ETV Bharat / opinion

প্রতিরক্ষা বাজেট 2025: উন্নতির সুযোগ আছে ? - DEFENCE BUDGET 2025

প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ন্যূনতম 2.5 শতাংশে উন্নীত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন ।

ETV BHARAT
নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে 76তম সাধারণতন্ত্র দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ (চিত্র: এএনআই)
author img

By Major General Harsha Kakar

Published : Feb 3, 2025, 5:31 PM IST

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন 2025-26 অর্থবর্ষের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিরক্ষা খাতে 6,81,210 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । এটি আগের বছরের তুলনায় 9.53 শতাংশ বেশি । প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বাজেটের প্রশংসা করে বলেছে, 'এই বরাদ্দ আসন্ন অর্থবর্ষে পরিকল্পিত বড় অধিগ্রহণে সুবিধে দেবে এবং যৌথ ও একত্রিত হওয়ার উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে ।' তারা আরও বলেছে যে, 'প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে মূলধন বিনিয়োগ জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বহুমুখী প্রভাব ফেলে, যা জিডিপি বৃদ্ধি করবে এবং এই দেশের যুবকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে ।'

প্রতিরক্ষা বরাদ্দ কেন্দ্রীয় বাজেটের 13.45% এবং এটি সমস্ত মন্ত্রকের মধ্যে সর্বোচ্চ । প্রতিরক্ষা বাজেট গত পাঁচ বছর ধরে 14%-এর নীচে রয়ে গিয়েছে । এটি জিডিপির 1.91% । এমনকি এই শতাংশও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, তবে অর্থনীতি এবং বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে । 2020-21 সালে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল জিডিপির 2.4%, 2022-23 সালে ছিল জিডিপির 2.1%, গত বছর এই বরাদ্দ ছিল জিডিপির 1.98% এবং এবার তা 1.91%। যদিও সামগ্রিক বরাদ্দ 9.53% বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে জিডিপির তুলনায় তা 0.07% হ্রাস পেয়েছে ।

ETV BHARAT
নির্মলা সীতারমনের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ (ছবি: পিটিআই)

2020 সালের জুনে গলওয়ানের ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে 2020-21 সালে জিডিপির শতাংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল । তবে বছরের পর বছর ধরে, এই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে ৷ যার অর্থ, সরকার শুধু কোনও সংকটের সময় কাজ করে । সশস্ত্র বাহিনীর ক্রমাগত চাহিদা কমপক্ষে 2.5-3%, তবে এটি একটি স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলছেন যে, ন্যাটো সদস্যরা প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাদের জিডিপির 5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করবে, যদিও বেশিরভাগ দেশ এখনও তার পূর্ববর্তী 2% চাহিদা স্পর্শ করতে পারেনি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির প্রায় 3.5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, যা ভারতের থেকে অনেক বেশি, যেখানে চিন 'আনুষ্ঠানিকভাবে' তার জিডিপির 1.8% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে । চিনের জিডিপি ভারতের পাঁচ গুণ । চিনা পরিসংখ্যানে যা অনুপস্থিত তা হল, বেসামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিতে দ্বৈত ব্যবহারের বিনিয়োগ এবং কৌশলগত পরিকাঠামো তৈরি । এসআইপিআরআই (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এর পরিসংখ্যান, বিশ্বব্যাপী গড় হল জিডিপির প্রায় 1.8%।

কোনও সন্দেহ নেই যে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু হুমকি রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বব্যাপী সামরিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে চায় এবং চিন সামরিক সক্ষমতা ও তাইওয়ান পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে, আবার ভারতের সামাজিক এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চাহিদা বেশি । একইসঙ্গে, একটি দেশ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে সুরক্ষিত না-হলে, তারা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে না । এই চাহিদাগুলির ভারসাম্য বজায় রাখা সরকারের কাজ । তবে, প্রতিরক্ষা ব্যয় কম থাকলে তা বর্ধিত হুমকিগুলির পথ সুগম করে কারণ সেই হুমকি মোকাবিলার ক্ষমতা সে দেশের তখন থাকে না ৷

ETV BHARAT
2025 সালে কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে সংসদ ভবনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন রাজনাথ সিং (চিত্র: এএনআই)

