মুজফ্ফরপুর (বিহার), 12 নভেম্বর: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (National Human Rights Commission of India)-এর সদ্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির (Advisory Committee) সদস্য হয়ে সকলের নজর কাড়লেন নাসিমা খাতুন (Naseema Khatun) ৷ তাঁর এই সাফল্যই এখন নানা মহলের চর্চার বিষয় ৷ কিন্তু, তাঁকে নিয়ে কেন এত আলোচনা চলছে ? কারণ, তিনি সমাজের তথাকথিত চেনা ছক ভেঙে নতুন কিছু করার সাহস দেখিয়েছেন এবং তাতে সফলও হয়েছেন ৷
নাসিমা খাতুনের জন্ম হয়েছিল বিহারের (Bihar) যৌনপল্লিতে (Red Light Area) ৷ অনেকেই ভেবেছিলেন, এই মেয়েও হয়তো বড় হয়ে দেহ ব্যবসাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেবে ৷ কিন্তু, নাসিমা তা করেননি ৷ উলটে তিনি বেছে নেন লড়াইয়ের পথ ৷ একজন সমাজকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন ৷ আর সেই সূত্র ধরেই আজ তিনি এনএইচআরসি (NHRC)-এর সদস্য ৷ সমাজের সর্বস্তরের পিছিয়ে পড়া মানুষ যাতে তার অধিকার পায়, এবার তা নিয়েই জাতীয়স্তরে কাজ শুরু করতে চান নাসিমা ৷ ইতিমধ্যেই যৌনকর্মীদের তিনি জানিয়েছেন, এবার তাঁদের কথা দেশের অন্যতম বড় মঞ্চে স্থান পাবে । তিনি মনে করেন সকলেরই নিজের কথা বলা উচিত । সকলে নিজের কথা বললে একদিন স্বপ্ন পূরণ সম্ভব ।
আরও পড়ুন: জনসংখ্যা বৃদ্ধি রুখতে নারীশিক্ষায় জোর নীতীশের
এই মুহূর্তে অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রান্তিক শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছেন নাসিমা ৷ এই শ্রমিকদের অধিকার, আইনি সচেতনতা এবং শিক্ষা নাসিমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ৷ তিনি প্রমাণ করেছেন, শতাব্দীপ্রাচীন গতানুগতিক কিছু ভাবনা, চিন্তাকে এবার পিছনে ফেলে আসার সময় হয়েছে ৷ নাসিমা বুঝিয়ে দিয়েছেন, একজন মানুষের জন্ম কোথায় হয়েছে, সেটা বড় কথা নয় ৷ বড় বিষয় হল, কীভাবে সেই মানুষ নিজেকে তৈরি করছে এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷
তাঁর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাসিমা বলেন, "কমিশন জাতীয়স্তরে একটি কমিটি গঠন করেছে ৷ সেখানে সমাজের বিভিন্নস্তরে কাজ করা মানুষকে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে ৷ একইভাবে আমিও এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছি ৷ এবার থেকে আপনি আপনার আওয়াজ দেশের সবথেকে বড় মঞ্চে আরও জোরদারভাবে তুলতে পারবেন ৷ আমাদের ইস্যুগুলিকে তুলে ধরার দায়িত্ব সকলের ৷ আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে আমরা নিশ্চয় সফল হব ৷"
নাসিমা আদতে মুজফ্ফরপুরের চতুর্ভূজ স্থানের বাসিন্দা ৷ তাঁর বাবা যখন ছোট ছিলেন, তখন তাঁকে একজন যৌনকর্মী দত্তক নেন ৷ ফলে নাসিমার বাবাও রেড লাইট এলাকায় বড় হন ৷ পরে নাসিমারও সেখানেই জন্ম হয় ৷ তিনি মূলত তাঁর ঠাকুমার কাছে বড় হন ৷ সেই দিনগুলো ছিল অত্যন্ত কঠিন ৷ কিন্তু, সবকিছু বদলে যায় 1995 সালে ৷ রাজবালা ভার্মা নামে একজন আইএএস আধিকারিক সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের যৌনকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেন ৷ তাতেই নাসিমার জীবন বদলে যায় ৷
নাসিমা খুব ভালো কুরুশের কাজ জানতেন ৷ সেই কাজ করেই মাসে 500 টাকা রোজগারের সুযোগ পান তিনি ৷ তখনকার দিনে মাসে 500 টাকা কম ছিল না ৷ এরপরই সমাজকর্মী হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন নাসিমা ৷ বিহারের নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হত তাঁকে ৷ এখন নাসিমার নিজের একটি সংগঠন রয়েছে ৷ সম্প্রতি এই সংগঠন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি শুরু করেছে ৷ তাতে প্রান্তিক মানুষকে তার আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে ৷