ETV Bharat / bharat

নেপাল নিয়ে চিনা দূরভিসন্ধি ব্যাহত করা উচিত ভারতের

নেপালের সীমান্তে তিন দিকেই রয়েছে ভারত, আর এক দিকে চিন । নেপালে রাজনৈতিক সংকট হলে তা ভারতের স্বার্থে অনুকূল নয় । নেপালের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শগত সম্বন্ধের সুযোগ নিয়ে চিন চেষ্টা করছে হিমালয়ের কোলের এই দেশটিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে । এই পরিস্থিতিতে ভারতের কৌশলগতভাবে এগোনো উচিত ।

india-should-thwart-chinese-designs-in-nepal
india-should-thwart-chinese-designs-in-nepal
author img

By

Published : Dec 23, 2020, 8:09 AM IST

গোর্খা শাসনে ইতি পড়ার পর, 2008 সালে ফেডেরাল প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের সময় থেকে 2017 পর্যন্ত নেপাল নয় বছরের ব্যবধানে 10 জন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছে । এর থেকেই সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিতাবস্থার বিষয়টি বোঝা যায় । তিন বছর আগে নেপালে প্রথম ভোট হয়েছিল দেশের নতুন সংবিধান অনুসারে । নেপালের ভোটাররা স্থিতাবস্থার পক্ষে ভোট দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখে বাম জোটকে ক্ষমতায় আনে । চিনের দৃষ্টান্ত অনুসারে, খাদগা প্রসাদ ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং পুষ্প কমল দহালের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী সেন্টার) জোট হিসাবে ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করে এবং পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । তবে এর পর বেজিংয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এই দুই দল একত্রিত হয়ে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করে, যা সাতটি প্রাদেশিক সরকারের মধে্য ছ’টি এবং স্থানীয় ভোটে 753টি আসনের মধে্য 60 শতাংশই জিতে নেয় । দুই দলের নেতা, খাদগা প্রসাদ শর্মা ওলি এবং পুষ্প কমল দহলের মধে্য একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও জোটের নিয়ম মেনে শেষপর্যন্ত সব বিবাদই অগোচরে রাখা হয় । এই নিয়মের তালিকায় ছিল প্রতি আড়াই বছরে প্রধানমন্ত্রিত্বের হাতবদল হবে এবং যে কোনও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ তথা নিয়োগের আগে যৌথ স্তরে পরামর্শ করতে হবে ।

কিন্তু জোটের নিয়মাবলীর প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান দেখিয়ে নেওয়া একরতরফা সিদ্ধান্তের ফলে অসন্তোষ তৈরি হয় যা ক্ষমতাসীন দলের মধে্য তীব্র মতবিরোধ তৈরি করে । এই ধরনের ঘটনাপ্রবাহের ফলে দল ক্রমশ টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে থাকে আর অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ওলি এক ধাপ এগিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন এবং নতুন করে নির্বাচনের নির্দেশ দিলেন । দলের অসন্তুষ্ট নেতারা এই পদক্ষেপকে সাংবিধানিক অভু্যত্থান বলে ঘোষণা করলেন এবং এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন । কাঠমাণ্ডুর সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেখানকার শীর্ষ আদালতের রায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই যাবে ।

নেপালের সীমান্তে তিন দিকেই রয়েছে ভারত, আর এক দিকে চিন । নেপালে রাজনৈতিক সংকট হলে তা ভারতের স্বার্থে অনুকূল নয় । নেপালের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শগত সম্বন্ধের সুযোগ নিয়ে চিন চেষ্টা করছে হিমালয়ের কোলের এই দেশটিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে । এই পরিস্থিতিতে ভারতের কৌশলগতভাবে এগোনো উচিত ।

