মেদিনীপুর, 10 ফেব্রুয়ারি: ভূমি দফতরের সহযোগিতায় রাতারাতি চার্চের জমি দখলের অভিযোগ উঠল মেদিনীপুর শহরে । তা-ও আবার ব্যাপটিস্ট চার্চের ছ'একর জমি দখলের অভিযোগ ৷ এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দ্বারস্থ হতে চলেছে চার্চ কর্তৃপক্ষ । এমনটাই জানিয়েছেন মেদিনীপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের সম্পাদক পীযূষকান্তি ঘোষ ৷
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেদিনীপুর শহর ও সিপাই বাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রায় 11 একর জায়গা রয়েছে ব্যাপটিস্ট চার্চের নামে । এই 11 একর জায়গার মধ্যে কিছু জায়গা ঘিরে তৈরি হয়েছে চার্চ এবং বাকি জায়গা ঘিরে পুরানো আমলের বাড়ি ঘর রয়েছে ৷ এটি সংখ্যালঘু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষজনের জায়গা । কিন্তু, এই চার্চের লোকজনের অভিযোগ, রাতারাতি তাঁদের সেই জায়গা বেশ কিছু দুষ্কৃতী ভূমি দফতরের সহযোগিতায় বিক্রি করে দিয়েছে প্রোমোটারদের । রেকর্ডের পাশাপাশি ডিড হয়ে গিয়েছে সেই জায়গার বলেও অভিযোগ । আর সেই জায়গা কীভাবে বিক্রি হল, তা নিয়েই সোচ্চার হয়েছে চার্চ কর্তৃপক্ষ ।
চার্চ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দেবত্ব সম্পত্তি বা এই সংখ্যালঘুদের জায়গা কোনভাবেই বিক্রি করা যায় না । তা সত্বেও ভূমি দফতরের লোকজন কীভাবে রেকর্ড করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । এরই পাশাপাশি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষজনের দাবি, দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে এসে হুমকি মারধর সেইসঙ্গে তাদের টাঙানো ফ্লেক্স ছিঁড়ে ফেলে দেয় । এই ঘটনায় তাঁরা আতঙ্ক প্রকাশ করেন ৷ ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মেদিনীপুর শহরে ।
যদিও এই ঘটনায় মাদ্রাসা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় চার্চ কর্তৃপক্ষ ৷ আদালত রায় দেয়, এই ব্যাপটিস্ট চার্চের জায়গা কোনভাবেই বিক্রি করা যাবে না । তারপরেও কিভাবে রাতারাতি এই জাগয়া রেকর্ড হয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । তাই এই নিয়ে এই সম্প্রদায়ের মানুষজন পুলিশ, জেলাশাসক, ভূমি দফতরের পাশাপাশি এবার দ্বারস্থ হতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ।
তাঁদের একটাই দাবি, সংখ্যালঘু মানুষের জায়গা যাতে প্রোমোটার বা কোন অসাধু ব্যক্তিদের হাতে না চলে যায় তার দেখভাল করতে হবে । এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে তারই যাবতীয় তথ্য তুলে দেন এই চার্চের মানুষজন । এই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চার্চের সম্পাদক পীযূষকান্তি ঘোষ, সভাপতি মনোজ্যোতি ভকত, কোষাধ্যক্ষ রঞ্জয় ডেভিড মণ্ডল, সদস্য তুহিনকুমার দে ও মনিরাজ সিং-সহ অন্যান্যরা ।
এ বিষয়ে চার্চের সম্পাদক পীযূষকান্তি ঘোষ বলেন, "আমরা অবাক চোখে দেখলাম আমাদের সংখ্যালঘুদের জমিও রাতারাতি প্রোমোটারদের দখলে চলে গেল । কিছু দুষ্কৃতী রাতের অন্ধকারে আমাদের হুমকি দিচ্ছে । আমরা আমাদের এই সম্পত্তি নিয়ে কোর্টের রায়ও পেয়েছি । যে রায়ে কোর্ট বলেছে এই সম্পত্তি আমাদের । তারপরও কিভাবে এই সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায়, রাতারাতি রেকর্ড হয়ে যায়, তা আমাদের জানা নেই । আমরা আতঙ্কিত, ভীত এবং আমরা চাইছি পুলিশ প্রশাসন সেই সঙ্গে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের বিষয়টা দেখুন । আমরা আমাদের জমিতে কোনোভাবেই প্রোমোটারি রাজ করতে দেব না ।"
খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মানুষের একান্তই বক্তব্য, এই জমি যাতে কোনভাবে কোন প্রোমোটাররাজরা দখল করতে না পারে তার জন্য তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন ।