ETV Bharat / bharat

COVID-19 এর সময় অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমাধান

সরকারের উচিত মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মহামারির প্রভাব কমাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া । আরও একটা মহামারির দিকে নজর দেওয়ার, যার নাম অর্থনৈতিক অসাম্য, যা মানুষকে অনন্তকাল ধরেই জর্জরিত করে চলেছে ।

Economic inequality
Economic inequality
author img

By

Published : Aug 1, 2020, 4:26 PM IST

কোরোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে চলেছে । আজ পরিস্থিতি যতটা ভয়াবহই হোক না কেন, মুক্তি মিলবে শীঘ্রই । কলেরা, প্লেগ, মিজলস, পোলিও, এনসেফেলাইটিস, গুটিবসন্ত, সার্স ও ইবোলার মতো প্রাণঘাতী মহামারীও সময়ের সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেছে । এই সময়টায় সরকারের উচিত মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মহামারীর প্রভাব কমাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া । এটা নেতাদের কাছেও সময় আরও একটা মহামারীর দিকে নজর দেওয়ার। যার নাম অর্থনৈতিক অসাম্য, যা মানুষকে অনন্তকাল ধরে জর্জরিত করে চলেছে ।

COVID-19-এর মতোই, 1920 সালে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু । মানুষ ও মহামারীর সংঘাত নতুন কিছু নয়, কিন্তু সামাজিক বৈষম্য জনসংখ্যার নানা অংশকে বিপন্ন করে । 1880-র দশক থেকে ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের ধারণা চালু হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে সামাজিক-অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্ম দিয়েছিল, তাতে ওয়েলফেয়ার স্টেটের প্রয়োজন আরও জোরালোভাবে অনুভূত হয় । স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট । অবহেলা হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্পদের বণ্টনের । ব্যবস্থাপনার অভাব, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ভারতে সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলি ব্যর্থ হয় । একমাত্র যখন সরকারি প্রকল্পগুলি স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষাকে তুলে ধরবে, তখনই ভারত তার কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের তকমার প্রতি সুবিচার করতে পারবে ।

ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের 2095 জন কোটিপতির মধ্যে 102 জন ভারতীয় । দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যাটা কম মনে হতে পারে, কিন্তু অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যে ভারতের এক শতাংশ ধনী মানুষের হাতে 73 শতাংশ সম্পদ রয়েছে । ক্রমবর্দ্ধমান অর্থনৈতিক অসাম্যের ফলে ভারতের গরিব মানুষ ক্ষুধা আর অসুস্থতায় পীড়িত হচ্ছে । দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মানুষকে সক্ষম হতে শেখানোর বদলে সরকার তাঁদের দিচ্ছে অবাস্তব প্রকল্প । বিভিন্ন প্রকল্পকে ব্যবহার করে একাধিক রাজনৈতিক দল ভোটে তাদের জয় নিশ্চিত করছে । যেহেতু দলগুলি ভোটে জেতা ছাড়া মানুষের কল্যাণ নিয়ে চিন্তিত নয়, তাই দরিদ্ররা দরিদ্রতর হচ্ছে ।

ঔপনিবেশিক শাসনের আগে ভারত একটা স্বনির্ভর দেশ ছিল । ব্রিটিশ শাসন আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেছে । স্বাধীনতার পর আমাদের অগ্রণী নেতারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা নীতি তৈরি করেছেন । জনবিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে সরকার 1965 সালে সবুজ বিপ্লব শুরু করেছিল, যার জেরে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে । নয়ের দশকে ভারত বড় অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসে এবং বিশ্ববাজারের সামনে তার দরজা খুলে দেয় । তবুও আত্মনির্ভরতা একটা সূদূর স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেছে । বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের আমদানি GDP-র 23.64 শতাংশ এবং রপ্তানি 19.74 শতাংশ ।

ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, অশোধিত তেল এবং সেমি কন্ডাক্টরের জন্য আমরা এখনও অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল । বর্তমান প্যানডেমিক এবং তারপর লকডাউনের জেরে আমাদের ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা বিশ্বের সামনে আমাদের লজ্জায় ফেলেছে । ব্রুকিংসের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 7.30 কোটি ভারতীয় চূড়ান্ত দারিদ্রের মধ্যে থাকে । এমনকী মধ্যবিত্ত শ্রেণিও কষ্টের মধ্যে রয়েছে । সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, 2019-20 সালে বেকারত্বের হার বেড়ে 6.3 শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে । বর্তমান পরিস্থিতিতে সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্র একইরকমভাবে নড়বড় করছে । লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন । ‘আত্মনির্ভর ভারত’- কোনও বদল আনতে পারে কি না, সেটা দেখা এখনও বাকি । যতদিন কর্মসংস্থান, আয় ও ক্রয়ক্ষমতাকে আলাদা মানদণ্ড হিসেবে দেখা হবে, ততদিন আত্মনির্ভর হওয়া অসম্ভব । তাই সরকারের উচিত কর্মসংস্থান তৈরি ও সম্পদের বণ্টনের জন্য নীতিতে পরিবর্তন আনা । সংকটের দিকে নজর দিয়ে অর্থনৈতিক অসাম্য কমাতে, সরকারের কাছে COVID-19 মহামারীই হল উপযুক্ত সময়।

কোরোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে চলেছে । আজ পরিস্থিতি যতটা ভয়াবহই হোক না কেন, মুক্তি মিলবে শীঘ্রই । কলেরা, প্লেগ, মিজলস, পোলিও, এনসেফেলাইটিস, গুটিবসন্ত, সার্স ও ইবোলার মতো প্রাণঘাতী মহামারীও সময়ের সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেছে । এই সময়টায় সরকারের উচিত মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মহামারীর প্রভাব কমাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া । এটা নেতাদের কাছেও সময় আরও একটা মহামারীর দিকে নজর দেওয়ার। যার নাম অর্থনৈতিক অসাম্য, যা মানুষকে অনন্তকাল ধরে জর্জরিত করে চলেছে ।

COVID-19-এর মতোই, 1920 সালে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু । মানুষ ও মহামারীর সংঘাত নতুন কিছু নয়, কিন্তু সামাজিক বৈষম্য জনসংখ্যার নানা অংশকে বিপন্ন করে । 1880-র দশক থেকে ওয়েলফেয়ার স্টেট বা কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের ধারণা চালু হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে সামাজিক-অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্ম দিয়েছিল, তাতে ওয়েলফেয়ার স্টেটের প্রয়োজন আরও জোরালোভাবে অনুভূত হয় । স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট । অবহেলা হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্পদের বণ্টনের । ব্যবস্থাপনার অভাব, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ভারতে সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলি ব্যর্থ হয় । একমাত্র যখন সরকারি প্রকল্পগুলি স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষাকে তুলে ধরবে, তখনই ভারত তার কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের তকমার প্রতি সুবিচার করতে পারবে ।

ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের 2095 জন কোটিপতির মধ্যে 102 জন ভারতীয় । দেশের জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যাটা কম মনে হতে পারে, কিন্তু অক্সফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, যে ভারতের এক শতাংশ ধনী মানুষের হাতে 73 শতাংশ সম্পদ রয়েছে । ক্রমবর্দ্ধমান অর্থনৈতিক অসাম্যের ফলে ভারতের গরিব মানুষ ক্ষুধা আর অসুস্থতায় পীড়িত হচ্ছে । দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মানুষকে সক্ষম হতে শেখানোর বদলে সরকার তাঁদের দিচ্ছে অবাস্তব প্রকল্প । বিভিন্ন প্রকল্পকে ব্যবহার করে একাধিক রাজনৈতিক দল ভোটে তাদের জয় নিশ্চিত করছে । যেহেতু দলগুলি ভোটে জেতা ছাড়া মানুষের কল্যাণ নিয়ে চিন্তিত নয়, তাই দরিদ্ররা দরিদ্রতর হচ্ছে ।

ঔপনিবেশিক শাসনের আগে ভারত একটা স্বনির্ভর দেশ ছিল । ব্রিটিশ শাসন আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করেছে । স্বাধীনতার পর আমাদের অগ্রণী নেতারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা নীতি তৈরি করেছেন । জনবিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে সরকার 1965 সালে সবুজ বিপ্লব শুরু করেছিল, যার জেরে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে । নয়ের দশকে ভারত বড় অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসে এবং বিশ্ববাজারের সামনে তার দরজা খুলে দেয় । তবুও আত্মনির্ভরতা একটা সূদূর স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেছে । বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, আমাদের আমদানি GDP-র 23.64 শতাংশ এবং রপ্তানি 19.74 শতাংশ ।

ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, অশোধিত তেল এবং সেমি কন্ডাক্টরের জন্য আমরা এখনও অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল । বর্তমান প্যানডেমিক এবং তারপর লকডাউনের জেরে আমাদের ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা বিশ্বের সামনে আমাদের লজ্জায় ফেলেছে । ব্রুকিংসের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, 7.30 কোটি ভারতীয় চূড়ান্ত দারিদ্রের মধ্যে থাকে । এমনকী মধ্যবিত্ত শ্রেণিও কষ্টের মধ্যে রয়েছে । সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, 2019-20 সালে বেকারত্বের হার বেড়ে 6.3 শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে । বর্তমান পরিস্থিতিতে সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্র একইরকমভাবে নড়বড় করছে । লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন । ‘আত্মনির্ভর ভারত’- কোনও বদল আনতে পারে কি না, সেটা দেখা এখনও বাকি । যতদিন কর্মসংস্থান, আয় ও ক্রয়ক্ষমতাকে আলাদা মানদণ্ড হিসেবে দেখা হবে, ততদিন আত্মনির্ভর হওয়া অসম্ভব । তাই সরকারের উচিত কর্মসংস্থান তৈরি ও সম্পদের বণ্টনের জন্য নীতিতে পরিবর্তন আনা । সংকটের দিকে নজর দিয়ে অর্থনৈতিক অসাম্য কমাতে, সরকারের কাছে COVID-19 মহামারীই হল উপযুক্ত সময়।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.