নয়াদিল্লি, 28 অগস্ট: বিলকিস বানো গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের 7 সদস্যকে খুনের অভিযোগ দোষী 11 জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাত সরকার ৷ এ নিয়ে তোলপাড় দেশ ৷ শনিবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিতকে চিঠি লিখলেন 134 জন প্রাক্তন আমলা ৷ একে 'ভয়ানক ভুল সিদ্ধান্ত' (Horrendously Wrong Decision) হিসেবে উল্লেখ করে তা শুধরে নেওয়ার আবেদন জানান আমলারা (134 Ex Bureaucrats writes to CJI UU Lalit over Bilkis Bano convicts release) ৷
গুজরাত সরকারের মুক্তির এই আদেশ বাতিল করা হোক ৷ গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাবাসে ফের হাজতে ফেরানোর কথা জানিয়েছেন আমলারা ৷ প্রধান বিচারপতিকে লেখা হয়েছে, "দেশের 75তম স্বাধীনতা দিবসের দিন গুজরাতে যা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ মানুষের মতোই আমরাও শিহরিত ৷"
দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং, প্রাক্তন ক্যাবিনেট সেক্রেটারি কে এম চন্দ্রশেখর, প্রাক্তন দুই সচিব শিবশঙ্কর মেনন এবং সুজাতা সিং, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব জি কে পিল্লাই-সহ 134 জন এই চিঠিতে সই করেছেন ৷
আরও পড়ুন: বিলকিস বানোর 11 ধর্ষকের মুক্তি, গুজরাত ও কেন্দ্র সরকারের মত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট
27 অগস্ট, শনিবার বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত দেশের 49 তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন ৷ সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যে 11 জনের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে ৷ 25 অগস্ট সেই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে ৷ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ গুজরাত সরকারের মত জানতে চায় ৷ দু'সপ্তাহ পর এর পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ৷
বিলকিস বানো
2002-এর ফেব্রুয়ারি ৷ গুজরাতে গোধরায় অযোধ্য়া থেকে ফেরা একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে ৷ এতে মারা যান 58 জন পুণ্যার্থী এবং করসেবক ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জ্বলে ওঠে গোটা রাজ্য (Gujarat Riot 2002) ৷ 3 মার্চ, দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালায় ৷ সেই সময় বানো 5 মাসের গর্ভবতী ছিলেন ৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র 21 বছর ৷ তাঁকে গণধর্ষণ (Bilkis Bano Gangrape) করে তাঁর পরিবারের 7 জন সদস্যকে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা ৷ এর মধ্যে তাঁর 3 বছরের মেয়েও ছিল ৷ পরিবারের অন্য 6 জন সদস্য পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন ৷ আদালতে এটাই জানানো হয়েছিল ৷ এই ঘটনায় 2004 সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয় ৷
বিচার এবং মুক্তিপর্ব
প্রথমে আমেদাবাদে এর বিচারপর্ব শুরু হয় ৷ নির্যাতিতা বিলকিস বানো আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান যে, সিবিআই-এর কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে ৷ 2004-এর অগস্ট, সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি মুম্বইয়ে স্থানান্তরিত করে দেয় ৷ বিশেষ সিবিআই আদালত বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের গণহত্যার অভিযোগে 2008-এর 21 জানুয়ারি 11 জন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ ঘোষণা করে ৷ বোম্বে হাইকোর্টও এই নির্দেশ বহাল রাখে এবং 7 জন দোষীকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেয় ৷
11 জন দোষীর মধ্যে রাধেশ্যাম শাহ 15 বছর 4 মাস জেলে কাটিয়ে গুজরাত হাইকোর্টে তার কারাবাসের সময় কমানোর আবেদন জানায় ৷ আদালত পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি মহারাষ্ট্রের কাছে পাঠায় ৷ এ বছরের 1 এপ্রিল শাহ সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির জন্য আবেদন করে ৷ 13 মে সর্বোচ্চ আদালত জানায়, এই অপরাধ গুজরাতে ঘটেছিল ৷ তাই গুজরাত সরকারকেই শাহের আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷
আরও পড়ুন: গুলবার্গ হত্যাকাণ্ডে ফের ক্লিনচিট মোদিকে, জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
সেই অনুযায়ী সুুপ্রিম কোর্ট গুজরাত সরকারকে 19 জুলাই, 1992-এর নীতি অনুযায়ী সময়ের আগে শাহের মুক্তির আবেদনটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় এবং দু'মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলে ৷ রাজ্য সরকার পঞ্চমহলের কালেক্টর সুজল মায়াত্রার (Panchmahals collector Sujal Mayatra) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ৷ তিনি বলেন, "কয়েক মাস আগে 11 জন দোষীর সাজা কমানো নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয় ৷ সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে কারাবাসের সময় হ্রাসের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ৷ এই প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয় এবং তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার ৷"
সোমবার, স্বাধীনতা দিবসে রাধেশ্যাম শাহ ছাড়াও গোধরা সাব-জেল থেকে মুক্তি পায় যশওয়ান্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা ৷