ETV Bharat / bharat

মোদিজি, আমাদের কাজ করতে দিন !

ভারতকে কাজে ফিরতে হবে । যদি অর্থনীতি এখন চালু না হয়, তাহলে আমরা আরও ভয়াবহ একটা বাস্তবের সাক্ষী থাকতে পারি – অভ্যন্তরীণ অশান্তি ও আরও হিংসা ।

Modiji, let us work
মোদিজি, আমাদের কাজ করতে দিন !
author img

By

Published : May 8, 2020, 5:39 PM IST

ভারতীয়রা, আপনারা কোরোনা ভাইরাসের থেকে দেশকে দূরে সরাতে আপনাদের যথাসাধ্য করেছেন । ভারতে মৃত্যুহার 3.27 শতাংশে দাঁড়িয়ে আছে । অভিনন্দন! এখন প্রয়োজন ভেন্টিলেটর সরিয়ে ভারত এবং তার বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনীতি যাতে নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারে, তার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা । ভারতকে কাজে ফিরতে হবে । রেড, গ্রিন বা অরেঞ্জ জোন হোক, কোনও তফাৎ নেই । ভাইরাস থাকবে, আমাদের তা সঙ্গে নিয়েই কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে ।

আশ্চর্যজনকভাবে, চিকিৎসা পরিষেবার দিক থেকে আমরা ভালো পারফর্ম করেছি, কারণ ভারতে 42533টি কেসের মধ্যে (4মে 2020) সেরে ওঠার হার 27.5 শতাংশ । মাত্র 1391 জন মারা গেছেন । এর মধ্যে, ভারতীয় অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত । ভাইরাসের থেকেও কারফিউ আমাদের বেশি ক্ষতি করেছে । রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, 400 মিলিয়ন ভারতীয় কর্মী দারিদ্রে ডুবতে বসেছেন । আর নোবেলজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জি ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, যে কোরোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের GDP সরাসরি ‘10-15%’ কমতে পারে । দুশ্চিন্তার ছবি? আরও খারাপ লাগে, যখন আমরা সেই হাজার হাজার মানুষগুলোর কথা মনে করি, যারা ক্ষুধা আর দারিদ্রের পথে এগিয়ে চলেছে, যেভাবে তারা বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে পেতে চাইছে । (আগ্রার রাস্তায় পথের কুকুরদের পাশে বসে দুধ চেঁচে তোলার চেষ্টা করা সেই লোকটির ছবি আমাদের নাড়িয়ে দেয় ।) লক্ষ লক্ষ মানুষ আগ্রার মতো হটস্পট এবং কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে রয়েছেন, এবং তাঁরা ‘অস্পৃশ্য’-দের একটা নতুন প্রজন্মে পরিণত হয়েছেন । জৈব-রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের শরীরের দখল নিতে চাইছে রাষ্ট্র ।

কিন্তু এটাই সময় যখন ফোঁড়াকে চিরে দিয়ে পুঁজরক্তকে বের করে দিতে হবে । যদি অর্থনীতি এখন চালু না হয়, তাহলে আমরা আরও ভয়াবহ একটা বাস্তবের সাক্ষী থাকতে পারি – অভ্যন্তরীণ অশান্তি ও আরও হিংসা ।

ভাইরোলজি 101

ভাইরাসরা প্রকৃতির এক বন্য অস্তিত্ব । ওষুধ বা ভ্যাক্সিনে তাদের পোষ মানানো যায় না, কারণ তারা জীবিতও নয়, মৃতও নয় । তার পছন্দসই ‘হোস্ট’ খুঁজে পেলে সজীব হয়ে ওঠে, বাকিটা সময় তারা পাথরের মতো মৃতবৎ থাকে । বিবর্তনে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না – মানুষ, এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে । ক্ষতিকারক ভাইরাসরা আমাদের আক্রমণ করেছে, আর উপকারীরা আমাদের প্রত্যেককে সাহায্য করেছে সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে বাঁচতে । কালক্রমে ক্ষতিকর ভাইরাসদের রুখতে আমরা নিজেদের মধ্যে অনাক্রম্যতা ও জিনগত প্রতিরোধ ক্ষমতা এনেছি ।

