ETV Bharat / bharat

জম্মু-কাশ্মীরের নতুন ‘‘নাগরিকত্ব’’ আইন এবং এর প্রয়োগ

যে বা যাঁরা 15 বছরের বেশি সময় ধরে বাইরে থেকে এসে জম্মু ও কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁদেরও সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে ধরা হবে ৷ যার ফলে তাঁরাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷ নতুন নিয়মে আরও বেশ কিছু সংশোধন করা হয়েছে ৷ জেনে নিন বিস্তারিত প্রতিবেদনে ৷

J&K's new "citizenship" laws
জম্মু-কাশ্মীরের নতুন ‘‘নাগরিকত্ব’’ আইন এবং এর প্রয়োগ
author img

By

Published : Apr 11, 2020, 3:43 PM IST

যখন গোটা দেশ COVID-19 প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত, তখন নয়াদিল্লির BJP নেতৃত্বাধীন সরকার জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (রাজ্যের আইন গ্রহণ) নির্দেশ, 2020-র মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (UT) বসবাসের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল ৷ নতুন এই সংজ্ঞা জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির বাধার মুখে পড়ে ৷ যার জেরে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার এবং নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় পূর্বের নির্দেশ থেকে কিছুটা অংশ নিয়ে ৷ কেন্দ্রশাসিত ওই অঞ্চলের রাজনীতিকদের মন কিছুটা শান্ত হলেও উদ্বেগ এখনও কাটেনি ৷

কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের প্রবেশের আগে আমি প্রথমে জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসের বিষয়টি এই পরিপ্রেক্ষিতে ফেলে দেখি ৷ 2019 সালের 5 আগস্ট নয়াদিল্লি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ যা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত ৷ একই সঙ্গে ওই রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ) ভেঙে দেওয়া হয় ৷ এর আগে পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার সঙ্গে একটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ ঠিক করত কারা জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা আর কারা বাসিন্দা নয় ৷ আরও বিশদে বলতে গেলে যাঁরা বাসস্থানের অধিকার পেতেন, তাঁরাই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য সরকারি চাকরির আবেদন করতে পারতেন (কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে কিছু ছাড় দেওয়া ছিল) এবং স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন ৷

ঘটনা হল, জম্মু ও কাশ্মীরের বাসস্থানের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর অনুচ্ছেদের আগে হয়েছে ৷ 1927 ও 1932 সালে ওই রাজ্যের তৎকালীন ও শেষ শাসক মহারাজা হরি সিং সেখানকার নাগরিকত্ব এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আইন তৈরি করেছিলেন ৷ স্বাধীনতার পর ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর ও 35এ অনুচ্ছেদে এই আইন কোনওরকম বদল না করেই গ্রহণ করে নেওয়া হয় ৷

সরকারের নতুন নির্দেশে শুধুমাত্র নন-গেজেটেড পদগুলিই জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল ৷ আর তার জেরেই উপত্যকার সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রতিবাদে মুখর হয় ৷ সেই তালিকায় যেমন ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টি, তেমনই ছিল নতুন তৈরি হওয়া আপনি পার্টি ৷ যে দলের কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থন রয়েছে বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে ৷ উপত্যকায় অশান্তি শুরু হওয়ায় নয়াদিল্লি আইনে কিছু পরিবর্তন আনে ৷ সব শেষে নিয়ম করা হয় যে যাঁরা জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা, শুধু তাঁরাই এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷ একই সঙ্গে আরও নিয়ম করা হয়েছে যে বা যাঁরা 15 বছরের বেশি সময় ধরে বাইরে থেকে এসে জম্মু ও কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁদেরও সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে ধরা হবে ৷ যার ফলে তাঁরাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷

সংশোধিত নিয়ম নিয়েও কাশ্মীর উপত্যকার রাজনৈতিক মহল আপত্তি তুলেছে ৷ PDP জানিয়েছে যে ‘‘যখন যুবদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করাই আসল উদ্দেশ্য, তখন ভারত সরকারের উচিত জম্মু ও কাশ্মীরের চেতনার উপর হামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা ৷ প্রাণসংশয়ী প্যানডেমিকের মধ্যে ভারত সরকারের এই দ্রুত পদক্ষেপে প্রতীকী ছাড় দেওয়ার বদলে নতুন বাসস্থানের অধিকার দেওয়ার জন্য বিকল্প পথ খুলে রাখা হল, তাতে অপমান প্রশমিত হবে না ৷’’

এর ফলে একদিকে যেমন এর প্রভাব রাজ্য এবং তার রাজনৈতিক ও জাতিগত গঠনের উপর পড়বে ৷ অন্যদিকে সংশোধনের আগের আইন নিয়েও তাৎক্ষণিক উদ্বেগ তৈরি হবে ৷ একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে 84 হাজার কর্মখালি রয়েছে ৷ নতুন বসবাসকারীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব ফেলতে পারত ৷ কিন্তু সংশোধনের পর তা কিছুটা হলেও গুরুত্বহীন হয়েছে ৷

কেন্দ্রীয় সরকার কৌশলে প্রথমে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে দিল (নন-গেজেটেড চাকরি ছাড়া সব ধরনের চাকরিতেই স্থায়ী বাসিন্দা নয় এমন লোকেরাও আবেদন করতে পারবেন) এবং তার পর নিয়মে সংশোধন করে ছাড় দিয়ে দিল ৷

সিদ্ধান্তের সময় নির্বাচন

যেটা সবচেয়ে বিস্ময়কর (আবার তা নাও হতে পারে), তা হল জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বাসস্থানের নতুন আইন তৈরির সিদ্ধান্তের সময় ৷ ঠিক যে সময় গোটা দেশ COVID-19 এর জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করল নতুন আইন আনার জন্য এটাই সঠিক সময় ৷ কিন্তু অসংগতি সম্পর্কে মন্ত্রকের যুক্তি হল, যেহেতু COVID-19 সংক্রান্ত বিধিনেষধ জারি রয়েছে ৷ তাই এই বিজ্ঞপ্তির জেরে উপত্যকায় পথে নেমে প্রতিবাদ সম্ভব হবে না ৷ এই বিশ্লেষণ একেবারে সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ৷ এটাও মনে রাখা দরকার যে দু’জন অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা এবং ওমর আবদুল্লা, যাঁদের আটক করা হয়েছিল জন সুরক্ষা আইনের আওতায়, তাঁদেরও ঠিক COVID-19 ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কাশ্মীরের বাসিন্দা, বিশেষ করে যাঁরা ন্যাশনাল কনফারেন্সের সমর্থক, তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অসন্তুষ্টি জাহির করার জন্য এটা খুব ভালো সময় হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি ৷

প্রয়োগ

জম্মু ও কাশ্মীরের বাসস্থান সংক্রান্ত আইন ও অন্য নতুন আইন প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে যে ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে আগস্টের 5 তারিখ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা থেকে তারা পিছিয়ে আসবে না ৷ নয়াদিল্লিতে যখন নতুন সরকার তৈরি হবে, তখন জম্মু ও কাশ্মীর বাকি দেশের সঙ্গে আরও সুসংহত হয়ে যাবে ৷ আইনগত দিক থেকে বললে, ওই রাজ্যের পুরনো অবস্থানে ফেরা বেশ কঠিন হয়ে যাবে ৷

যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ বস্তুত, নয়াদিল্লির নেতাদের হাতে সময় আছে এবং তারা একদিন হয়তো জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারে ৷ নতুন আইন আনার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার মেরামত করেছে ৷ কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা ফেরেনি ৷ একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে কোনওরকম আপোস করা হবে না ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক মহলের সামনে নয়াদিল্লি সেখানকার রাজ্যের মর্যাদার বিষয়টি মূল হিসেবে রেখেছে ৷ আর তার ফলাফল নয়াদিল্লির অপছন্দেরও কোনও কারণ নেই ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন হ্যাপিমন জেকব, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ডিসারম্যামেন্ট, জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি ৷

