কলকাতা, 14 ফেব্রুয়ারি : ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে প্রতিবছর 14 ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ৷ এমন একটা দিন, যে দিনটায় একজন মানুষ আরেকজনকে তাঁর মনের অনুভূতির কথা জানায় ৷ কার্ড, ফুল অথবা চকোলেট দিয়ে ভালোবাসার বার্তা দিয়ে মনের মানুষকে সেই অনুভূতির কথা জানানো হয়৷
কী এই ভ্যালেন্টাইন’স ডে?
কথিত আছে, রোমের একটি উৎসব লুপারকেলিয়া, যা ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয় ৷ যা আসলে তাদের দেশে বসন্তের আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে ধরা হয় ৷ সেখানে একটা রীতি রয়েছে, যে একটি বক্স থেকে কোনও ছেলে বা মেয়ে যে কেউ একটি নাম তুলবেন ৷ ছেলেটি যে মেয়েটির বা মেয়েটি যে ছেলেটির নাম তুলবেন, তাঁরা এই উৎসবের সময়ে একে অপরের প্রেমিক বা প্রেমিকা হিসেবে পরিচিত হবেন ৷ এমনকি তাঁরা বিয়েও করতে পারেন ৷ রোমের এই উৎসবকে পরবর্তী সময়ে চার্চেের তরফে খ্রিস্টানদের উৎসব হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৷ সেই সঙ্গে এর নাম দেওয়া হয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে ৷ সাধারণত, ভ্যালেন্টাইন’স একজনের প্রতি অপরজনের ভালোবাসা প্রকাশের শব্দ ৷
ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র উৎপত্তি কীভাবে ?
কথিত আছে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই ভ্য়ালেন্টাইন’স ডে উদযাপিত হয়, আসলে এটি ভালবাসার মৃত্যুদিন ৷ আবার অনেকে বলে গির্জার তরফে খ্রিস্টানদের বনভোজন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি করতে চেয়েছিল ৷ বলা হয় 14 ফেব্রুয়ারি দিনটিতে লুপারকেলিয়া উৎসব রোমের চাষাবাদের দেবতা ফাউনুসকে উৎসর্গ করে পালন করা হতো ৷ রোমান পুরোহিতদের আদেশ অনুসারে লুপারসি সদস্যরা একটি পবিত্র গুহায় জড়ো হত, ধারণা রয়েছে যেখানে রোমের প্রতিষ্ঠাতা শিশু রোমুলাস এবং রেমাসের য়ত্ন নিত নেকড়ে বা লুপা ৷ পুরোহিতেরা শুদ্ধিকরণের জন্য একটি ছাগল এবং একটি কুকুর বলি দিতেন। এরপর তারা ছাগলের রক্ত রোমান মহিলা এবং শস্যের উপর ছড়িয়ে দিত ৷ রোমান মহিলারা সেই রক্ত পবিত্র মনে করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিত ৷ তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে, এতে আগামী বছরে এটি তাঁদের আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে ৷ দিনের শেষে সব মহিলারা তাঁদের নাম লিখে একটি বড় কলসিতে ফেলে দিত ৷ এরপর শহরের অবিবাহিক পুরুষরা সেখান থেকে একটি নাম বেছে নিত এবং একবছরের জন্য ওই মহিলা তাঁর হয়ে যেত এবং সবশেষে তাঁরা বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হত ৷
ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র পিছনে থাকা বিজ্ঞান
পৃথিবীর সবধরনের সংস্কৃতির মধ্য়ে, ভালবাসা হল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার আমরা অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি ৷ ভালোবাসা অন্য সাধারণ অনুভূতির মতো, যা আমাদের দেহের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ৷ বেশিরভাগ জীব বিজ্ঞানী বিভিন্ন কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যার ফলে মানুষ ভালোবাসার অনুভূতি লাভ করেছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে যৌনতা, সঙ্গী বাছাই এবং আকর্ষণ ৷ এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি সঠিক পথে মানুষকে পরিচালন করে এবং নেতিবাচক ইমোশনগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে ৷
আণবিক কাঠামোগুলি নিচে দেওয়া হল:
ডোপামাইন: মস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত একটি কাঠামো হাইপোথ্যালামাস দ্বারা ডোপামিন নির্গত হয় ৷ যা স্নায়ুতন্ত্র এবং এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের মধ্যে একটি যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে ৷ ডোপামাইন একটি "ভাল লাগার" অনুভূতির রাসায়নিক ৷ এটি সম্পর্ক তৈরি করতে এবং যৌনতায় সাহায্য করে ৷ কোকেন ব্যবহার করলেও একই অনুভূতি হয় ৷ ডোপামাইন অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং জুয়া খেলা থেকে শুরু করে অ্যালকোহলে আসক্তি থেকে শুরু করে সবকিছুর সাথে যুক্ত ৷ ডোপামাইন বিভিন্ন রকমভাবে কাজ করে ৷ তবে, এটি বহুল পরিচিত একটি "প্রেমের রেণু"।
