পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

'সমঝোতা'য় নেই আইএসএফ ! কার ক্ষতি ? কার লাভ ? - Lok Sabha Election 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

LS Election 2024: লোকসভা নির্বাচনের আগে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের করার কথা থাকলেও পরে আইএসএফ সরে এসেছে ৷ এতে কি আদৌ কারও লাভ হবে ?

ETV Bharat
লোকসভা ভোটের আগে জোট ভাঙল নওশাদের আইএসএফ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 6, 2024, 9:43 PM IST

কলকাতা, 6 এপ্রিল: 2021 সালের মার্চ থেকে 2024 সালের মার্চ ৷ মাত্র তিন বছরেই সম্পর্কে ইতি সিপিএম-আইএসএফের। বর্তমান রাজ্য রাজনীতিতে 'হট কেক' ৷ কারণ রাজনীতির পাটিগণিতে নওশাদ সিদ্দিকীর আইএসএফ কত ভোট কাটবে ? সেটা একটা মোক্ষম প্রশ্ন৷ ৷ অন্যদিকে বামেদের সঙ্গে 'সমঝোতা'র বাইরে গিয়ে আদতে কার (তৃণমূল না বিজেপির) সুবিধা করে দিতে চাইছে তারা ? এখানে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির 'মিম'র প্রসঙ্গও উঠছে ৷ ফলে, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে না গিয়ে নওশাদের 'স্বতন্ত্র দল' হিসেবে লড়ার যুক্তিতে আইএসএফের নিচু তলার কর্মীরা কি একমত ? সেই প্রশ্নও থাকছে ৷ এই সবকিছুরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করল ইটিভি ভারত ৷

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার কথা সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন আইএসএফের নওশাদ ৷ পরে জানা যায়, আইএসএফ তাঁকে সেখানে প্রার্থী করতে চায় না ৷ এই বিষয়ে আইএসএফের বক্তব্য, "দলের মুখ তথা চেয়ারম্যানকে একটি আসনে আমরা সীমাবদ্ধ রাখা যায় না" ৷ যদিও ঘরোয়া বৈঠকে আইএসএফ নেতাদের দাবি, "ডায়মন্ড হারবারে তাঁদের সংগঠন নেই ৷ সেটা জেনেও কেন বামেদের কথায় নওশাদকে দাঁড় করানো হবে ? এ কারণেই তো বামেদের কাছে তাঁরা ডায়মন্ড হারবার দাবি করেননি ৷ তবে, মুখ রক্ষার্থে মজনু লস্করকে সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে ৷" এদিকে শনিবারই মথুরাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেছে সিপিএম। পেশায় চিকিৎসক শরৎ চন্দ্র হালদারকে এখান থেকে প্রার্থী করা হয়েছে।

বাম-কংগ্রেস সমঝোতায় গেল না কেন আইএসএফ ?

নওশাদদের যুক্তি, "যাদবপুর-শ্রীরামপুর-মুর্শিদাবাদ, বারাসাত, বসিরহাটের মতো আসনে আইএসএফ সংগঠন শক্তিশালী থাকলেও, বামেরা আসন ছাড়েনি ৷" এদিকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর দাবি, "আইএসএফের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে ৷ আবার একাধিক বার আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হয়েছে। কিন্তু তারা আসেনি ৷ প্রথমেই তারা অনেক আসনে প্রার্থী দেবে বলে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল ৷ ওরা চাইছিল 8টি আসন অর্থাৎ 56 টি বিধানসভা কেন্দ্র ৷ দেড় হাজার বুথ ম্যানেজ করতে হবে ৷ আলোচনা হয় ৷ তবে তারা যখন বুঝতে পারে ব্যাপক আসন হবে না, তখন তারা আসেনি ৷"

বামেদের সঙ্গে জোট ভাঙার দায় তাদের উপরেই চাপিয়েছে আইএসএফ ৷ এ প্রসঙ্গে প্রবীণ নেতা বিমান বসু বলেন, "কী করে বামেদের দায়িত্ব হয় ? এমনও হয়েছে আলোচনার সময় চারটে । ওরা এসেছে পাঁচটায় ৷ এই জোটের ব্যাপারে আন্তরিকতা ছিল কি না বুঝতে পারছি না ৷ বাস্তব ভিত্তি করে চলতে চাই ৷ তাই আমাদের সমস্যা ৷"

তবে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা না-হওয়ায় আইএসএফের বহু নিচুতলার কর্মী ক্ষুব্ধ ৷ এমনকী, বসিরহাট লোকসভায় আইএসএফ প্রার্থী মহম্মদ শহিদুল ইসলাম মোল্লা সরে দাঁড়ান ৷ তারপর ওই আসনে আক্তার আলী বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে আইএসএফ ৷ একইভাবে রাজ্যের সব সংখ্যালঘু এলাকায় যে আইএসএফ সমর্থক আছে, এমনটা নয় ৷

ফলে, এই একাধিক পাটিগণিতের হিসেবে শেষমেশ কত শতাংশ ভোট আইএসএফ পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ৷ এসবের মধ্যে আবার 'সামঝোতা' না-হওয়ায় বাম-কংগ্রেস 'মিম' যোগের অভিযোগ তুলেছে ৷ কারণ, উলুবেড়িয়ায় আইএসএফ প্রার্থী অধ্যাপক মফিকুল ইসলাম মিমের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে বিভিন্ন মহলের দাবি ৷ তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন ৷

বিমান বসু এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, "আমি শুনেছি। আপনারা খোঁজ নিন। আইএসএফের তালিকায় মিমের লোকজন আছে ৷" প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলছেন, "আইএসএফ নেতা নিজে লড়বেন বলেছিলেন ৷ এখন কেউ যদি পালাতে চান আমাদের কী করার আছে? এখন তো মনে হচ্ছে, হায়দরাবাদ থেকে ওয়াইসির (অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা তথা হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দীন ওয়াইসি) ছোট ভাই এসেছে ৷ আসলে ওয়াইসিকে বিজেপি যেমন কাজে লাগায়, এদেরও সেভাবেই ভোট কাটতে কাজে লাগাচ্ছে ৷"

তবে, সার্বিক ভাবে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী 'সমঝোতা' ঠিকঠাক না-হওয়ায় বিরোধী ঐক্যয় যে প্রভাব পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ কারণ, এই 'সমঝোতা'র অঙ্কে যেতে গিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সবথেকে বেশি সমালোচিত হচ্ছে ৷ বামফ্রন্টের নেতারা তো বটেই, সাধারণ মানুষ তথা ট্রেনে-বাসে-চায়ের আড্ডা থেকেও প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই বামেদের জোর থাকলে এতদিন ধরে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করত না !

তিন বছরের রাজনৈতিক দল আইএসএফ-কে এত তোল্লাই দেওয়ারই বা কী আছে! ঠিক একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএম রাজ্য কমিটির একাধিক নেতা । তাঁদের কেউ কেউ বলেন, "একজনের জন্যই এত টানাহ্যাঁচড়া হয়েছে ৷ নওশাদ যে থাকবেন না তা আগেই বোঝা গিয়েছিল ৷ তাহলে, কেন তিনদিনের পার্টিকে এত তোল্লাই ? নিজের আসনটিই সব ? নাকি পার্টি আগে ?" বাম শরিকদের অনেক নেতার মুখেও এই ধরনের কথা শোনা গিয়েছে ৷ তাঁরা এটাও বলছেন, ভালো হয়েছে, তিন বছরে মিটে গিয়েছে ৷ বিশেষ ক্ষতি হয়নি ৷ সাধারণ মানুষের বিবেচনায় এবার ভোট হবে ৷ বহু আসনে এখন হিসেব মেলানো কঠিন ৷"

যদিও শেষ প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময় বিমান বসু বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-তৃণমূলের যে বাইনারি পলিটিক্স চলছে সেখানে যারা তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী হয়ে লড়াই করতে চান তাঁদের একসঙ্গে করে লড়তে চেয়েছিলাম ৷ সে কাজ করতে অনেক সময় লেগেছে ৷ আমাদের ভাবনা অনুযায়ী সব কিছু হবে এমন তো আর হয় না ৷ এসইউসিআই আগে থেকেই জানিয়ে দেয় বামেদের সঙ্গে তারা থাকবে না ৷ পরে সিপিআইএমএলের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানায়, আসন সমঝোতা করার বিষয়ে তারা নেই ৷

আরও পড়ুন:

  1. ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে বাম ছাত্রনেতা প্রতীক উর, ব্যারাকপুরে দেবদূত
  2. জলপাইগুড়িতে কি আবার ফুটবে পদ্ম, নাকি ফিরবে ঘাসফুলের আধিপত্য !

ABOUT THE AUTHOR

...view details