কোচবিহার, 24 জুলাই: একুশে জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাইকেলে, হেঁটে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ তৃণমূল যেখানে যেখানে পরাজিত হয়েছে, সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চাইবার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ওয়ার্ডে ঘুরে ক্ষমাই চাইলেন জনপ্রতিনিধিরা ৷
মমতার নির্দেশে সাইকেলে ও হেঁটে জনসংযোগে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা ৷ (ইটভি ভারত) মালদার পুরনো মালদা পুরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডে সেই ছবির দেখা মিলল ৷ সেখানে তৃণমূল কাউন্সিলর শত্রুঘ্ন সিংহ বর্মার হাতে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ৷ নত মস্তকে, কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সমস্যার কথা শুনলেন তিনি ৷ এমনকী ক্ষমাও চাইলেন ৷
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছিলেন, "গাড়িতে চড়ে ঘুরলে হবে না ৷ মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের কথা শুনতে হবে ৷ প্রয়োজনে সাইকেল চালান, হাঁটুন ৷"
বুধবার এসব দেখে প্রথমে রীতিমতো ভ্যাবাচাকা খেয়ে গিয়েছিলেন এলাকাবাসীরা ৷ কাউন্সিলরের বক্তব্য, "রাজ্যের 42টি আসনের দলীয় নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিদেরই মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী ৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনে আমরা ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির কাছে পরাজিত হয়েছি ৷ নেত্রীর নির্দেশ মেনে, আজ শুদ্ধিকরণের জন্য ওয়ার্ডে বাড়ি-বাড়ি ঘুরেছি ৷ নিজের যে কোনও ভুলের জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি ৷ এখানে উন্নয়নের কোনও অভাব ছিল না ৷ আগামীতেও থাকবে না ৷ কারণ, আমাদের দল, আমাদের নেত্রী উন্নয়নের কথা বলেন ৷"
অন্যদিকে কোচবিহারের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতীম রায় তাঁর স্থানীয় পঞ্চায়েত এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার ও স্কুলগুলিতে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘুরলেন ৷ তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশ মেনে সাইকেল চালিয়ে জনসংযোগ করলেন তিনি ৷ শুধু কোচবিহার নয়, পুরনো মালদা পুরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে কাউন্সিলরকে দেখা গেল, লোকের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সমস্যার কথা শুনতে ৷
এনিয়ে পার্থপ্রতীমের বার্তা, "আমাদের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সাইকেল নিয়ে কিংবা হেঁটে মানুষের কাছে যেতে হবে ৷ তাদের সঙ্গে জনসংযোগ করতে হবে ৷ সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে ৷ তাঁর এই বার্তাকে মান্যতা দিয়েই এদিন টাকাগাছে এসেছি ৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি ৷ কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছি ৷" পার্থপ্রতীম জানান, সপ্তাহে দু’দিন হলেও এভাবে গ্রামে সাইকেল নিয়ে ঘুরে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন ৷
উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার ও মালদা জেলার দু’রকম গুরুত্ব ছিল ৷ একদিকে, 2019 সালে হাতছাড়া হওয়া কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূল পুনর্দখল করেছে ৷ সেখানে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীকে হারিয়েছেন তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া ৷ যার জন্য একুশের মঞ্চ থেকে কোচবিহারবাসীকে ধন্যবাধ জানিয়েছিলেন মমতা ৷
আবার অন্যদিকে, মালদা জেলার দু’টি আসনের একটি বিজেপি ও অপরটি কংগ্রেস পেয়েছে ৷ যা নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোকে বলতে শোনা গিয়েছে, "মালদার মানুষ আজও তাঁর এবং তাঁর দলের উপর ক্ষুব্ধ ৷ তবে, 2026 সালে মালদা আম ও আমসত্ত্ব দু’টোই পাব, এটা আমার বিশ্বাস ৷" মমতার সেই বিশ্বাসকে বাস্তবে পরিণত করার কাজটা তাই শুরু করে দিলেন তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ৷