সংবাদমাধ্যম ভ্যাক্সিনের খবরে ছেয়ে গেছে, কিন্তু ভ্যাক্সিন খুব বেশি হলে একটা টোটকা । ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে আমরা যেমনটা দেখেছি, যে প্রতি বছরই প্যাথোজেনের প্রকৃতি বদলে যাওয়ার ফলে নতুন ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয় । কিন্তু সেটা কেকের ওপরে আইসিং-এর মতোই । মানুষ অর্ধ শতাব্দী চেষ্টা করেও HIV-র ভ্যাক্সিন খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে । চিকিৎসক, গবেষক ও মহামারী বিশেষজ্ঞরা এরমধ্যেই কোরোনা ভাইরাস ভ্যাক্সিনের কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । ভারত বোকার মতো এই ভ্যাক্সিনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে পারে না, যা ভারতে কোরোনার স্ট্রেনের ওপর কাজ করতে, অথবা নাও করতে পারে।

বিবর্তনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, একটা জোরালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই হল যে কোনও ভাইরাসের মোকাবিলা করার দীর্ঘমেয়াদি উপায় – তা সে কোরোনা হোক বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ।

কোনও ভ্যাক্সিন না থাকা সত্ত্বেও আমরা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং কম মৃত্যুর হারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এখন আসুন, কোভিড-19-এর সঙ্গে সত্যি সত্যিই ভয়াবহ TB-র তুলনা করা যাক । বছরে TB-তে 1.5 মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যান । আমরা কী তার জন্য আমাদের অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দিই? না । আমরা কাজ করতে থাকি, এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে আমাদের অর্থনীতিতে যোগদানের সুযোগ করে দিই, কোনও টেস্টিং ছাড়াই । কোরোনার ক্ষেত্রেই বা কেন ব্যতিক্রম হবে? কোরোনার সঙ্গে তুলনা করলে TB সবদিক থেকেই আরও বিপজ্জনক এক রাক্ষস ।

কম্পিউটার মডেলিং ভিত্তিক ধারণা এবং বিদেশের বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করার সময় এসেছে । ভারতকে আরও বাস্তববাদী হতে হবে । আমরা ভ্যাক্সিন ছাড়াই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি । আমাদের আর আমাদের অর্থনীতিকে থামিয়ে রাখা উচিত নয় । ফের শুরু করতে হবে, কারণ আমাদের সামনে অর্থনীতিকে বাঁচাবার বিকল্পগুলো ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে । আগে বা পরে. উৎসাহগুলো ফুরিয়ে যাবে আর আমাদের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা চলতেই থাকবে । লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোরোনা নয়, অপুষ্টি আর অস্বাস্থ্যের কবলে মরার জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে । ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মৃত্যুঘণ্টা এর মধ্যেই বাজতে শুরু করে দিয়েছে । আমরা আর লকডাউন চালাতে পারি না ।

ফেরার পথ

কোরোনা একটা নতুন বাস্তবতা, আর আমাদের একে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে এবং কাজ করতে হবে । একে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই । কোরোনা খুবই ছোঁয়াচে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এর মৃত্যুহার খুবই কম । এটা একটা রুপোলি রেখা । ঝুঁকিকে খাটো দেখানোর জন্য বলছি না, কিন্তু দিল্লিতে পথ দুর্ঘটনায় মরার সম্ভাবনা কোরোনার থেকে বেশি ।

কৃষিক্ষেত্রকে আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে । এর অর্থ, ভারতীয় শ্রমিকদের এবং অর্থনীতির 70 শতাংশ ফের কাজ শুরু করেছে। আমাদের সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও অবিলম্বে চালু করতে হবে । ভারতকে সচল করার এটাই সহজতম পথ । সমস্ত রাজ্যে কাজ সংক্রান্ত সমস্ত যাতায়াত ফের চালু করা দরকার । আমরা বিনোদনমূলক কাজকর্ম কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতেই পারি । কিন্তু মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতেই হবে । মন্দা এখনও শেষ হয়নি, আর আমাদের উচিত সঙ্কটের সময় গোটা পৃথিবীকে সরবরাহ করার জন্য তৈরি থাকা । এটাই হবে মেক ইন ইন্ডিয়ার আসল প্রদর্শন ।

ব্যক্তিবিশেষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ঠিকই, কিন্তু সরকারের উচিত আয়ুষ মন্ত্রকের মাধ্যমে একটা প্রোটোকল চালু করা যা মানুষ অনুসরণ করবেন । যেমন, অতিরিক্ত ভিটামিন বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট যা কোনও ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারেন, বা সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও দিতে পারে ।

