বর্ধমান, 24 জুলাই:ছাত্র আন্দোলন নিয়ে রণক্ষেত্র বাংলাদেশ । দেশ জুড়ে চলছে সেনা টহল, কার্ফু । বন্ধ দোকানপাট, অচল পরিবহণ ব্যবস্থা । বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা ৷ বাংলাদেশ থেকে ভারতে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার, দেবাশিস সরকার, দীপ্ত কুমার দে-সহ আরও অনেকে । একদিকে পরিবারের জন্য চিন্তা । পাশাপাশি তাঁদের সহপাঠীরা আজ বাংলাদেশের আন্দোলনে । কারও প্রাণ গিয়েছে । কেউ প্রাণ হাতে করে কোনওরকমে বেঁচেছেন । ফলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এলেও একটা অজানা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে এইসব পড়ুয়াদের মধ্যে ৷ এই পড়ুয়ারা সেই উৎকন্ঠার কথাই প্রিয়াঙ্কা, দেবাশিসরা শোনালেন ইটিভি ভারতকে ।
বাংলাদেশের রাজশাহী পাবনা জেলায় বাড়ি প্রিয়াঙ্কা সরকারের । পাবনা গভর্মেন্ট উইমেন্স কলেজে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত পড়ার পরে বর্ধমান সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে ইংরাজিতে স্নাতক পাশ করেছেন তিনি ৷ এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনে এমএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশে তাঁদের যৌথ পরিবার । বাবা, মা, কাকা, কাকিমা, ভাইবোন সকলেই বাড়িতে আছে । বেশ কয়েকদিন ধরেই বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তাঁর । 18 জুলাই বিকেলে শেষবার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রিয়াঙ্কার । তারপর থেকে না ফোনে, না মেসেজে কোনভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি পরিবারের সঙ্গে । ফলে পরিবারের জন্য চিন্তায় দিন কাটছে এই পড়ুয়ার ৷
প্রিয়াঙ্কা সরকার বলেন, "বাড়ির লোকের পাশাপাশি আমার সহপাঠীদের নিয়ে চিন্তা বাড়ছে । 18 জুলাই তারিখ রাত দেড়টা নাগাদ আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় । সে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । তাঁদের সেদিন রাত নটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয় । এদিকে গভীর রাত । ট্রান্সপোর্ট বন্ধ । একটা মেয়ে তখন কোথায় যাবে । অগত্যা কয়েকজন বন্ধু মিলে স্থানীয় এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা । শুধু ওই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আশেপাশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও হঠাৎ করে নোটিশ দিয়ে হস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে । এই ধরনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি । বাবার মুখে গল্প শুনেছি । আর এখন অনুভব করছি কত কঠিন পরিস্থিতি চলছে ।
তাঁর বক্তব্য, "বন্ধুদের এটাও পরামর্শ দিয়েছি, যদি বেশি টাকা দিয়েও কোন ভাড়া গাড়ি পাওয়া যায় তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পাবনা চলে আসতে । কিন্তু তাঁরা আসতে রাজি নয় । তাঁরা বলছে এই আন্দোলন তাদের সকলের আন্দোলন । ফেরার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না । তাই আন্দোলন ছেড়ে আসবে কী করে ! তাঁরা আন্দোলনে সামিল হচ্ছে । তারপর থেকে তাঁদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই । ফলে তাঁরা কেমন আছে তা নিয়ে একটা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে । আমি আমার বন্ধুকে অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেছি ফোনে পাওয়া যায়নি । একের পর এক ম্যাসেজ করে রেখেছি । সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ হয়নি । সে আমার সেই ছোট্টবেলার বন্ধু । জানি না আজ সে কী অবস্থায় আছে ।"