গাড়ি চাপা দিয়ে পালানোর ঘটনায় প্রায় বারো ঘণ্টা হেপাজতে রাখার পর, পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত দুই ভারতীয় আধিকারিককে ইসলামাবাদে মিশনের হাতে তুলে দিল । CISF কর্মী ডি ব্রহ্ম এবং পল সেলভাদাস – এঁদের কেউই কূটনীতিক নন এবং দু'জনেই ভারতীয় মিশনে ডেপুটেশনে রয়েছেন । হাইকমিশনে কর্মরত থাকার জন্য, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এঁদের দু'জনেরই ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি রয়েছে । সোমবার ছাড়া পাওয়ার পর তাঁদের মেডিকেল পরীক্ষা হয় , এবং জানা গেছে যে দু'জনেরই সামান্য আঘাত রয়েছে ।
আগে, সোমবার সকাল সাড়ে 8টা নাগাদ দুই CISF (সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স) কর্মী, একজন গাড়িচালক সহ ইসলামাবাদের মিশন থেকে বেরিয়ে যান । প্রায় দু'ঘণ্টা তাঁদের হদিস না পাওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় । পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁদের আটক করেছে বলে সন্দেহ করা হয় । পরে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম স্থানীয় পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে দাবি করে যে , ভারতীয় আধিকারিকরা একটি গাড়ি চাপা দিয়ে পালানোর ঘটনায় যুক্ত এবং ধরা পড়ার পর পালানোর চেষ্টা করায় উত্তেজিত জনতা তাঁদের মারধর করে । জোরে গাড়ি চালিয়ে এক পথচারীকে ধাক্কা মারা এবং সঙ্গে 10000 জাল পাকিস্তানি রুপি রাখার দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে FIR করা হয় । ভারতীয় সূত্রে এই অভিযোগকে সাজানো আখ্যা দেওয়া হয়েছে । ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি থাকায় ভারতীয়দের ছেড়ে দেওয়া হয় ।
ভারত এর আগে ইসলামাবাদে তার দুই আধিকারিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নয়াদিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রধানকে(CDA) তলব করে । সূত্রের খবর, দিল্লিতে ভারপ্রাপ্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ হায়দার শাহকে বিকেলেই বিদেশমন্ত্রকে ডেকে পাঠানো হয় , এবং PAI (পাকিস্তান-আফগান-ইরান) ডেস্কের দায়িত্বে থাকা যুগ্মসচিবের তরফ থেকে তাঁর হাতে এই গ্রেপ্তারি নিয়ে একটি প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) তুলে দেওয়া হয় । সূত্রের বক্তব্য, “ডিমার্শে পাকিস্তানের CDA-কে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় যে , ভারতীয় আধিকারিকদের কোনও জেরা বা হয়রানি যেন না হয় । সংশ্লিষ্ট ভারতীয় আধিকারিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুরোপুরি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের ।”
যদিও, ভারতীয় আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তারির কথা পাকিস্তানের তরফে সরকারিভাবে জানানো হয়নি । এক ভারতীয় আধিকারিক বলেন , “পাকিস্তানকে অবিলম্বে দুই আধিকারিক এবং ভারতীয় হাইকমিশনের গাড়িটি ফিরিয়ে দিতে বলা হয় ।” সোমবার প্রায় 12 ঘণ্টা বাদে , ইসলামাবাদের পুলিশ সেক্রেটারিয়েট থেকে পাকিস্তান বিদেশমন্ত্রকে একটি স্টেটাস রিপোর্ট (লেটার নম্বর ১৮০৮-৫এ) দাখিল করার পর, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় । ডিরেক্টর জেনেরাল প্রোটোকল আরসাল খানের সই করা ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , ভারতীয় হাইকমিশনার আধিকারিকরা ‘পথ দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত '। জানা গেছে যে , হাইকমিশনের যে গাড়িটি তাঁরা চালাচ্ছিলেন, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
কিছুদিন আগেই ভারতীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়ার চেষ্টা ও গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে নয়াদিল্লির পাকিস্তান মিশনের দুই আধিকারিক এবং এক গাড়িচালককে আটক করে বহিষ্কার করে ভারত । তার কয়েকদিনের মধ্যেই এই ঘটনা । ইসলামাবাদের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয় এবং পালটা পদক্ষেপের জল্পনাও চলছিল । দুটি দেশই একে অপরের গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার সহ কূটনৈতিক কর্মীদের হয়রানি , অনুসরণ বা ভয় দেখানোর অভিযোগ আনছে , আর দাবির সমর্থনে ভিডিয়ো পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে ।
(প্রতিবেদনটি লিখেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মা)