কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর : এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Recruitment Scam) কাণ্ডে গত জুলাইয়ে গ্রেফতার হয়েছেন বাংলার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ৷ প্রায় দেড় মাস পর তাঁকে হেফাজতে নিল সিবিআই (CBI) ৷ এর আগে এই মামলার তদন্তে একবারই সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি ৷ সিবিআই সূত্রে খবর, সেবার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর অধরা থেকে গিয়েছে ৷ এবার পরবর্তী পাঁচদিনে সেই প্রশ্নগুলির উত্তরই পার্থর থেকে জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ৷
কোন কোন প্রশ্নের উত্তর তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) প্রাক্তন মহাসচিবের কাছ থেকে জানতে চায় সিবিআই ? এই নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা ৷ তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ব্যুরোর একটি সূত্রের খবর, পার্থকে জেরা করে আসলে এই দুর্নীতিতে জড়িত আরও বড় কোনও হেভিওয়েট সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা চলবে ৷
কী কী প্রশ্ন করা হতে পারে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে ? সিবিআইয়ের ওই সূত্র জানাচ্ছে, পার্থর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে যে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি কার নির্দেশে নিতেন ? কীভাবে টাকার লেনদেন হত ? কোন কোন খাতে এই টাকা খরচ হয়েছে ?
সিবিআই সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা মনে করছেন যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় একা এই ষড়যন্ত্রের মূল ব্যক্তি নন ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও কোনও একজন ব্যক্তির নির্দেশে চলতেন । সেই কারণেই এই দুর্নীতিতে জড়িত ওই হেভিওয়েটের নাম পার্থর কাছ থেকে জানতে চাইবেন গোয়েন্দারা ৷
তাছাড়া সিবিআইয়ের ওই সূত্র বলছে যে সরকারি বিজ্ঞপ্তি যখন বের হয়, সেই সময় কোনও মন্ত্রীর সই থাকে না সেখানে ৷ বরং সেই বিজ্ঞপ্তিতে সই থাকে কোনও আমলার ৷ তাই এই দুর্নীতিতে আমলারাও জড়িয়ে থাকতে পারেন ৷ সেই আমলাদের সম্পর্কেও তথ্য পার্থর কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবে সিবিআই ৷
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই এই মামলার তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে ৷ সেই অভিযোগ সিবিআই যেমন তুলেছে, একই অভিযোগ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও (Enforcement Directorate) ৷ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল ইডি (ED) ৷ তার পর 14 দিন ইডি হেফাজতেই ছিলেন তিনি ৷ সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ আদালতেও সেই তথ্য দিয়েছিল ইডি ৷
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে যে এবার কি সিবিআইকে সহযোগিতা করবেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ? সিবিআই সূত্রের দাবি, জেল হেফাজতে প্রায় একমাস ধরে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ৷ বারবার জামিনের আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর আইনজীবীও ৷ তিনি নিজেও এজলাসে দাঁড়িয়ে জামিনের কাতর আবেদন করেছেন ৷ শুক্রবারও আলিপুর আদালতে একই আবেদন করেন তিনি ৷
তার পরও তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি ৷ বরং বিচারক আগামী 21 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে সিবিআই হেফাজতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷ ফলে এই পরিস্থিতি তাঁর ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা ৷ আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পার্থর কাছ থেকে হেভিওয়েট অভিযুক্তের নাম জানা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সিবিআই ৷
তাছাড়া ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শান্তি প্রসাদ সিনহা ৷ যিনি এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা ছিলেন৷ গ্রেফতার হয়েছেন আধিকারিক অশোক সাহা । এই দুই ব্যক্তির সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অতপ্রোতভাবে যোগ ছিল বলে দাবি করছে সিবিআই । পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া দু’জন মিডলম্যান প্রসন্ন রায় এবং প্রদীপ সিংয়ের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অতপ্রতো যোগ ছিল ।
এছাড়াও গতকাল প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই । ফলে এবার কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মুখোমুখি বসিয়ে শিক্ষা দুর্নীতি কাণ্ডে জেরা করতে চায় সিবিআই । সেখানে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও মনে করছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা ৷
আরও পড়ুন : 21 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পার্থ