ETV Bharat / bharat

আগামী বাজেট কি অর্থনীতিতে নতুন দিশা দেখাতে পারবে ?

1 ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সংসদে তাঁর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন । দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বণিক ও শিল্পমহলের পাশাপাশি আপামর জনগণ এই বাজেটের দিকে তাকিয়ে । আর্থিক অবস্থার হাল ফেরানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সরকারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই, যার সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি সম্ভব । এই পরিস্থিতিতে বাজেট তৈরির সময় অসংগঠিত খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি সর্বাগ্রে মাথায় রাখা উচিত ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Jan 20, 2020, 4:51 AM IST

1 ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সংসদে তাঁর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন । দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বণিক ও শিল্পমহলের পাশাপাশি আপামর জনগণ এই বাজেটের দিকে তাকিয়ে । বাজেটের রূপরেখা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে অর্থনীতিবিদ ও দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন । দেশের অর্থনীতিতে বছরখানেক ধরে মন্দা চলছে । এই প্রেক্ষিতে আগামী অর্থবর্ষের বাজেট যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না । চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের GDP-এর হার কমে 6.1 শতাংশে ঠেকেছে । 2011-12 আর্থিক বছরের পর এটা GDP-এর সর্বনিম্ন পতন । চলতি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে এই অর্থবর্ষে দেশের GDP-এর হার সামগ্রিকভাবে সর্বোচ্চ 7.5 শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যা চলতি দশকে সর্বনিম্ন ।

আর্থিক অবস্থার হাল ফেরানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সরকারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই, যার সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি সম্ভব । দেশে যখন GDP-এর বৃদ্ধি কমে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আদায়ও কমে । সরকারের কোষাগারে মজুত অর্থে তখন টান পড়ে । এই পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষমতা সংকুচিত হয় । চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল 2 লাখ কোটি টাকা । কিন্তু, দেশের বর্তমান আর্থিক মন্দার প্রেক্ষিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । CGA (কম্পট্রোলার জেনেরাল অফ অ্যাকাউন্টস)-এর রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম 7 মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল 2009-10 অর্থবর্ষের পর সর্বনিম্ন । তা ছাড়়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প কর বিধিতে (কর্পোরেট ট্যাক্স রিফর্ম) কিছু সংশোধন এনে কর ছাড় দিয়েছে । ফলে ওই খাতে রাজস্ব আদায় অনেকটাই কমেছে ।

রাজস্ব আদায়ের বাইরে অন্যান্যভাবে সরকার যে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে, তাতেও তেমন লাভ হয়নি । সরকারের কোষাগারের স্বাস্থ্য ফেরাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তার বাড়তি ভাঁড়ার (সারপ্লাস) থেকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা দিয়েছে । কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয় । অন্যদিকে, একাধিক সরকারি সংস্থা যেমন, BPCL, এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার বিক্রি করে সরকার বাজার থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল । কিন্তু, সরকারের সেই উদ্যোগও সেভাবে ফলদায়ক হয়নি । সুতরাং রাজস্ব খাতের বাইরে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা সেভাবে সাফল্য না পাওয়ায় সরকারের কোষাগারের ঘাটতি এখনই মিটছে না । সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য বলছে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে চলতি অর্থবর্ষে 1 লাখ 5 হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও বাস্তবে 11 নভেম্বর পর্যন্ত তার মাত্র 16.53 শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ।

দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামোয় ব্যয় বৃদ্ধি করে দেশের আর্থিক অবস্থার হাল ফিরবে না । কারণ, পরিকাঠামোর উন্নয়নের জেরে অর্থনীতিতে কোনও আশু লাভ হয় না । এক্ষেত্রে অর্থনীতিতে লাভের কড়ি ঘরে আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় । কিন্তু, দেশের এই মুহূর্তে যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে এমন কোনও উদ্যোগ নিতে হবে যাতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা আশু ফলদায়ী হয় । সেক্ষেত্রে যত বিলম্ব হবে, অর্থনীতিতে সমস্যা তত বাড়বে ।

তৃতীয়ত, আয়করে ছাড় দিয়ে ও বাজারে টাকার যোগান বাড়িয়ে অর্থনীতির উন্নতি একটা পথ রয়েছে বটে, কিন্তু সেটা কতটা লাভদায়ক হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান । কারণ, আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ আয়কর দেয় । তাই জনসংখ্যার এই সামান্য অংশকে কর ছাড়ের সুবিধা দিয়ে আদৌ অর্থনীতির কোনও লাভ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । যদিও এই কর ছাড়ের মাধ্যমে বেহাল অর্থনীতিতে অর্থের যোগান বাড়ানোর চেষ্টা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । চলতি অর্থবর্ষে অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের অন্তর্বতী বাজেটে এই কর ছাড়ের প্রস্তাব ছিল । বাৎসরিক উপার্জনের উপর পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব ছিল বাজেটে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেব কষে দেখা গেছে যে, এই কর ছাড়ের ফলে একজন আয়করদাতার মাসের শেষে মাত্র এক হাজার টাকা বাঁচবে । সুতরাং এই হিসেব থেকেই স্পষ্ট যে, এই কর ছাড়ের ফলে বাজারে টাকার যোগান সেভাবে বাড়বে না, আর তার ফলে অর্থনীতিরও খুব একটা লাভ হবে না । এছাড়া বাজারে টাকার যোগান বাড়াতে সরকারের তরফে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল । যেমন, সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছিল । চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দুটি সম্পত্তি একসঙ্গে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় 40 হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে 50 হাজার টাকা করা হয়েছিল । তা ছাড়া ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা টাকার উপর করছাড়ের সীমা 10 হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে 50 হাজার টাকা করা হয়েছে । কিন্তু, এই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও 2019 সালে অর্থনীতির হাল ফেরেনি ।

চতুর্থ, অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য সরকারের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে । কারণ, ব্যাঙ্ক থেকে সরকার ততটাই ঋণ নিতে পারে যতটা ব্যাঙ্কে আমানত থাকে । তাই দেশের মোট আমানতের থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ সরকার কখনও নিতে পারে না । ইতিমধ্যে, ব্যাঙ্ক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের, রাজ্য সরকারের ও বিভিন্ন পাবলিক সেক্টরের তরফে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দেশের মোট GDP-র প্রায় 9 শতাংশ । সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কে জমা রাখা আমানতের পরিমাণ মোট GDP-র 6.6 শতাংশ । তাই যেহেতু এই আমানত থেকে নেওয়া ঋণ অর্থনীতির হাল ফেরানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ থেকে অর্থ ঋণ নিয়েছে যা মোট GDP-র 2.4 শতাংশ । অন্যদিকে, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না বাড়ায় এবং রোজগারের পরিমাণ খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয়ের পরিমাণও সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না । তাই সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিদেশ থেকে ক্রমাগত অর্থ ঋণ নিতে থাকে, তবে বিদেশি ঋণদাতাদের উপর দেশের অর্থনীতি বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে আর তার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম ক্রমশ কমবে । আর যদি টাকার দাম পড়তে থাকে তবে দেশের অর্থনীতিতে সেটা একটা বড় ধাক্কা যখন অ্যামেরিকা ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ।

এই পরিস্থিতিতে বাজেট তৈরির সময় অসংগঠিত খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি সর্বাগ্রে মাথায় রাখা উচিত । সরকারের উচিত দেশের সেই সমস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি বা অর্থের যোগান বাড়ানো যে সমস্ত ক্ষেত্রে টাকা সরাসরি দেশের অসংগঠিত শ্রমজীবীদের হাতে পৌঁছায় । এক্ষেত্রে PM-KISAN বা MGNREGA প্রকল্পের উল্লেখ করা যেতে পারে । এই দুটি প্রকল্পে অর্থের যোগান বাড়ালে তা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য ফেরাতে সাহায্য করবে এবং সেই সমস্ত লোকের হাতে টাকা পৌঁছাবে, যাদের সামগ্রিক ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে আখেরে দেশের অর্থনীতিই লাভবান হবে ।