প্রতিরক্ষা মূলধন বাজেট 1,85,000 কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মোট প্রতিরক্ষা বরাদ্দের 27%। এর থেকে, সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় 1,50,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মধ্যে, বিমান এবং বিমান ইঞ্জিন ক্রয়ের জন্য 48,614 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে নৌ-শক্তি বৃদ্ধির জন্য 24,390 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য 63,099 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।

এছাড়াও, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সীমান্ত পরিকাঠামোগত সম্পদ নির্মাণের জন্য 31,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যা অজানা রয়ে গিয়েছে তা হল, পূর্ববর্তী ক্রয় থেকে সংগৃহীত বাহিনীর অমীমাংসিত দায় । এই সংখ্যাটি সরিয়ে ফেলা হলে আধুনিকীকরণের জন্য প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে । আধুনিকীকরণের জন্য 27% বরাদ্দ বেশ কম ।

ETV BHARAT
নয়াদিল্লির কারিয়াপ্পা প্যারেড গ্রাউন্ডে বার্ষিক এনসিসি পিএম সমাবেশে অভিবাদন গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর (ছবি: পিটিআই)

এমনও রিপোর্টও রয়েছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পূর্ববর্তী বছরের বরাদ্দ করা মূলধন বাজেটের থেকে 12,500 কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে, কারণ সেই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারেনি । এটি দুটি দিক তুলে ধরে, প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় পদ্ধতি হল আদপে একটি প্রত্যাখ্যান পদ্ধতি । 'সংস্কারের বছরের' অংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত উপাদানগুলির পুনর্মূল্যায়ন এবং টাইম ফ্যাক্টর হ্রাস করার কথা ঘোষণা করেছে । আশা করা হচ্ছে যে, এটি বাস্তবায়িত হবে এবং পদ্ধতিগুলি সরলীকৃত ও দ্রুততর করা হবে ।

দ্বিতীয় দিক হল সরকারকে সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা বিবেচনা করতে হবে এবং একটি রোল-অন বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে । প্রতিরক্ষা ক্রয় ব্যবস্থা যদিও আংশিকভাবে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তবে তাতে প্রস্তাবের জন্য অনুরোধ, পরীক্ষা, মূল্যায়ন, তুলনা এবং অনুমোদন-সহ একাধিক পর্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকে । এতে সময় লাগে । যদি একটি রোল-অন বাজেট আনা হয়, তাহলে তহবিল ফিরিয়ে দেওয়া একটি বিরল ঘটনা হবে ।

এই বছরের বাজেটে বিভিন্ন বিভাগের অধীনে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে পূর্বে 6000-8000 কোটি টাকার পরিবর্তে 20,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । ডিআরডিও বাজেট প্রায় 12.5% বৃদ্ধি পেয়ে 26,816 কোটি টাকা হয়েছে, যেখানে বেসরকারি উদ্যোগের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি স্টার্ট-আপগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য আইডেক্স প্রকল্পটি 450 কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে ।

তবে, গবেষণা ও উন্নয়নে ভারতের সামগ্রিক বিনিয়োগ জিডিপির 1% এর নীচে রয়েছে এবং এর বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় সরকারের । তুলনা করা হলে দেখা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির 3.4% গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করে, যেখানে চিন 2.68% ব্যয় করে । প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল 12.4% বৃদ্ধি পেলেও, মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটের 13% এর তুলনায় তা 1% এরও কম রয়ে গিয়েছে । গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভারতীয় প্রযুক্তি এখনও অনেক পিছিয়ে থাকাটা কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয় । এই দিকটিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন ।

ETV BHARAT
ভারতীয় বাহিনীর মহড়া (চিত্র: এএনআই)

বেসরকারি ক্ষেত্র এবং সরকার যদি আরও বেশি বিনিয়োগ না করে, তাহলে ভারত সর্বদা পিছিয়ে থাকবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বেসরকারি ক্ষেত্র 2022 সালে 693 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা সমস্ত গবেষণা ও উন্নয়নের 70% এরও বেশি । ভারতে পরিসংখ্যানটা খুবই নগণ্য । একইসঙ্গে, সরকার দেশীয় প্রতিরক্ষা ক্রয় বৃদ্ধি করেছে । এই বছর ক্রয় বাজেটের 75% দেশীয় উৎস থেকে এবং এর মধ্যে 25% বেসরকারি খাত থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে । আশা করা হচ্ছে, এটি বেসরকারি খাতকে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে ।

