কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: কলকাতার নতুন নগরপাল 1998 ব্যাচের আইপিএস মনোজ কুমার ভার্মা ৷ একদিকে আরজি কর-কাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশের নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে, অন্যদিকে সামনেই পুজো আসছে, এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের নেতৃত্ব তাঁর হাতে তুলে দিল রাজ্য সরকার ৷ ফলে তিনি যে এক কঠিন পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের ‘ক্যাপ্টেন্সি’ পেলেন, তা বলাই বাহুল্য ৷
যদিও এমন কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে মনোজ ভার্মার ৷ পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক জেলায় যখন মাওবাদীদের দাপট চরমে, সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি ৷ পরে অবশ্য তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৷ রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরের বিরাগভাজন হওয়ার জেরেই তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায় ৷
পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার জেরে তাঁকে কাউন্টার ইন্টার্জেন্সি ফোর্সের স্পেশাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ তাঁর নেতৃত্বেই শুরু হয় অপারেশন গ্রিনহান্ট ৷ ওই অপারেশনেই মাওবাদী নেতা-নেত্রীরা একে একে আত্মসমর্পণ শুরু করেন ৷ ধীরে ধীরে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতিতে ইতিবাচক বদল হতে শুরু করে ৷ সরকারের পক্ষেও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে উন্নয়নের কাজ করা অনেক সহজ হয় ৷
এর পর ডিআইজি পদে উন্নীত হন মনোজ ভার্মা৷ পরে তাঁকে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার করা হয় ৷ শিলিগুড়িতে ট্রাফিক সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করছিল ৷ সেই কারণেই তাঁকে পাঠানো হয় ৷ কারণ, কলকাতার ডিসি (ট্রাফিক) হিসেবে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল ৷ সেই সমস্যাও তিনি সামলে দিয়েছিলেন ৷
শুধু মাওবাদী সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া বা ট্রাফিক সমস্যার সমাধানই নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর দক্ষতা কতটা, তার পরিচয় ইতিপূর্বে দিয়েছেন মনোজ ভার্মা ৷ তাঁকে একসময় ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ ওই কমিশনারেটের মধ্যেই পড়ছে ভাটপাড়া ৷ সেখান থেকে নেতা হওয়া অর্জুন সিং তখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷ গেরুয়া শিবিরের সাংসদ হিসেবে অর্জুনের দাপট সেই সময় অব্যাহত শিল্পাঞ্চলে ৷
কিন্তু সেই সময় নিত্যদিন অশান্তি লেগে থাকত ভাটপাড়া এলাকায় ৷ মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতো ৷ তখন মনোজ ভার্মাকে প্রায় সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যেত ৷ একদিন তো তিনি মাঝরাস্তায় তাড়া করেছিলেন অর্জুন সিংকে ৷ এমন দৃশ্য বাংলায় আগে কখনও চোখে পড়েনি ৷ এমনকী, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিজেই শূন্যে গুলি চালাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷
ব্যারাকপুর শান্ত হওয়ার পর তাঁকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)-র পদে বসায় সরকার ৷ এতদিন তিনি সেখানেই ছিলেন ৷ মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে তিনিই কলকাতা পুলিশের ‘অধিনায়ক’ ৷ আরজি কর-কাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশ সম্পর্কে জনমানসে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, সেটা কি পেশাদারি দক্ষতা দিয়ে সামলাতে পারবেন মনোজ ভার্মা ! উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে ৷