পূজা মেহরা, বিশিষ্ট সাংবাদিক

1 ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সংসদে তাঁর দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন । দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বণিক ও শিল্পমহলের পাশাপাশি আপামর জনগণ এই বাজেটের দিকে তাকিয়ে । বাজেটের রূপরেখা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে অর্থনীতিবিদ ও দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন । দেশের অর্থনীতিতে বছরখানেক ধরে মন্দা চলছে । এই প্রেক্ষিতে আগামী অর্থবর্ষের বাজেট যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না । চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের GDP-এর হার কমে 6.1 শতাংশে ঠেকেছে । 2011-12 আর্থিক বছরের পর এটা GDP-এর সর্বনিম্ন পতন । চলতি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে এই অর্থবর্ষে দেশের GDP-এর হার সামগ্রিকভাবে সর্বোচ্চ 7.5 শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যা চলতি দশকে সর্বনিম্ন ।

আর্থিক অবস্থার হাল ফেরানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সরকারের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নেই, যার সাহায্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি সম্ভব । দেশে যখন GDP-এর বৃদ্ধি কমে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আদায়ও কমে । সরকারের কোষাগারে মজুত অর্থে তখন টান পড়ে । এই পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষমতা সংকুচিত হয় । চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল 2 লাখ কোটি টাকা । কিন্তু, দেশের বর্তমান আর্থিক মন্দার প্রেক্ষিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । CGA (কম্পট্রোলার জেনেরাল অফ অ্যাকাউন্টস)-এর রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম 7 মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল 2009-10 অর্থবর্ষের পর সর্বনিম্ন । তা ছাড়়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প কর বিধিতে (কর্পোরেট ট্যাক্স রিফর্ম) কিছু সংশোধন এনে কর ছাড় দিয়েছে । ফলে ওই খাতে রাজস্ব আদায় অনেকটাই কমেছে ।

রাজস্ব আদায়ের বাইরে অন্যান্যভাবে সরকার যে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছে, তাতেও তেমন লাভ হয়নি । সরকারের কোষাগারের স্বাস্থ্য ফেরাতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তার বাড়তি ভাঁড়ার (সারপ্লাস) থেকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা দিয়েছে । কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয় । অন্যদিকে, একাধিক সরকারি সংস্থা যেমন, BPCL, এয়ার ইন্ডিয়ার শেয়ার বিক্রি করে সরকার বাজার থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল । কিন্তু, সরকারের সেই উদ্যোগও সেভাবে ফলদায়ক হয়নি । সুতরাং রাজস্ব খাতের বাইরে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা সেভাবে সাফল্য না পাওয়ায় সরকারের কোষাগারের ঘাটতি এখনই মিটছে না । সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য বলছে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে চলতি অর্থবর্ষে 1 লাখ 5 হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও বাস্তবে 11 নভেম্বর পর্যন্ত তার মাত্র 16.53 শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ।

দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামোয় ব্যয় বৃদ্ধি করে দেশের আর্থিক অবস্থার হাল ফিরবে না । কারণ, পরিকাঠামোর উন্নয়নের জেরে অর্থনীতিতে কোনও আশু লাভ হয় না । এক্ষেত্রে অর্থনীতিতে লাভের কড়ি ঘরে আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় । কিন্তু, দেশের এই মুহূর্তে যে আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে এমন কোনও উদ্যোগ নিতে হবে যাতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা আশু ফলদায়ী হয় । সেক্ষেত্রে যত বিলম্ব হবে, অর্থনীতিতে সমস্যা তত বাড়বে ।

