শ্রীনগর, 5 সেপ্টেম্বর : উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার পাট্টানের ইয়ারিপোড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াইয়ে তিন জন জঙ্গি, একজন সেনার প্রধান (মেজর) এবং দু’জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে । শুক্রবার পুলিশ আধিকারিকরা একথা জানিয়েছেন ।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, সংঘর্ষের স্থান থেকে তিন জঙ্গির দেহ উদ্ধার হয়েছে এবং তাদের সনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে । এর আগে দিনের শুরুতে পুলিশ, সেনার RR 29 এবং CRPF-এর যৌথ বাহিনী ইয়ারিপোড়ায় ‘কর্ডন অ্যান্ড সার্চ অপারেশন’ (চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে তল্লাশি) চালাচ্ছিল । যখনই যৌথ বাহিনী অকুস্থলে পৌঁছায়, তখনই লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা তাদের উপর হামলা চালায় । পালটা জবাব দেয় যৌথ বাহিনীও । যার ফলে দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই বেধে যায় ।
উত্তর কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দ্রুত বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি পুলিশ ও রাজ্যের গোয়েন্দা শাখা আগেই দিয়েছিল । এই আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছিল যে, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এই এলাকায় ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে । আর তার মধ্যেই এই সংঘর্ষের খবর মিলল ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, “গত মাসে মধ্য ও উত্তর কাশ্মীরের দুই জেলা, শ্রীনগর এবং বারামুল্লায় দু’টি ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ঘটেছিল । হাংলাগুলি হয় ১৪ এবং ১৭ অগাস্ট । ওই হামলায় পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়েছিল । এই দুই ঘটনা যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, জঙ্গিরা তাদের রণকৌশলে পরিবর্তন আনছে । কারণ দক্ষিণ কাশ্মীর আর তাদের জন্য নিরাপদ নয় ।”
তিনি আরও বলেছেন, “উত্তর কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে যে হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ইঙ্গিত বহন করছে । নিহতের তালিকায় বেশিরভাগই রয়েছেন রাজনৈতিক কর্মী এবং স্থানীয় নাগরিক । যারা নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য গোপন খবরদাতা হিসাবে কাজ করেন । আর আমাদের মতে, এঁদের মৃত্যুতে জঙ্গিদের এক ঢিলে দু’ই কাজ হয়ে যাচ্ছে ।”
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, “জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ড দু’টি প্রধান উদ্দেশ্যে মধ্য এবং উত্তর কাশ্মীরে সরিয়ে আনছেন । এক, এই বিশ্বাসে যে, দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের নজর সরিয়ে আনতে পারলে, সেখানে তাদের লুকিয়ে থাকা শাগরেদ এবং সাহায্যকারীদের উপর থেকে চাপ কমবে । দুই, জঙ্গিরা মনে করে শ্রীনগরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বারামুল্লার মতো প্রত্যন্ত এলাকা এবং উত্তর কাশ্মীরের অন্যান্য জেলাগুলিতে তারা আরও স্বচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে পারবে । প্রাথমিকভাবে, শ্রীনগর এবং বারামুল্লার দিকে নজর ঘোরাতে জঙ্গিদের একটু হলেও বিস্ময় জেগেছিল । কিন্তু তাদের সেই মানসিক জটিলতা বর্তমানে কেটে গিয়েছে । নিরাপত্তারক্ষীদের মৃতু্যর ঘটনা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক । কিন্তু এতে আমরা আরও বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি জঙ্গিদের উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার বিষয়ে । গত 30 বছরের হিংসাত্মক ঘটনার ইতিহাসে এমন কোনও জঙ্গি নেই যে, কোনও নিরাপত্তাকর্মীকে খুন করার পর, পালিয়ে বেশিদিন প্রাণে বাঁচতে পেরেছে ।”
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (IGP) বিজয় কুমার গত 19 জুন, 2020-তে দাবি করেছিলেন যে, মাসের শেষের দিক থেকে পুলিশের নজর ঘুরে গিয়ে দাঁড়াবে উত্তর কাশ্মীরের উপরই । সেনাবাহিনীর শ্রীনগরের 15 কর্পস সদর দপ্তরে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে কুমার দাবি করেছিলেন, “চলতি মাসের (জুন) শেষের দিকে দক্ষিণ কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপমুক্ত হয়ে যাবে । আর তার জন্য এখন হাতে আর মাত্র 12 দিন বাকি আছে । আর এই 12 দিনে আমরা দক্ষিণ কাশ্মীরে লুকিয়ে থাকা বাকি জঙ্গিদের নির্মূল করে দেব ।”