যখন গোটা দেশ COVID-19 প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যস্ত, তখন নয়াদিল্লির BJP নেতৃত্বাধীন সরকার জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (রাজ্যের আইন গ্রহণ) নির্দেশ, 2020-র মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (UT) বসবাসের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে ব্যস্ত ছিল ৷ নতুন এই সংজ্ঞা জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির বাধার মুখে পড়ে ৷ যার জেরে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার এবং নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় পূর্বের নির্দেশ থেকে কিছুটা অংশ নিয়ে ৷ কেন্দ্রশাসিত ওই অঞ্চলের রাজনীতিকদের মন কিছুটা শান্ত হলেও উদ্বেগ এখনও কাটেনি ৷

কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের প্রবেশের আগে আমি প্রথমে জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসের বিষয়টি এই পরিপ্রেক্ষিতে ফেলে দেখি ৷ 2019 সালের 5 আগস্ট নয়াদিল্লি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ যা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত ৷ একই সঙ্গে ওই রাজ্যকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে (জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ) ভেঙে দেওয়া হয় ৷ এর আগে পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার সঙ্গে একটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ ঠিক করত কারা জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা আর কারা বাসিন্দা নয় ৷ আরও বিশদে বলতে গেলে যাঁরা বাসস্থানের অধিকার পেতেন, তাঁরাই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য সরকারি চাকরির আবেদন করতে পারতেন (কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে কিছু ছাড় দেওয়া ছিল) এবং স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন ৷

ঘটনা হল, জম্মু ও কাশ্মীরের বাসস্থানের বিষয়টি ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর অনুচ্ছেদের আগে হয়েছে ৷ 1927 ও 1932 সালে ওই রাজ্যের তৎকালীন ও শেষ শাসক মহারাজা হরি সিং সেখানকার নাগরিকত্ব এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আইন তৈরি করেছিলেন ৷ স্বাধীনতার পর ভারতীয় সংবিধানের 370 নম্বর ও 35এ অনুচ্ছেদে এই আইন কোনওরকম বদল না করেই গ্রহণ করে নেওয়া হয় ৷

সরকারের নতুন নির্দেশে শুধুমাত্র নন-গেজেটেড পদগুলিই জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল ৷ আর তার জেরেই উপত্যকার সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রতিবাদে মুখর হয় ৷ সেই তালিকায় যেমন ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টি, তেমনই ছিল নতুন তৈরি হওয়া আপনি পার্টি ৷ যে দলের কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থন রয়েছে বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে ৷ উপত্যকায় অশান্তি শুরু হওয়ায় নয়াদিল্লি আইনে কিছু পরিবর্তন আনে ৷ সব শেষে নিয়ম করা হয় যে যাঁরা জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা, শুধু তাঁরাই এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷ একই সঙ্গে আরও নিয়ম করা হয়েছে যে বা যাঁরা 15 বছরের বেশি সময় ধরে বাইরে থেকে এসে জম্মু ও কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁদেরও সেখানকার বাসিন্দা হিসেবে ধরা হবে ৷ যার ফলে তাঁরাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন ৷

সংশোধিত নিয়ম নিয়েও কাশ্মীর উপত্যকার রাজনৈতিক মহল আপত্তি তুলেছে ৷ PDP জানিয়েছে যে ‘‘যখন যুবদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করাই আসল উদ্দেশ্য, তখন ভারত সরকারের উচিত জম্মু ও কাশ্মীরের চেতনার উপর হামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা ৷ প্রাণসংশয়ী প্যানডেমিকের মধ্যে ভারত সরকারের এই দ্রুত পদক্ষেপে প্রতীকী ছাড় দেওয়ার বদলে নতুন বাসস্থানের অধিকার দেওয়ার জন্য বিকল্প পথ খুলে রাখা হল, তাতে অপমান প্রশমিত হবে না ৷’’