গত কিছু দশক ধরে ভারত এই স্থলভূমি পরিবেষ্ঠিত পাহাড়ি দেশটির সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক দেশের ভূমিকা পালন করে চলেছে । যদিও ইউএমএল-এর মতো কিছু দল, ভারত বিদ্বেষী জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে । তাদের অভিযোগ, ভারত মাত্রাতিরিক্তভাবে নেপালের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে । নিজের নির্বাচনী ভাষণে ওলি উল্লেখ করছিলেন, একটি প্রতিবেশি দেশের উপর অতি নির্ভরশীল হওয়া থেকে নেপালকে মুক্ত হতে হবে । ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত সমস্যা জিইয়ে তোলার নেপথে্য আদপে তিনিই ছিলেন ।

370 ধারা প্রত্যাহারের পর যে রাজনৈতিক মানচিত্র ভারতের তরফে প্রকাশ করা হয়েছিল, তার প্রসঙ্গ টেনে এনে নেপাল সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল । তাদের দাবি ছিল, মানচিত্রে লিপুলেখের কাছে অবস্থিত কালাপানি পরগণাকে ভারতের অংশ বলে দেখানো হলেও তা ঠিক নয় । চলতি বছরের জুন মাসে নেপালও সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করে, যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরা এলাকাকে নেপালের এলাকা বলে দেখানো হয়েছিল ।

প্রধানমন্ত্রী ওলি অভিযোগ করেছিলেন যে, ভারত না কি তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে । যদিও তাঁর নিজের দলেই তাঁর এহেন যুক্তি মানার কেউ ছিল না । প্রতে্যকেই বুঝেছিল, যুক্তিহীন এই অভিযোগ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা দূরভিসন্ধিমূলক এবং এর ফলে যা বিতর্ক হওয়ার ছিল, সেটাই হয়েছে । চিন আসলে নেপালকে তাদের কথা শুনে চলা তোতাপাখিতে পরিণত করতে চাইছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর আওতায় বিকাশের ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে । ভারতের উচিত আরও পোক্ত কূটনীতির আশ্রয় নেওয়া, কারণ ড্রাগন আদপে তাদেরই স্বার্থের পথে বাধার সৃষ্টি করতে চাইছে বাংলাদেশ, ভুটান এমনকী শ্রীলঙ্কার উপরও প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে ।

ভারতকে চিনের দূরভিসন্ধি ব্যাহত করতে হবে । ভারতের উচিত, নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিবেশি, সার্বভৌম দেশগুলির উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে সক্রিয় অংশ নেওয়া ।

গোর্খা শাসনে ইতি পড়ার পর, 2008 সালে ফেডেরাল প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের সময় থেকে 2017 পর্যন্ত নেপাল নয় বছরের ব্যবধানে 10 জন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছে । এর থেকেই সেখানকার রাজনৈতিক অস্থিতাবস্থার বিষয়টি বোঝা যায় । তিন বছর আগে নেপালে প্রথম ভোট হয়েছিল দেশের নতুন সংবিধান অনুসারে । নেপালের ভোটাররা স্থিতাবস্থার পক্ষে ভোট দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখে বাম জোটকে ক্ষমতায় আনে । চিনের দৃষ্টান্ত অনুসারে, খাদগা প্রসাদ ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউএমএল) এবং পুষ্প কমল দহালের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওবাদী সেন্টার) জোট হিসাবে ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করে এবং পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । তবে এর পর বেজিংয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এই দুই দল একত্রিত হয়ে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করে, যা সাতটি প্রাদেশিক সরকারের মধে্য ছ’টি এবং স্থানীয় ভোটে 753টি আসনের মধে্য 60 শতাংশই জিতে নেয় । দুই দলের নেতা, খাদগা প্রসাদ শর্মা ওলি এবং পুষ্প কমল দহলের মধে্য একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও জোটের নিয়ম মেনে শেষপর্যন্ত সব বিবাদই অগোচরে রাখা হয় । এই নিয়মের তালিকায় ছিল প্রতি আড়াই বছরে প্রধানমন্ত্রিত্বের হাতবদল হবে এবং যে কোনও জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ তথা নিয়োগের আগে যৌথ স্তরে পরামর্শ করতে হবে ।