মোট বাজেটের 68.5% রাজস্ব ব্যয়, বেতন, পেনশন এবং বিদ্যমান বাহিনী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দটা ভালোই বেশি । বছরের পর বছর ধরে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাজেটকে ভুল পথে চালিত করছে । যতক্ষণ পর্যন্ত এই পরিমাণ বেশি থাকবে, আধুনিকীকরণের জন্য তহবিল সর্বদা হ্রাস পাবে, যদিও সামগ্রিকভাবে বাজেট চিত্তাকর্ষক বলে মনে হবে ।

ETV BHARAT
26 জানুয়ারি, 2025-এ নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ (ছবি: পিটিআই)

সমাজের সকল অংশ দেশের বার্ষিক বাজেট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবে যে, এতে তাদের জন্য কী রয়েছে । একটি সফল বাজেটের সূচক স্টক মার্কেট থেকে আসে । প্রতিরক্ষা হল এর একটি অংশ । প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলির মূল্য হ্রাস করে স্টক মার্কেট বাজেটের প্রতিরক্ষা অংশ সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে ।

একটি সত্য যা সাধারণত উপেক্ষা করা হয় তা হল, প্রতিরক্ষা বাজেটের বেশিরভাগ অংশ, যেমন সম্পূর্ণ রাজস্ব এবং মূলধনের একটি বড় অংশ দেশের মধ্যেই ব্যয় করা হয় অর্থাৎ অর্থনীতিতে ফিরে যায়, যেখানে আগে প্রায় সমস্ত ক্রয়ই বিদেশ থেকে করা হত ।

তবে প্রতিরক্ষা ক্রয় কখনওই আচমকা হয় না এবং তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন । মূলধনের অংশ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ন্যূনতম 2.5% বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষার জন্য রোল-অন বাজেটের দাবি গ্রহণ করার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার ।

(ডিসক্লেইমার: এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারতের মতামতকে প্রতিফলিত করে না )

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন 2025-26 অর্থবর্ষের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিরক্ষা খাতে 6,81,210 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । এটি আগের বছরের তুলনায় 9.53 শতাংশ বেশি । প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বাজেটের প্রশংসা করে বলেছে, 'এই বরাদ্দ আসন্ন অর্থবর্ষে পরিকল্পিত বড় অধিগ্রহণে সুবিধে দেবে এবং যৌথ ও একত্রিত হওয়ার উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে ।' তারা আরও বলেছে যে, 'প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে মূলধন বিনিয়োগ জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বহুমুখী প্রভাব ফেলে, যা জিডিপি বৃদ্ধি করবে এবং এই দেশের যুবকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে ।'

প্রতিরক্ষা বরাদ্দ কেন্দ্রীয় বাজেটের 13.45% এবং এটি সমস্ত মন্ত্রকের মধ্যে সর্বোচ্চ । প্রতিরক্ষা বাজেট গত পাঁচ বছর ধরে 14%-এর নীচে রয়ে গিয়েছে । এটি জিডিপির 1.91% । এমনকি এই শতাংশও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, তবে অর্থনীতি এবং বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে । 2020-21 সালে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল জিডিপির 2.4%, 2022-23 সালে ছিল জিডিপির 2.1%, গত বছর এই বরাদ্দ ছিল জিডিপির 1.98% এবং এবার তা 1.91%। যদিও সামগ্রিক বরাদ্দ 9.53% বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে জিডিপির তুলনায় তা 0.07% হ্রাস পেয়েছে ।

ETV BHARAT
নির্মলা সীতারমনের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ (ছবি: পিটিআই)

