক্ত নেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। তবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে বর্তমানে একসঙ্গে দু'জন করে রক্ত দিতে পারছেন। একদিনে এভাবে সর্বোচ্চ ৩০ জন রক্ত দিতে পারবেন ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবিরে।
ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবিরের প্রথম দিনে নেতাজি নগর নারকেলবাগানে রক্তদান করলেন এলাকার ৩০ জন। শুক্রবার এই কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন যাদবপুরের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী যেমন, তেমনই রাজ্য সরকারের তরফে ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অরূপ বিশ্বাস এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের বেশ কয়েকজন আধিকারিক। এদিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামীকালও একইভাবে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে চলবে ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবির।
তবে, কঠিন সময়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজনে CP(I)M নেতা ও তৃণমূলের মন্ত্রীদের কাছাকাছি আসাকে সুনজরেই দেখছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। যদিও, অনেকের মতে, পরিস্থিতিই বাধ্য করেছে শাসক-বিরোধীকে কাছে আসতে।