কিন্তু জোটের নিয়মাবলীর প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান দেখিয়ে নেওয়া একরতরফা সিদ্ধান্তের ফলে অসন্তোষ তৈরি হয় যা ক্ষমতাসীন দলের মধে্য তীব্র মতবিরোধ তৈরি করে । এই ধরনের ঘটনাপ্রবাহের ফলে দল ক্রমশ টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে থাকে আর অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ওলি এক ধাপ এগিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন এবং নতুন করে নির্বাচনের নির্দেশ দিলেন । দলের অসন্তুষ্ট নেতারা এই পদক্ষেপকে সাংবিধানিক অভু্যত্থান বলে ঘোষণা করলেন এবং এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন । কাঠমাণ্ডুর সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেখানকার শীর্ষ আদালতের রায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই যাবে ।

নেপালের সীমান্তে তিন দিকেই রয়েছে ভারত, আর এক দিকে চিন । নেপালে রাজনৈতিক সংকট হলে তা ভারতের স্বার্থে অনুকূল নয় । নেপালের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শগত সম্বন্ধের সুযোগ নিয়ে চিন চেষ্টা করছে হিমালয়ের কোলের এই দেশটিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে । এই পরিস্থিতিতে ভারতের কৌশলগতভাবে এগোনো উচিত ।

গত কিছু দশক ধরে ভারত এই স্থলভূমি পরিবেষ্ঠিত পাহাড়ি দেশটির সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক দেশের ভূমিকা পালন করে চলেছে । যদিও ইউএমএল-এর মতো কিছু দল, ভারত বিদ্বেষী জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে । তাদের অভিযোগ, ভারত মাত্রাতিরিক্তভাবে নেপালের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে । নিজের নির্বাচনী ভাষণে ওলি উল্লেখ করছিলেন, একটি প্রতিবেশি দেশের উপর অতি নির্ভরশীল হওয়া থেকে নেপালকে মুক্ত হতে হবে । ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত সমস্যা জিইয়ে তোলার নেপথে্য আদপে তিনিই ছিলেন ।

370 ধারা প্রত্যাহারের পর যে রাজনৈতিক মানচিত্র ভারতের তরফে প্রকাশ করা হয়েছিল, তার প্রসঙ্গ টেনে এনে নেপাল সরকারিভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল । তাদের দাবি ছিল, মানচিত্রে লিপুলেখের কাছে অবস্থিত কালাপানি পরগণাকে ভারতের অংশ বলে দেখানো হলেও তা ঠিক নয় । চলতি বছরের জুন মাসে নেপালও সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করে, যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরা এলাকাকে নেপালের এলাকা বলে দেখানো হয়েছিল ।

প্রধানমন্ত্রী ওলি অভিযোগ করেছিলেন যে, ভারত না কি তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে । যদিও তাঁর নিজের দলেই তাঁর এহেন যুক্তি মানার কেউ ছিল না । প্রতে্যকেই বুঝেছিল, যুক্তিহীন এই অভিযোগ থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা দূরভিসন্ধিমূলক এবং এর ফলে যা বিতর্ক হওয়ার ছিল, সেটাই হয়েছে । চিন আসলে নেপালকে তাদের কথা শুনে চলা তোতাপাখিতে পরিণত করতে চাইছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর আওতায় বিকাশের ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে । ভারতের উচিত আরও পোক্ত কূটনীতির আশ্রয় নেওয়া, কারণ ড্রাগন আদপে তাদেরই স্বার্থের পথে বাধার সৃষ্টি করতে চাইছে বাংলাদেশ, ভুটান এমনকী শ্রীলঙ্কার উপরও প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে ।

ভারতকে চিনের দূরভিসন্ধি ব্যাহত করতে হবে । ভারতের উচিত, নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিবেশি, সার্বভৌম দেশগুলির উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে সক্রিয় অংশ নেওয়া ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.