2020 সালের জুনে গলওয়ানের ঘটনা ঘটেছিল, যার ফলে 2020-21 সালে জিডিপির শতাংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল । তবে বছরের পর বছর ধরে, এই শতাংশ হ্রাস পেয়েছে ৷ যার অর্থ, সরকার শুধু কোনও সংকটের সময় কাজ করে । সশস্ত্র বাহিনীর ক্রমাগত চাহিদা কমপক্ষে 2.5-3%, তবে এটি একটি স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলছেন যে, ন্যাটো সদস্যরা প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাদের জিডিপির 5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করবে, যদিও বেশিরভাগ দেশ এখনও তার পূর্ববর্তী 2% চাহিদা স্পর্শ করতে পারেনি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির প্রায় 3.5% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, যা ভারতের থেকে অনেক বেশি, যেখানে চিন 'আনুষ্ঠানিকভাবে' তার জিডিপির 1.8% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে । চিনের জিডিপি ভারতের পাঁচ গুণ । চিনা পরিসংখ্যানে যা অনুপস্থিত তা হল, বেসামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিতে দ্বৈত ব্যবহারের বিনিয়োগ এবং কৌশলগত পরিকাঠামো তৈরি । এসআইপিআরআই (স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এর পরিসংখ্যান, বিশ্বব্যাপী গড় হল জিডিপির প্রায় 1.8%।

কোনও সন্দেহ নেই যে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব কিছু হুমকি রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বব্যাপী সামরিক অগ্রাধিকার বজায় রাখতে চায় এবং চিন সামরিক সক্ষমতা ও তাইওয়ান পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে, আবার ভারতের সামাজিক এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চাহিদা বেশি । একইসঙ্গে, একটি দেশ অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে সুরক্ষিত না-হলে, তারা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে না । এই চাহিদাগুলির ভারসাম্য বজায় রাখা সরকারের কাজ । তবে, প্রতিরক্ষা ব্যয় কম থাকলে তা বর্ধিত হুমকিগুলির পথ সুগম করে কারণ সেই হুমকি মোকাবিলার ক্ষমতা সে দেশের তখন থাকে না ৷

ETV BHARAT
2025 সালে কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে সংসদ ভবনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন রাজনাথ সিং (চিত্র: এএনআই)

প্রতিরক্ষা মূলধন বাজেট 1,85,000 কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মোট প্রতিরক্ষা বরাদ্দের 27%। এর থেকে, সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় 1,50,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মধ্যে, বিমান এবং বিমান ইঞ্জিন ক্রয়ের জন্য 48,614 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে নৌ-শক্তি বৃদ্ধির জন্য 24,390 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য 63,099 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।

এছাড়াও, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সীমান্ত পরিকাঠামোগত সম্পদ নির্মাণের জন্য 31,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যা অজানা রয়ে গিয়েছে তা হল, পূর্ববর্তী ক্রয় থেকে সংগৃহীত বাহিনীর অমীমাংসিত দায় । এই সংখ্যাটি সরিয়ে ফেলা হলে আধুনিকীকরণের জন্য প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে । আধুনিকীকরণের জন্য 27% বরাদ্দ বেশ কম ।

ETV BHARAT
নয়াদিল্লির কারিয়াপ্পা প্যারেড গ্রাউন্ডে বার্ষিক এনসিসি পিএম সমাবেশে অভিবাদন গ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর (ছবি: পিটিআই)

এমনও রিপোর্টও রয়েছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পূর্ববর্তী বছরের বরাদ্দ করা মূলধন বাজেটের থেকে 12,500 কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে, কারণ সেই টাকা তারা ব্যবহার করতে পারেনি । এটি দুটি দিক তুলে ধরে, প্রথমত, দীর্ঘমেয়াদী ক্রয় পদ্ধতি হল আদপে একটি প্রত্যাখ্যান পদ্ধতি । 'সংস্কারের বছরের' অংশ হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত উপাদানগুলির পুনর্মূল্যায়ন এবং টাইম ফ্যাক্টর হ্রাস করার কথা ঘোষণা করেছে । আশা করা হচ্ছে যে, এটি বাস্তবায়িত হবে এবং পদ্ধতিগুলি সরলীকৃত ও দ্রুততর করা হবে ।

দ্বিতীয় দিক হল সরকারকে সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা বিবেচনা করতে হবে এবং একটি রোল-অন বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে । প্রতিরক্ষা ক্রয় ব্যবস্থা যদিও আংশিকভাবে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, তবে তাতে প্রস্তাবের জন্য অনুরোধ, পরীক্ষা, মূল্যায়ন, তুলনা এবং অনুমোদন-সহ একাধিক পর্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকে । এতে সময় লাগে । যদি একটি রোল-অন বাজেট আনা হয়, তাহলে তহবিল ফিরিয়ে দেওয়া একটি বিরল ঘটনা হবে ।

