কলকাতা, 18জুন : কলকাতার কোভিড-19 পরিস্থিতি যদি দিল্লি- মুম্বইয়ের মতো না হয়ে যায়, তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। তবে, হাসপাতালগুলিতে বেডের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে এই পরিস্থিতি কতটা সামাল দেওয়া সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল। আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে এমনটাই জানানো হল বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে।
রাজ্যে কোভিড -19-এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ একই বিষয় নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে গত মার্চ মাসেও বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । এই বৈঠকের বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়ার বক্তব্য জানতে চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিদিন প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক হলেও এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিও কার্যত প্রতিনিয়ত বদল হচ্ছে । বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে কোরোনা সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে । জুন-জুলাই মাসে এই সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সর্বাধিক হওয়ার আশঙ্কা আগে প্রকাশ করলেও, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আগামী নভেম্বর মাস নাগাদ দেশে কোরোনা সংক্রমণের হার সর্বাধিক হতে পারে।
গত মার্চ মাসে কোরোনা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, এই বিষয়ে মন্তব্য করতে না চেয়ে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, কোভিড-19-র মোকাবিলা একা যেমন সরকারি হাসপাতালগুলির পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনই বেসরকারি হাসপাতালগুলির পক্ষেও একা কিছু করা সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি -উভয় ক্ষেত্রের সকলকে মিলে একসঙ্গে কোরোনা মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য সকলকে একটি টিম হিসাবে কাজ করতে হবে।
EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠক বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষদের কাজে উৎসাহ জোগাবে। গত মার্চ মাসের বৈঠকের পরে স্বাস্থ্য দপ্তরের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের আধিকারিকদের নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হয়। এবার টিমের লিডার হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কারণে কাজে আরও উৎসাহ বাড়বে।
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কোরোনা চিকিৎসায় কী কী সমস্যা হচ্ছে, সেই বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শও চাইতে পারেন তিনি। তবে এই বিষয়ে EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এই বৈঠকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সামনে কোনও হাসপাতালের প্রতিনিধি তাঁদের নিজস্ব সমস্যার কথা জানাবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বৈঠকের আগে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, কলকাতার COVID-19-এর পরিস্থিতি দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো হয়ে উঠুক, তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে না । তবে এক্ষেত্রে কিছুটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন।
EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধুমাত্র হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কোরোনা চিকিৎসার জন্য বেড নির্ধারিত করে রাখলে অন্য রোগীদের ভরতি নেওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে যে সব কোরোনা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা একান্তই প্রয়োজন, কেবল তাদেরকেই হাসপাতালে ভরতি করানো প্রয়োজন। বাকিদের ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানো যেতে পারে। হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পরে যে সব কোরোনা রোগীদের ছুটি দিয়ে বাড়িতে পরবর্তী চিকিৎসা করানো যেতে পারে, সেই সব রোগীকেও হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া উচিত। এর ফলে, ওই বেডগুলিতে অন্য কোরোনা রোগীদের ভরতি নেওয়া সম্ভব হবে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে কোরোনা ভাইরাস নিয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার আবহ তৈরি হয়েছে। বাড়িতে রেখে কোভিড-19 রোগীদের চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করা প্রয়োজন। এর জন্য মানুষকে যথার্থভাবে সচেতন করে তোলা উচিত । অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, কোভিড-19 মোকাবিলায় মানুষকে যথার্থ অর্থে সচেতন করে তোলা ছাড়া অন্য আর কোনও উপায় নেই।