দিল্লি, 22 এপ্রিল: বিশ্বজুড়ে যেভাবে কোভিড–১৯ এর প্রকোপ বেড়ে চলেছে, তাতে ভেন্টিলেটরের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে । বিখ্যাত ভারতীয় চিকিৎসা ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলি একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই করছে যে, দেশীয় বাজারের জন্য বেশি সংখ্যায় ভেন্টিলেটর কে তৈরি করতে পারে । কম দামে এই মেশিন তৈরির জন্য গবেষণাও চলছে । নভেল কেরোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের ঊর্ধ্বাংশে আক্রমণ করে, যার ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় । ফলে নভেল কেরোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ৩ শতাংশেরই ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়ে ।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ৬০,০০০ ভেন্টিলেটর আছে । এদের মধ্যে ১০,০০০–এর কম সংখ্যক ভেন্টিলেটর রয়েছে রাজ্য সরকার পরিচালিত হাসপাতালগুলিতে । হিসাব করে দেখা গিয়েছে, বর্তমানে ভারতের অন্তত ১.১০ থেকে ২.২০ লাখ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন । যেমনভাবে ভেন্টিলেটরের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হচ্ছে, তেমনই চললে আমরা মাসে অন্তত ৫,৫০০টি ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারব । দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে ২,৭০০টি এবং মার্চে ৫,৫৮০টি ভেন্টিলেটর তৈরি করা হয়েছিল । আমাদের আশা, মে পর্যন্ত আমরা মাসে ৫০,০০০টি ভেন্টিলেটর তৈরির ক্ষমতা অর্জন করতে পারব । দেশে তৈরি ভেন্টিলেটরের দাম ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা আর বিদেশে থেকে আনা ভেন্টিলেটরের দাম ঘোরাফেরা করে ১১ থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যে ।
ভেন্টিলেটর দু’ধরনের হয় । মাইক্রোপ্রসেসর নির্ভর তৃতীয় প্রজন্মের ভেন্টিলেটরগুলি ICU-তে বহুল ব্যবহৃত হয় । একইরকমভাবে আর্টিফিসিয়াল ম্যানুয়াল ব্রিদিং ইউনিট অথবা ব্যাগ ভালভ মাস্ক ভেন্টিলেটরগুলি জরুরি অবস্থার সময়ও অত্যন্ত কাজে আসে ।
এই ভেন্টিলেটরগুলিকে ‘অ্যাম্বু ব্যাগ’ও বলা হয়, যা বেশ সস্তাও । এগুলির মধ্যে থাকে একটি ব্যাগ, যা নিজে থেকেই স্ফীত হতে পারে এবং হাতে ধরা যায় এমন একটা যন্ত্র, যেগুলির মাধ্যমে রোগীদের পজিটিভ প্রেসার ভেন্টিলেশন পরিষেবা
দেওয়া যায় । এছাড়া সঙ্গে যে কমপ্রেসারটি থাকে, তার মাধ্যমে একে হাতে না ধরেও, দূর থেকে যান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা যায় । BEL, BHEL এবং মাহিন্দ্রা ‘স্ক্যানরে’–র সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে, যাদের মাসে ২০০০টি ভেন্টিলেটর তৈরির ক্ষমতা আছে । মে মাসের মধ্যে এই ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩০,০০০–এ । AgVa হেলথ কেয়ারের সঙ্গে জোট বাঁধার জন্য প্রস্তুত মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড । বর্তমানে চেষ্টা চলছে AgVa ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ করে তোলা । বর্তমানে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা এড়াতে DRDO এবং ভারতীয় রেল–সহ দেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এগিয়ে এসেছে । উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ভেন্টিলেটরের নমুনা ডিজাইন করেছে । বিশেষ করে DRDO–র লক্ষ্য হল অল্প খরচে, অধিক ক্ষমতাশালী এবং কম আয়তনযুক্ত ভেন্টিলেটর তৈরি করা । ইতিমধ্যেই অনেক মডেল ডিজাইন করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে কিছু ভেন্টিলেটরের উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে ।
শ্রী চিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি ‘অ্যাম্বু ব্যাগ’ প্রযুক্তির সাহায্যে একটি ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে । ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি–র তরফে অনুমোদন পাওয়ার পর এটি উইপ্রো থ্রিডি–র সঙ্গে ভেন্টিলেটর তৈরির বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেছে । হায়দরাবাদের নেক্সটবাইট টেকনোলজিস সংস্থা ‘অ্যাম্বু ব্যাগ’ ইউনিটগুলিকে কার্যকর করে তুলতে একটি বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র তৈরি করেছে । এর দাম রাখা হয়েছে ৪,০০০ টাকা ।
চণ্ডীগড়ের PGIMR–এর সহকারী অধ্যাপক, রাজীব চৌহানও একইরকম একটি স্বয়ংক্রিয় ‘অ্যাম্বু ব্যাগ ইউনিট’ তৈরি করেছে । আবার মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাও একট নমুনা ‘অ্যাম্বু ব্যাগ’ ভেন্টিলেটর ডিজাইন করেছে । ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন মার্চ মাসেই একটি নতুন ভেন্টিলেটরের মডেল প্রকাশ্যে এনেছে । অন্যান্য শিল্পের সাহায্যে DRDO এমন ৫,০০০টি ইউনিট তৈরি করতে চলেছে । ভারতীয় রেলও তাদের কাপুরথালার রেল কোচ ফ্যাক্টরিতে একটি স্বল্পমূল্যের ভেন্টিলেটর মডেল তৈরি করেছে, যার নাম ‘জীবন’ । কমপ্রেসার ছাড়া, এর দাম ঠিক করা হয়েছে ১০,০০০ টাকা ।
রেলের কর্তারা জানিয়েছেন যে, তারা ICMR-এর অনুমোদন পেলেই মাসে এরকম আরও ১০০টি ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারবেন । IIIT হায়দরাবাদ পরিচালিত স্টার্ট আপ ‘ইন্টারনেট অফ থিংস’–এর সাহায্যে স্বল্পমূল্যের একটি ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে, যার নাম ‘জীবন লাইট’ । এর দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা হতে পারে । আবার IIT রুরকি এবং AIIMS হৃষিকেশ একজোট হয়ে তৈরি করেছে একটি পোর্টেবল
ভেন্টিলেটর, যার নাম ‘প্রাণ বায়ু’ । অন্তত ৪৫০ জন বিশেষজ্ঞ এই ভেন্টিলেটরের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন । ২৫,০০০ টাকায় এই ভেন্টিলেটরটি পাওয়া যাবে ।
IIT ধানবাদের ইঞ্জিনিয়াররা একটি বিশেষ ধরনের অ্যাডাপ্টর মডেল তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে দু’জন মানুষ একসঙ্গে একটি ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে পারবেন । চাহিদামতো এই মডেল তৈরি করা হবে । এই অ্যাডাপ্টরটির প্রোটোটাইপ পাটলিপুত্র মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে । গুজরাতের রাজকোটের একটি বেসরকারি সংস্থা একটি ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে, যার নাম দমন–১ । কোভিড–১৯ আক্রান্ত এক ব্যক্তির উপর এর প্রয়োগ সফল হয়েছে । গুজরাত সরকারের তরফে এই ভেন্টিলেটরের উৎপাদনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার দাম ১ লাখ টাকার কম ।