কলকাতা, 11 জুন:মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভার মধ্যে পড়ে নন্দীগ্রাম বিধানসভা। এর মধ্যে দু'টি ব্লক রয়েছে- নন্দীগ্রাম 1 নম্বর ও নন্দীগ্রাম 2 নম্বর ব্লক। এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির কাছে তৃণমূল হেরেছে। কিন্তু তার থেকে লজ্জাজনক ফল করেছে বামেরা । 2024 লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কার্যত বামেদের 'লালদুর্গ' নন্দীগ্রাম ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। যদিও সিপিএমের বক্তব্য, "নন্দীগ্রামকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে সিপিএমকে দুর্বল করেছে তৃণমূল-বিজেপি।"
নন্দীগ্রাম ছাড়াও ময়না, মহিষাদলেও বহু বুথে বামেরা হয় শূন্য না-হয় 1-12টি ভোট পেয়েছে। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক, নন্দকুমার-সহ বিভিন্ন ব্লকের বহু বুথেই সিপিএম 2টি, 1টি, 4টি ভোট পেয়েছে। সব মিলিয়ে জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে 34 বছরের বাম সরকার পতনের অনেকে বড় ভূমিকা ছিল। যদিও তৎকালীন সময়ে নন্দীগ্রামলাগোয়া খেজুরিতে সিপিএমের বহু নেতা-কর্মীদের খুন হতে হয়েছিল। অনেকে আজও ঘরছাড়া বলে শোনা যায়। আজ 13 বছর সেখানে জমি পুনরুদ্ধার তো দূর, দাগ কাটার মতো ফল করতে পারল না বামেরা।
নন্দীগ্রামের সোনাচুড়া, ভেকুটিয়া, গোকুলনগর, হরিপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি ভালো ফল করেছে। এই সমস্ত এলাকা মূলত হিন্দু ধর্মের মানুষের বসবাস বেশি। প্রায় 60 শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। তৃণমূল পেয়েছে 38 শতাংশ। বাকি দুই শতাংশ বামেদের দিকে ঝুঁকেছে। একইভাবে ময়না, মহিষাদলেও বামেদের শোচনীয় অবস্থা। ময়না বিধানসভার 243 নম্বর বুথে সিপিএম শূন্য। মহিষাদলের কেশবপুর জলপাই এলাকার 72, 73, 74, 75, 76,77 বুথেও একই অবস্থা। ধুয়ে মুছে সাফ সিপিএম। সব মিলিয়ে তমলুক লোকসভায় সিপিএম প্রার্থী জামানত খুইয়ে 5.41 শতাংশ ভোট পেয়েছেন ৷
অথচ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হলদিয়া বিধানসভা থেকে বামেরা 19.8 শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তা কমে 7.93 শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কোলাঘাট বিধানসভাতে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে 17.8 শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু, লোকসভাতে তা নেমে 6.57 শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গোটা তমলুক লোকসভাতে পোস্টাল ব্যালটে মাত্র 615টি ভোট পেয়েছে সিপিএম, যা অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বামেদের। যদিও সিপিএম নেতৃত্বর বক্তব্য, তমলুক লোকসভাতে তৃণমূল-বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করেছে।
তবে দলের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। সিপিএম পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, "বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু'জনেই ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন মেদিনীপুরজুড়ে। শুধুমাত্র একটি ভোটে জেতার জন্য নয়, ভবিষ্যতের কথা না-ভেবে তাঁরা যা করছেন তা রাজ্যের সবার জন্য মারাত্মক। তবে, আমাদের ফলাফল নিয়ে দলের মধ্যেই বিস্তারিত পর্যালোচনা চলছে। আশা করি সমস্যার সমাধান ঘটবে।"