নিশ্চিতভাবেই সবথেকে ঝুঁকির মধ্যে থাকা গোষ্ঠী, অর্থাৎ 65 বছরের ওপরের মানুষদের রক্ষার দায়বদ্ধতা সরকারের আছে । কিন্তু পাশাপাশি সেই গোষ্ঠীর স্বাধীনতাকেও সবল করার দায়বদ্ধতা আছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে না । আমাদের প্রত্যেককে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে, যে আমরা কাজ করব, নাকি নিজেদের ঘরে বন্দি রেখে সন্তান, মা, স্ত্রীকে উপোস করতে দেখবো? আমি স্বাধীনতা এবং কাজের অধিকারকেই বেছে নেব নিজের জন্য, এবং সেই লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর জন্য, যাঁরা শুধু সম্মানের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে চান । তাঁরা সরকার বা ধনীদের কোনও দয়া বা খয়রাতি চান না, তাঁরা নিজের ঘাম ঝরিয়ে খাবার জোগাড়ের একটা সুযোগ চান । যদি মৃত্যুও আসে, তা হবে সম্মানের।

মৃত্যু সমস্ত জীবনের স্বাভাবিক পরিসমাপ্তি, তাই তার মুখোমুখি হতে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের ভয় করা উচিত আমাদের প্রিয়জনদের যন্ত্রণা এবং তাদের প্রতি আমাদের ‘ধর্ম’ বা কর্তব্য পালনে আমাদের অক্ষমতাকে। খাবার ও জলের মতোই টাকাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা জিনিস । আমাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়াই উচিত । যমরাজ বা গ্রিম রিপার ইচ্ছে মতো যাকে খুশি পছন্দ করুক, কিন্তু ততদিন আমরা আমাদের পরিবার, আমাদের প্রিয়জন ও দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্যপালন করেই যাবো। স্থানীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে তুলে ধরতে কাজ করা আমাদের কর্তব্য । যদি এখন উদ্যমী হতে পারি, তাহলে আমরা সেই অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হব, যা আমরা চাই । ভয়ের দিন পেরিয়ে গেছে, এখন সময় কর্তব্যের – সুখ, প্রাচুর্য আর মর্যাদার জীবনকে পুনর্নির্মাণের ।

লেখক : ইন্দ্রশেখর সিংহ (অধিকর্তা, পলিসি অ্যান্ড আউটরিচ, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া)

ভারতীয়রা, আপনারা কোরোনা ভাইরাসের থেকে দেশকে দূরে সরাতে আপনাদের যথাসাধ্য করেছেন । ভারতে মৃত্যুহার 3.27 শতাংশে দাঁড়িয়ে আছে । অভিনন্দন! এখন প্রয়োজন ভেন্টিলেটর সরিয়ে ভারত এবং তার বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনীতি যাতে নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারে, তার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা । ভারতকে কাজে ফিরতে হবে । রেড, গ্রিন বা অরেঞ্জ জোন হোক, কোনও তফাৎ নেই । ভাইরাস থাকবে, আমাদের তা সঙ্গে নিয়েই কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে ।

আশ্চর্যজনকভাবে, চিকিৎসা পরিষেবার দিক থেকে আমরা ভালো পারফর্ম করেছি, কারণ ভারতে 42533টি কেসের মধ্যে (4মে 2020) সেরে ওঠার হার 27.5 শতাংশ । মাত্র 1391 জন মারা গেছেন । এর মধ্যে, ভারতীয় অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত । ভাইরাসের থেকেও কারফিউ আমাদের বেশি ক্ষতি করেছে । রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, 400 মিলিয়ন ভারতীয় কর্মী দারিদ্রে ডুবতে বসেছেন । আর নোবেলজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জি ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, যে কোরোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের GDP সরাসরি ‘10-15%’ কমতে পারে । দুশ্চিন্তার ছবি? আরও খারাপ লাগে, যখন আমরা সেই হাজার হাজার মানুষগুলোর কথা মনে করি, যারা ক্ষুধা আর দারিদ্রের পথে এগিয়ে চলেছে, যেভাবে তারা বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে পেতে চাইছে । (আগ্রার রাস্তায় পথের কুকুরদের পাশে বসে দুধ চেঁচে তোলার চেষ্টা করা সেই লোকটির ছবি আমাদের নাড়িয়ে দেয় ।) লক্ষ লক্ষ মানুষ আগ্রার মতো হটস্পট এবং কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে রয়েছেন, এবং তাঁরা ‘অস্পৃশ্য’-দের একটা নতুন প্রজন্মে পরিণত হয়েছেন । জৈব-রাজনীতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের শরীরের দখল নিতে চাইছে রাষ্ট্র ।

