কলকাতা, 8 অগস্ট: দিনটা ছিল 2023-এর 9 অগস্ট। প্রায় দু'সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তারপর নিজের বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তবে ঠিক এক বছর পর আবারও একই সময়, অসুস্থ হয়ে পড়লেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু এবার আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় টুকু দিলেন না। বাইপাপ সাপোর্ট দিতেই বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তবে কেন পরপর দু'বছর একই সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি ? কেন কাজে দিল না বাইপাপ সাপোর্ট ? সেই নিয়েই ইটিভি ভারত কথা বলল বিশিষ্ট মেডিসিনের চিকিৎসক দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
চিকিৎসক জানান, আবহাওয়া পরিবর্তন সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়। এই সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাইরাল ফিভার বেশি দেখা যায়। সিওপিডি কথার অর্থ হলো ওই রোগীর ফুসফুস ঠিকমত কাজ করছে না। বিভিন্ন কারণে এই ফুসফুস কাজ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যে যদি কেউ ধূমপান করেন, তবে তাদের এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। এবার আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার সময় এই ধরনের রোগীদের খুব সাবধানে থাকতে হয়। কারণ, এই আবহাওয়ায় তারা খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রেও হয়তো একই ঘটনা ঘটেছিল বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা ৷
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (ইটিভি ভারত) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চা বিস্কুট খেয়ে ওষুধ খাওয়ার পরে জলখাওয়ার খেয়ে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তারপরেই আচমকা বেড়ে যায় শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে সঙ্গে বাইপাপ দেয় পরিবারের লোক। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। কেন বাইপাপ দেওয়া হলো তাঁকে ? চিকিৎসক বলেন, "কোনও মানুষের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা থাকা উচিত 80-এর উপরে। অন্যদিকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা থাকা উচিত 35 থেকে 45-এ। এবার এই ধরনের রোগীর শরীরে অক্সিজেন মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। উলটোদিকে বাড়তে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা। এই দুটোকেই শরীরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেওয়া হয় বাইপাপ। কিন্তু বাইপাপ অনেক সময় কাজ করে না। তখন ভেন্টিলেশনে নিয়ে যেতে হয়।" কিন্তু এই সময়টা পাওয়া যায়নি আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে এবার। তাই তখন হৃদযন্ত্র ঠিকমত কাজ করতে না পেরে হার্ট ফেল হয়।
তবে, যাদের এই সিওপিডির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দেন চিকিৎসক। মূলত, এই ধরনের রোগীদের দুটো টিকা দেওয়া হয়। একটি হল ইনফ্লুয়েঞ্জা, অপরটি নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন প্রতি বছর দিতে হয়। কিন্তু নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। পাঁচ বছর অন্তর এই ভ্যাকসিন দিতে হয়। তাই চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী সিওপিডি আক্রান্ত সকল মানুষের উচিত তাদের নিকটবর্তী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই ভ্যাকসিনের পরিমাপ দেখে ভ্যাকসিন দিয়ে নেওয়া ।