এর ফলে একদিকে যেমন এর প্রভাব রাজ্য এবং তার রাজনৈতিক ও জাতিগত গঠনের উপর পড়বে ৷ অন্যদিকে সংশোধনের আগের আইন নিয়েও তাৎক্ষণিক উদ্বেগ তৈরি হবে ৷ একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে 84 হাজার কর্মখালি রয়েছে ৷ নতুন বসবাসকারীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব ফেলতে পারত ৷ কিন্তু সংশোধনের পর তা কিছুটা হলেও গুরুত্বহীন হয়েছে ৷

কেন্দ্রীয় সরকার কৌশলে প্রথমে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে দিল (নন-গেজেটেড চাকরি ছাড়া সব ধরনের চাকরিতেই স্থায়ী বাসিন্দা নয় এমন লোকেরাও আবেদন করতে পারবেন) এবং তার পর নিয়মে সংশোধন করে ছাড় দিয়ে দিল ৷

সিদ্ধান্তের সময় নির্বাচন

যেটা সবচেয়ে বিস্ময়কর (আবার তা নাও হতে পারে), তা হল জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য বাসস্থানের নতুন আইন তৈরির সিদ্ধান্তের সময় ৷ ঠিক যে সময় গোটা দেশ COVID-19 এর জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করল নতুন আইন আনার জন্য এটাই সঠিক সময় ৷ কিন্তু অসংগতি সম্পর্কে মন্ত্রকের যুক্তি হল, যেহেতু COVID-19 সংক্রান্ত বিধিনেষধ জারি রয়েছে ৷ তাই এই বিজ্ঞপ্তির জেরে উপত্যকায় পথে নেমে প্রতিবাদ সম্ভব হবে না ৷ এই বিশ্লেষণ একেবারে সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ৷ এটাও মনে রাখা দরকার যে দু’জন অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা এবং ওমর আবদুল্লা, যাঁদের আটক করা হয়েছিল জন সুরক্ষা আইনের আওতায়, তাঁদেরও ঠিক COVID-19 ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷ কাশ্মীরের বাসিন্দা, বিশেষ করে যাঁরা ন্যাশনাল কনফারেন্সের সমর্থক, তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অসন্তুষ্টি জাহির করার জন্য এটা খুব ভালো সময় হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি ৷

প্রয়োগ

জম্মু ও কাশ্মীরের বাসস্থান সংক্রান্ত আইন ও অন্য নতুন আইন প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে যে ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে আগস্টের 5 তারিখ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা থেকে তারা পিছিয়ে আসবে না ৷ নয়াদিল্লিতে যখন নতুন সরকার তৈরি হবে, তখন জম্মু ও কাশ্মীর বাকি দেশের সঙ্গে আরও সুসংহত হয়ে যাবে ৷ আইনগত দিক থেকে বললে, ওই রাজ্যের পুরনো অবস্থানে ফেরা বেশ কঠিন হয়ে যাবে ৷

যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না ৷ বস্তুত, নয়াদিল্লির নেতাদের হাতে সময় আছে এবং তারা একদিন হয়তো জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারে ৷ নতুন আইন আনার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার মেরামত করেছে ৷ কিন্তু রাজ্যের মর্যাদা ফেরেনি ৷ একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে কোনওরকম আপোস করা হবে না ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক মহলের সামনে নয়াদিল্লি সেখানকার রাজ্যের মর্যাদার বিষয়টি মূল হিসেবে রেখেছে ৷ আর তার ফলাফল নয়াদিল্লির অপছন্দেরও কোনও কারণ নেই ৷

প্রতিবেদনটি লিখেছেন হ্যাপিমন জেকব, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স, অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ডিসারম্যামেন্ট, জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.