কিন্তু এটাই সময় যখন ফোঁড়াকে চিরে দিয়ে পুঁজরক্তকে বের করে দিতে হবে । যদি অর্থনীতি এখন চালু না হয়, তাহলে আমরা আরও ভয়াবহ একটা বাস্তবের সাক্ষী থাকতে পারি – অভ্যন্তরীণ অশান্তি ও আরও হিংসা ।

ভাইরোলজি 101

ভাইরাসরা প্রকৃতির এক বন্য অস্তিত্ব । ওষুধ বা ভ্যাক্সিনে তাদের পোষ মানানো যায় না, কারণ তারা জীবিতও নয়, মৃতও নয় । তার পছন্দসই ‘হোস্ট’ খুঁজে পেলে সজীব হয়ে ওঠে, বাকিটা সময় তারা পাথরের মতো মৃতবৎ থাকে । বিবর্তনে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না – মানুষ, এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে । ক্ষতিকারক ভাইরাসরা আমাদের আক্রমণ করেছে, আর উপকারীরা আমাদের প্রত্যেককে সাহায্য করেছে সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে বাঁচতে । কালক্রমে ক্ষতিকর ভাইরাসদের রুখতে আমরা নিজেদের মধ্যে অনাক্রম্যতা ও জিনগত প্রতিরোধ ক্ষমতা এনেছি ।

সংবাদমাধ্যম ভ্যাক্সিনের খবরে ছেয়ে গেছে, কিন্তু ভ্যাক্সিন খুব বেশি হলে একটা টোটকা । ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে আমরা যেমনটা দেখেছি, যে প্রতি বছরই প্যাথোজেনের প্রকৃতি বদলে যাওয়ার ফলে নতুন ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয় । কিন্তু সেটা কেকের ওপরে আইসিং-এর মতোই । মানুষ অর্ধ শতাব্দী চেষ্টা করেও HIV-র ভ্যাক্সিন খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে । চিকিৎসক, গবেষক ও মহামারী বিশেষজ্ঞরা এরমধ্যেই কোরোনা ভাইরাস ভ্যাক্সিনের কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । ভারত বোকার মতো এই ভ্যাক্সিনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতে পারে না, যা ভারতে কোরোনার স্ট্রেনের ওপর কাজ করতে, অথবা নাও করতে পারে।

বিবর্তনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, একটা জোরালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই হল যে কোনও ভাইরাসের মোকাবিলা করার দীর্ঘমেয়াদি উপায় – তা সে কোরোনা হোক বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ।

কোনও ভ্যাক্সিন না থাকা সত্ত্বেও আমরা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং কম মৃত্যুর হারও লক্ষ্য করা যাচ্ছে । এখন আসুন, কোভিড-19-এর সঙ্গে সত্যি সত্যিই ভয়াবহ TB-র তুলনা করা যাক । বছরে TB-তে 1.5 মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যান । আমরা কী তার জন্য আমাদের অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দিই? না । আমরা কাজ করতে থাকি, এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে আমাদের অর্থনীতিতে যোগদানের সুযোগ করে দিই, কোনও টেস্টিং ছাড়াই । কোরোনার ক্ষেত্রেই বা কেন ব্যতিক্রম হবে? কোরোনার সঙ্গে তুলনা করলে TB সবদিক থেকেই আরও বিপজ্জনক এক রাক্ষস ।

কম্পিউটার মডেলিং ভিত্তিক ধারণা এবং বিদেশের বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করার সময় এসেছে । ভারতকে আরও বাস্তববাদী হতে হবে । আমরা ভ্যাক্সিন ছাড়াই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি । আমাদের আর আমাদের অর্থনীতিকে থামিয়ে রাখা উচিত নয় । ফের শুরু করতে হবে, কারণ আমাদের সামনে অর্থনীতিকে বাঁচাবার বিকল্পগুলো ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে । আগে বা পরে. উৎসাহগুলো ফুরিয়ে যাবে আর আমাদের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা চলতেই থাকবে । লক্ষ লক্ষ মানুষকে কোরোনা নয়, অপুষ্টি আর অস্বাস্থ্যের কবলে মরার জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে । ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মৃত্যুঘণ্টা এর মধ্যেই বাজতে শুরু করে দিয়েছে । আমরা আর লকডাউন চালাতে পারি না ।

