বারাসত, 19 জানুয়ারি: পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে গ্রেফতার বিজেপি নেতা । ধৃতের নাম ইন্দ্রজিৎ দে । বিগত পুর নির্বাচনে বারাসত পুরসভার 27 নম্বর ওয়ার্ড থেকে গেরুয়া শিবিরের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি । পুলিশ সূত্রে খবর, সমীর দাসের মতো ধৃত ইন্দ্রজিৎ-ও ভুয়ো নথি তৈরি করে দিতেন বাংলাদেশিদের হয়ে । সমীরের মতো তিনিও এই জালিয়াতি চক্রের অন্যতম পাণ্ডা বলে অনুমান তদন্তকারীদের । রবিবার দুপুরে ওই বিজেপি নেতাকে বারাসতের আমতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ ।
ভুয়ো নথি জালিয়াতি চক্রে বিজেপি নেতার গ্রেফতারে কার্যত অস্বস্তিতে পদ্ম শিবির । অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে ওই নেতার সঙ্গে এক ফ্রেমে বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের ছবি ! যদিও, গ্রেফতার হতেই ওই নেতার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব ।
ইন্দ্রজিতের এতটাই প্রভাব ছিল যে পাসপোর্ট তৈরির জন্য জ্যোতির্ময়কে পুলিশ ভেরিফিকেশনে পর্যন্ত যেতে হয়নি বলে খবর । শুধু তিনিই নন, টাকার বিনিময়ে ধৃত বিজেপি নেতা আরও অনেকের পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছিল । আরও জানা গিয়েছে, ভুয়ো নথি তৈরির পাশাপাশি ইন্দ্রজিতের একটি ব্যান্ডও রয়েছে । বিভিন্ন বারে সেই ব্যান্ড চালাত সে । ধৃত বিজেপি নেতাকে জেরা করে এই চক্রের একেবারে শিঁকড়ে পৌঁছতে চাইছে তদন্তকারীরা ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে জাল পাসপোর্ট-কাণ্ডে বারাসতের বিভিন্ন জায়গা থেকে সমীর দাস-সহ তাঁর মোট 8 জন শাগরেদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । এর মধ্যে ধৃত রফিকুল ইসলাম, নুরুল হক, জ্যোতির্ময় দে ও বিবেক বেড়া বাংলাদেশের বাসিন্দা । ভুয়ো নথিপত্র বানিয়ে দিনের পর দিন এপার বাংলায় বসবাস করছিলেন এই চার বাংলাদেশি । সূত্র মারফত খবর, এর মধ্যে ধৃত জ্যোতির্ময়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জানতে পারে সে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে 2006 সালে এদেশে এসে বারাসতের মুখার্জিপাড়া এলাকার এক আত্মীয়র বাড়িতে থাকতে শুরু করে । এখানকার স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করত ৷ ধৃত সমীরের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজের ভোটার, আধার ও প্যান কার্ড বানিয়ে ফেলে । তারপরে নিজেকে পাকাপাকি ভারতীয় প্রমাণ করতে পাসপোর্ট তৈরির কাজে নেমে পড়ে । সেই কাজ করতে গিয়ে সমীরের মাধ্যমে স্থানীয় বিজেপি নেতা ইন্দ্রজিৎ দে-র সঙ্গে পরিচয় হয় তার । 2017 সালে এই ইন্দ্রজিতের মাধ্যমেই জ্যোতির্ময় 28 হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট তৈরি করেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ ।
এদিকে, পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেতা যে 2022-র পুর নির্বাচনে দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র । তিনি বলেন,"প্রার্থী হলেও পরবর্তীতে দলে সক্রিয় ছিল না । উনি অন্যায় কাজ করে থাকলে তার শাস্তি হবে । এই নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই । কিন্তু, এর মধ্যে শাসকদলের কোনও চক্রান্ত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত প্রশাসনের ।"