এই বছরের বাজেটে বিভিন্ন বিভাগের অধীনে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকে পূর্বে 6000-8000 কোটি টাকার পরিবর্তে 20,000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । ডিআরডিও বাজেট প্রায় 12.5% বৃদ্ধি পেয়ে 26,816 কোটি টাকা হয়েছে, যেখানে বেসরকারি উদ্যোগের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি স্টার্ট-আপগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য আইডেক্স প্রকল্পটি 450 কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে ।

তবে, গবেষণা ও উন্নয়নে ভারতের সামগ্রিক বিনিয়োগ জিডিপির 1% এর নীচে রয়েছে এবং এর বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় সরকারের । তুলনা করা হলে দেখা যাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির 3.4% গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করে, যেখানে চিন 2.68% ব্যয় করে । প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল 12.4% বৃদ্ধি পেলেও, মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটের 13% এর তুলনায় তা 1% এরও কম রয়ে গিয়েছে । গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভারতীয় প্রযুক্তি এখনও অনেক পিছিয়ে থাকাটা কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয় । এই দিকটিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন ।

ETV BHARAT
ভারতীয় বাহিনীর মহড়া (চিত্র: এএনআই)

বেসরকারি ক্ষেত্র এবং সরকার যদি আরও বেশি বিনিয়োগ না করে, তাহলে ভারত সর্বদা পিছিয়ে থাকবে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বেসরকারি ক্ষেত্র 2022 সালে 693 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা সমস্ত গবেষণা ও উন্নয়নের 70% এরও বেশি । ভারতে পরিসংখ্যানটা খুবই নগণ্য । একইসঙ্গে, সরকার দেশীয় প্রতিরক্ষা ক্রয় বৃদ্ধি করেছে । এই বছর ক্রয় বাজেটের 75% দেশীয় উৎস থেকে এবং এর মধ্যে 25% বেসরকারি খাত থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে । আশা করা হচ্ছে, এটি বেসরকারি খাতকে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে ।

মোট বাজেটের 68.5% রাজস্ব ব্যয়, বেতন, পেনশন এবং বিদ্যমান বাহিনী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দটা ভালোই বেশি । বছরের পর বছর ধরে এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাজেটকে ভুল পথে চালিত করছে । যতক্ষণ পর্যন্ত এই পরিমাণ বেশি থাকবে, আধুনিকীকরণের জন্য তহবিল সর্বদা হ্রাস পাবে, যদিও সামগ্রিকভাবে বাজেট চিত্তাকর্ষক বলে মনে হবে ।

ETV BHARAT
26 জানুয়ারি, 2025-এ নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ (ছবি: পিটিআই)

সমাজের সকল অংশ দেশের বার্ষিক বাজেট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবে যে, এতে তাদের জন্য কী রয়েছে । একটি সফল বাজেটের সূচক স্টক মার্কেট থেকে আসে । প্রতিরক্ষা হল এর একটি অংশ । প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলির মূল্য হ্রাস করে স্টক মার্কেট বাজেটের প্রতিরক্ষা অংশ সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে ।

একটি সত্য যা সাধারণত উপেক্ষা করা হয় তা হল, প্রতিরক্ষা বাজেটের বেশিরভাগ অংশ, যেমন সম্পূর্ণ রাজস্ব এবং মূলধনের একটি বড় অংশ দেশের মধ্যেই ব্যয় করা হয় অর্থাৎ অর্থনীতিতে ফিরে যায়, যেখানে আগে প্রায় সমস্ত ক্রয়ই বিদেশ থেকে করা হত ।

তবে প্রতিরক্ষা ক্রয় কখনওই আচমকা হয় না এবং তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন । মূলধনের অংশ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ন্যূনতম 2.5% বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষার জন্য রোল-অন বাজেটের দাবি গ্রহণ করার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার ।

(ডিসক্লেইমার: এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারতের মতামতকে প্রতিফলিত করে না )

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.