তৃতীয়ত, আয়করে ছাড় দিয়ে ও বাজারে টাকার যোগান বাড়িয়ে অর্থনীতির উন্নতি একটা পথ রয়েছে বটে, কিন্তু সেটা কতটা লাভদায়ক হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান । কারণ, আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ আয়কর দেয় । তাই জনসংখ্যার এই সামান্য অংশকে কর ছাড়ের সুবিধা দিয়ে আদৌ অর্থনীতির কোনও লাভ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । যদিও এই কর ছাড়ের মাধ্যমে বেহাল অর্থনীতিতে অর্থের যোগান বাড়ানোর চেষ্টা ইতিমধ্যে করা হয়েছে । চলতি অর্থবর্ষে অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের অন্তর্বতী বাজেটে এই কর ছাড়ের প্রস্তাব ছিল । বাৎসরিক উপার্জনের উপর পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব ছিল বাজেটে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেব কষে দেখা গেছে যে, এই কর ছাড়ের ফলে একজন আয়করদাতার মাসের শেষে মাত্র এক হাজার টাকা বাঁচবে । সুতরাং এই হিসেব থেকেই স্পষ্ট যে, এই কর ছাড়ের ফলে বাজারে টাকার যোগান সেভাবে বাড়বে না, আর তার ফলে অর্থনীতিরও খুব একটা লাভ হবে না । এছাড়া বাজারে টাকার যোগান বাড়াতে সরকারের তরফে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল । যেমন, সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছিল । চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দুটি সম্পত্তি একসঙ্গে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় 40 হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে 50 হাজার টাকা করা হয়েছিল । তা ছাড়া ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা টাকার উপর করছাড়ের সীমা 10 হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে 50 হাজার টাকা করা হয়েছে । কিন্তু, এই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও 2019 সালে অর্থনীতির হাল ফেরেনি ।

চতুর্থ, অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য সরকারের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে । কারণ, ব্যাঙ্ক থেকে সরকার ততটাই ঋণ নিতে পারে যতটা ব্যাঙ্কে আমানত থাকে । তাই দেশের মোট আমানতের থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ সরকার কখনও নিতে পারে না । ইতিমধ্যে, ব্যাঙ্ক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের, রাজ্য সরকারের ও বিভিন্ন পাবলিক সেক্টরের তরফে নেওয়া ঋণের পরিমাণ দেশের মোট GDP-র প্রায় 9 শতাংশ । সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কে জমা রাখা আমানতের পরিমাণ মোট GDP-র 6.6 শতাংশ । তাই যেহেতু এই আমানত থেকে নেওয়া ঋণ অর্থনীতির হাল ফেরানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ থেকে অর্থ ঋণ নিয়েছে যা মোট GDP-র 2.4 শতাংশ । অন্যদিকে, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না বাড়ায় এবং রোজগারের পরিমাণ খুব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয়ের পরিমাণও সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না । তাই সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যদি বিদেশ থেকে ক্রমাগত অর্থ ঋণ নিতে থাকে, তবে বিদেশি ঋণদাতাদের উপর দেশের অর্থনীতি বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে আর তার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম ক্রমশ কমবে । আর যদি টাকার দাম পড়তে থাকে তবে দেশের অর্থনীতিতে সেটা একটা বড় ধাক্কা যখন অ্যামেরিকা ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে ।

এই পরিস্থিতিতে বাজেট তৈরির সময় অসংগঠিত খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি সর্বাগ্রে মাথায় রাখা উচিত । সরকারের উচিত দেশের সেই সমস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি বা অর্থের যোগান বাড়ানো যে সমস্ত ক্ষেত্রে টাকা সরাসরি দেশের অসংগঠিত শ্রমজীবীদের হাতে পৌঁছায় । এক্ষেত্রে PM-KISAN বা MGNREGA প্রকল্পের উল্লেখ করা যেতে পারে । এই দুটি প্রকল্পে অর্থের যোগান বাড়ালে তা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য ফেরাতে সাহায্য করবে এবং সেই সমস্ত লোকের হাতে টাকা পৌঁছাবে, যাদের সামগ্রিক ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে আখেরে দেশের অর্থনীতিই লাভবান হবে ।

পূজা মেহরা, বিশিষ্ট সাংবাদিক

Chirang (Assam), Jan 20 (ANI): A rare species of leopard's cub was found in Assam's Chirang. Reportedly, a local found the cub in the heap of trash. The cub was handed over to the forest department by the police. The forest department has rescued two leopards of rare species from the area.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.