সেরোটোনিন: ডোপামিনের বৃদ্ধির সঙ্গে সেরোটোনিন হ্রাস যুক্ত ৷ সেরোটোনিন ক্ষুধা এবং মেজাজের সঙ্গে সম্পর্কিত ৷ প্রেমের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা লোকদের মধ্যে এর উপস্থিতি হ্রাস পায় ৷ বিশেষ করে যাদের অবসেসিভ কমপ্লেসিভ ডিসঅর্ডার রয়েছে ৷ এই ওসিডি-র যারা শিকার, তারা নিজের সঙ্গীর উপর টানেলে ফোকাস করার মতো করে নজর রাখে ৷
অক্সিটোসিন: অক্সিটোসিনও হাইপোথ্যালামাস দ্বারা নির্গত হয় এবং এটি পিটুইটারি গ্রন্থিতে সঞ্চিত থাকে ৷ এটি যৌনতার সময় এবং স্তন্যপানের মতো কাজের সময় রক্তে এর সঞ্চারন ঘটে ৷ অক্সিটোসিন সম্পর্কের আর্কষণ এবং বন্ধনের সঙ্গে যুক্ত। অক্সিটোসিনের রিসেপ্টরগুলি মস্তিষ্কের কোষে অবস্থিত এবং রোমান্টিক ও মাতৃত্ব, উভয়ই প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কিত ৷
ভ্যাসোপ্রেসিন : ভ্যাসোপ্রেসিন অক্সিটোসিনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। ভ্যাসোপ্রেসিনও হাইপোথ্যালামাস দ্বারা নির্গত হয় এবং পিটুইটারি গ্রন্থিতে জমা থাকে। পুরুষদের মধ্যে, ভ্যাসোপ্রেসিন অন্যান্য পুরুষদের প্রতি আগ্রাসন সহ সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে ৷ এটি সেই রাসায়নিক, যা অবিবাহিত পুরুষকে আনন্দ দেয় ৷ এটি পুরুষদের মহিলাদের প্রতি প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করে ৷
ইস্ট্রোজেন: ইস্ট্রোজেন প্রাথমিকভাবে মহিলাদের যৌন হরমোন ৷ সুতরাং, এটি স্পষ্টতই রোম্যান্সে জড়িত ৷ যারা প্রেম করছেন তাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেনের সংখ্যা বাড়েনা ৷ মহিলাদের যৌন জীবনকে সমৃদ্ধ করতে ইস্ট্রোজেনের ভূমিকা অনেক বেশি ৷ উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ নিম্ন মাত্রায় ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ হতাশা সৃষ্টি করে ৷ এবং উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ সেরোটোনিন বৃদ্ধিকে আটকাতে পারে এবং অন্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
টেস্টোস্টেরন: টেস্টোস্টেরন, পুরুষদের যৌন হরমোন এবং যা আকর্ষণ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি পুরুষদের মধ্যে ভালবাসা, আকাঙ্ক্ষা এবং পিতৃত্ব যত্নের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, যা অক্সিটোসিন বাড়াতে সাহায্য করে। স্ত্রীরা যখন সহবাসের সময় পুরুষের টেস্টোস্টেরনের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি তাদের অক্সিটোসিনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে ৷ পুরুষদের যৌন জীবনকে সমৃদ্ধ করতে টেস্টোস্টেরনের গুরুত্ব ভূমিকা নেয় ৷ তবে এটি তাদের সন্তান এবং সঙ্গীর গভীর যত্ন নিতে সাহায্য করে।
নোরপাইনফ্রাইন: নোরপাইনফ্রাইন, যা নোরড্রেনালাইন নামেও পরিচিত, অ্যাড্রিনালিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে ৷ এটি নিবিড়ভাবে মস্তিষ্কের কোষ নিউরনে উৎপাদিত হয় ৷ অ্যাড্রিনালিন বৃদ্ধির সময় আমাদের হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ে এবং আমাদের শরীরে ঘাম দেয়। এটি আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশকে প্রভাবিত করে ৷ নোরপাইনফ্রাইন মানুষের আনন্দ বাড়ায় এবং তার খিদে কমিয়ে দেয় ৷
সেই সব দেশ যেখানে ভারত গোলাপ রপ্তানি করে - যুক্তরাজ্য অন্যতম একটি বড় দেশ যেখানে ভারতের গোলাপ রপ্তানি করা হয় ৷ তারপর রয়েছে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড এবং জাপান ৷
সপ্তাহ জুড়ে চলা এই ভালবাসার দিনগুলির ইতিহাস এবং তার তাৎপর্য-
সপ্তাহ জুড়ে ভ্যালেন্টাইন’স ডে-র এই উৎসবে প্রচুর উত্তেজনা রয়েছে এবং এর প্রতিটি দিন ভালোবাসা প্রকাশের নিজস্ব একটি দিক নিয়ে আসে ৷ ভালোবাসার এই দিন শুরু হয় 7 ফেব্রুয়ারি থেকে ৷ সেই দিনগুলি হল- 7 ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবস, 8 ফেব্রুয়ারি প্রেমের প্রস্তাব দিবস, 9 ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে, 10 ফেব্রুয়ারি টেডি ডে, 11 ফেব্রুয়ারি প্রতিশ্রুতি দিবস, 12 ফেব্রুয়ারি আলিঙ্গন দিবস, 13 ফেব্রুয়ারি চুম্বন দিবস এবং 14 ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসার দিন ৷