ফেরার পথ

কোরোনা একটা নতুন বাস্তবতা, আর আমাদের একে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে এবং কাজ করতে হবে । একে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই । কোরোনা খুবই ছোঁয়াচে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু এর মৃত্যুহার খুবই কম । এটা একটা রুপোলি রেখা । ঝুঁকিকে খাটো দেখানোর জন্য বলছি না, কিন্তু দিল্লিতে পথ দুর্ঘটনায় মরার সম্ভাবনা কোরোনার থেকে বেশি ।

কৃষিক্ষেত্রকে আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে । এর অর্থ, ভারতীয় শ্রমিকদের এবং অর্থনীতির 70 শতাংশ ফের কাজ শুরু করেছে। আমাদের সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও অবিলম্বে চালু করতে হবে । ভারতকে সচল করার এটাই সহজতম পথ । সমস্ত রাজ্যে কাজ সংক্রান্ত সমস্ত যাতায়াত ফের চালু করা দরকার । আমরা বিনোদনমূলক কাজকর্ম কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতেই পারি । কিন্তু মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতেই হবে । মন্দা এখনও শেষ হয়নি, আর আমাদের উচিত সঙ্কটের সময় গোটা পৃথিবীকে সরবরাহ করার জন্য তৈরি থাকা । এটাই হবে মেক ইন ইন্ডিয়ার আসল প্রদর্শন ।

ব্যক্তিবিশেষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ঠিকই, কিন্তু সরকারের উচিত আয়ুষ মন্ত্রকের মাধ্যমে একটা প্রোটোকল চালু করা যা মানুষ অনুসরণ করবেন । যেমন, অতিরিক্ত ভিটামিন বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট যা কোনও ব্যক্তি গ্রহণ করতে পারেন, বা সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও দিতে পারে ।

নিশ্চিতভাবেই সবথেকে ঝুঁকির মধ্যে থাকা গোষ্ঠী, অর্থাৎ 65 বছরের ওপরের মানুষদের রক্ষার দায়বদ্ধতা সরকারের আছে । কিন্তু পাশাপাশি সেই গোষ্ঠীর স্বাধীনতাকেও সবল করার দায়বদ্ধতা আছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে না । আমাদের প্রত্যেককে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে, যে আমরা কাজ করব, নাকি নিজেদের ঘরে বন্দি রেখে সন্তান, মা, স্ত্রীকে উপোস করতে দেখবো? আমি স্বাধীনতা এবং কাজের অধিকারকেই বেছে নেব নিজের জন্য, এবং সেই লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর জন্য, যাঁরা শুধু সম্মানের সঙ্গে তাঁদের সন্তানদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে চান । তাঁরা সরকার বা ধনীদের কোনও দয়া বা খয়রাতি চান না, তাঁরা নিজের ঘাম ঝরিয়ে খাবার জোগাড়ের একটা সুযোগ চান । যদি মৃত্যুও আসে, তা হবে সম্মানের।

মৃত্যু সমস্ত জীবনের স্বাভাবিক পরিসমাপ্তি, তাই তার মুখোমুখি হতে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের ভয় করা উচিত আমাদের প্রিয়জনদের যন্ত্রণা এবং তাদের প্রতি আমাদের ‘ধর্ম’ বা কর্তব্য পালনে আমাদের অক্ষমতাকে। খাবার ও জলের মতোই টাকাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা জিনিস । আমাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়াই উচিত । যমরাজ বা গ্রিম রিপার ইচ্ছে মতো যাকে খুশি পছন্দ করুক, কিন্তু ততদিন আমরা আমাদের পরিবার, আমাদের প্রিয়জন ও দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্যপালন করেই যাবো। স্থানীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যকে তুলে ধরতে কাজ করা আমাদের কর্তব্য । যদি এখন উদ্যমী হতে পারি, তাহলে আমরা সেই অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হব, যা আমরা চাই । ভয়ের দিন পেরিয়ে গেছে, এখন সময় কর্তব্যের – সুখ, প্রাচুর্য আর মর্যাদার জীবনকে পুনর্নির্মাণের ।

লেখক : ইন্দ্রশেখর সিংহ (অধিকর্তা, পলিসি অ্যান্ড আউটরিচ, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.