নয়াদিল্লি, 18 ফেব্রুয়ারি: প্রেমিকা বা বান্ধবী নন, নিহত নিক্কি যাদব আদতে ছিলেন সাহিল গেহলতের প্রথম স্ত্রী (Nikki Yadav was the First Wife of Sahil Gehlot) ! নিক্কি যাদব হত্যাকাণ্ডের (Nikki Yadav Murder Case) তদন্তে নেমে এবার এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করল দিল্লি পুলিশ (Delhi Police) ৷ তাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, 2020 সালে পরস্পরকে বিয়ে করেছিলেন নিক্কি ও সাহিল ৷ বিয়ের সেই ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় !
গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশের কাছে সাহিল দাবি করেন, বাড়ির সদস্যরা তাঁর উপর বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন ৷ তাঁরা চেয়েছিলেন, তাঁদের পছন্দ করা পাত্রীকেই বিয়ে করুন সাহিল ৷ এ নিয়ে 'প্রেমিকা' নিক্কির সঙ্গে তাঁর অশান্তি শুরু হয় ৷ আর তার জেরেই তিনি নাকি রাগের বশে নিক্কিকে খুন করেন ! তবে এখন পুলিশের অনুমান, দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেই 'পথের কাঁটা', অর্থাৎ তাঁর প্রথম স্ত্রী নিক্কিকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেন সাহিল ৷
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, 2020 সালের অক্টোবর মাসে বিয়ে করেন নিক্কি ও সাহিল ৷ উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় আর্য সমাজের একটি মন্দির রয়েছে ৷ সেই মন্দিরেই বিয়ে করেন তাঁরা ৷ সাহিলের পরিবারের সদস্যরাও এই বিয়ের কথা জানতেন ! কিন্তু, তাঁরা এই সম্পর্কে খুশি ছিলেন না ৷ তাঁরা যেকোনও উপায়ে সাহিলকে বাড়ি ফেরাতে চাইছিলেন ৷ তাঁরা চাইছিলেন, নিক্কি যেন সারা জীবনের মতো সাহিলকে ছেড়ে চলে যান !
নিক্কি ও সাহিলের বিয়ের সত্যতা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্দিরের পুরোহিতও ৷ নিয়ম অনুসারে, আর্য মন্দিরে বিয়ে করতে হলে তা নথিভুক্ত করতে হয় ৷ সেই নথি ঘেঁটে ওই পুরোহিত জানিয়েছেন, নয়ডার এই মন্দিরেই বিয়ে করেছিলেন নিক্কি ও সাহিল ৷ বিয়ের সময় তাঁরা খুব খুশিও ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই পুরোহিত ৷
এদিকে, নিক্কি হত্যাকাণ্ডে আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন সাহিল ৷ প্রথমে পুলিশের মনে হয়েছিল, এই খুনের বিষয়ে সাহিলের পরিবারের সদস্যরা কিছু জানেন না ৷ কিন্তু, এখন পুলিশের অন্য কথা মনে হচ্ছে ৷ এই খুনে সাহিলের পরিবারের সদস্যদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে তারা ৷ যার জেরে শুক্রবারই সাহিলের বাবা বীরন্দ্র, দুই ভাই অনীশ ও নবীন এবং সাহিলের দুই বন্ধু লোকেশ ও অমরকে গ্রেফতার করা হয় ৷ পুলিশের অনুমান, নিক্কির খুনে ধৃতদেরও সম্পর্ক রয়েছে ৷
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, নিক্কির কথা জানা সত্ত্বেও সাহিলের পরিবার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে পাকা করে ৷ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিষয়টি পাকা হয় ৷ কিন্তু, নিক্কি এই বিষয়ে কিছু জানতেন না ৷ ইতিমধ্য়েই সাহিল ও নিক্কির বিয়ের শংসাপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ ৷ তারা জানতে পেরেছে, নিক্কির দেহ ধাবার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখতে সাহিলকে তাঁর এক তুতো ভাই এবং এক বন্ধু সাহায্য করেছেন ! যে ধাবায় নিক্কির দেহ লুকিয়ে রাখা হয়, সেটি সাহিলদের পারিবারিক সম্পত্তি ৷ সেখান থেকে সাহিলদের পৈতৃক বাড়ির দূরত্ব মাত্র 700 মিটার !
আরও পড়ুন: সাহিলের শীতলতায় তাজ্জব পুলিশও ! নজরে বিয়ের ভিডিয়ো
সংশ্লিষ্ট দু'টি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সাহিলের দ্বিতীয় বিয়ের তোড়তোড়ের কথা জেনে যান নিক্কি ৷ কিন্তু, তারপর তিনি কী করেন ? এ নিয়ে দু'রকম কথা শোনা যাচ্ছে ৷ একটি সূত্র বলছে, নিক্কি সাহিলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় বিয়ে করলেই তিনি সাহিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছ অভিযোগ দায়ের করবেন ৷ অন্য সূত্রটি বলছে, নিক্কি ঠিক করেছিলেন স্বামীর সঙ্গে গোয়া যাবেন ৷ সেখানেই বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করবেন তিনি ৷
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, নিক্কির দেহ লোপাটে যে দু'জন সাহিলকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে হওয়া সমস্ত হোয়াটসঅ্য়াপ চ্য়াট মুছে ফেলেন সাহিল ৷ তিনি ভেবেছিলেন, এভাবেই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে ! কিন্তু, তাঁর পরিকল্পনা ভেস্তে যায় ৷ কারণ, নিক্কিকে দেখতে না পেয়ে তাঁর প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয় এবং তাঁরাই পুলিশের দ্বারস্থ হন ৷ প্রসঙ্গত, নিক্কির পরিবার থাকে হরিয়ানার ঝাজ্জরে ৷
পুলিশের দাবি, জেরায় ইতিমধ্যেই খুনের কথা স্বীকার করেছেন সাহিল ৷ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বাপের বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৷ অন্যদিকে, নিক্কির কাকা প্রবীণ যাদব ফাস্ট ট্র্য়াক আদালতে এই মামলার শুনানি শুরুর দাবি করেছেন ৷ তিনি এবং নিক্কির বাবা সুনীল যাদব সাহিলের ফাঁসির দাবি তুলেছেন ৷