পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বন্ধুদের জন্য উৎকন্ঠায় এপারে দিন কাটছে ওপারের পড়ুয়াদের - Bangladeshi Students

Bangladeshi Students Worry about Friends: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে কারও বন্ধুর গিয়েছে প্রাণ ৷ কেউ আবার অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ৷ বর্ধমানে থাকলেও পরিবার ও বন্ধুদের জন্য আতঙ্ক কমছে না বাংলাদেশের পড়ুয়াদের ৷

Bangladeshi Students
পরিবার ও বন্ধুদের জন্য চিন্তায় বর্ধমানে পাঠরত বাংলাদেশের পড়ুয়ারা (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 24, 2024, 4:39 PM IST

বর্ধমান, 24 জুলাই:ছাত্র আন্দোলন নিয়ে রণক্ষেত্র বাংলাদেশ । দেশ জুড়ে চলছে সেনা টহল, কার্ফু । বন্ধ দোকানপাট, অচল পরিবহণ ব্যবস্থা । বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা ৷ বাংলাদেশ থেকে ভারতে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার, দেবাশিস সরকার, দীপ্ত কুমার দে-সহ আরও অনেকে । একদিকে পরিবারের জন্য চিন্তা । পাশাপাশি তাঁদের সহপাঠীরা আজ বাংলাদেশের আন্দোলনে । কারও প্রাণ গিয়েছে । কেউ প্রাণ হাতে করে কোনওরকমে বেঁচেছেন । ফলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এলেও একটা অজানা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে এইসব পড়ুয়াদের মধ্যে ৷ এই পড়ুয়ারা সেই উৎকন্ঠার কথাই প্রিয়াঙ্কা, দেবাশিসরা শোনালেন ইটিভি ভারতকে ।

বন্ধুদের জন্য উৎকন্ঠায় দিন কাটছে (ইটিভি ভারত)

বাংলাদেশের রাজশাহী পাবনা জেলায় বাড়ি প্রিয়াঙ্কা সরকারের । পাবনা গভর্মেন্ট উইমেন্স কলেজে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত পড়ার পরে বর্ধমান সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে ইংরাজিতে স্নাতক পাশ করেছেন তিনি ৷ এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনে এমএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ৷ তাঁর কথায়, বাংলাদেশে তাঁদের যৌথ পরিবার । বাবা, মা, কাকা, কাকিমা, ভাইবোন সকলেই বাড়িতে আছে । বেশ কয়েকদিন ধরেই বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তাঁর । 18 জুলাই বিকেলে শেষবার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রিয়াঙ্কার । তারপর থেকে না ফোনে, না মেসেজে কোনভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি পরিবারের সঙ্গে । ফলে পরিবারের জন্য চিন্তায় দিন কাটছে এই পড়ুয়ার ৷

প্রিয়াঙ্কা সরকার বলেন, "বাড়ির লোকের পাশাপাশি আমার সহপাঠীদের নিয়ে চিন্তা বাড়ছে । 18 জুলাই তারিখ রাত দেড়টা নাগাদ আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় । সে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । তাঁদের সেদিন রাত নটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয় । এদিকে গভীর রাত । ট্রান্সপোর্ট বন্ধ । একটা মেয়ে তখন কোথায় যাবে । অগত্যা কয়েকজন বন্ধু মিলে স্থানীয় এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা । শুধু ওই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আশেপাশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও হঠাৎ করে নোটিশ দিয়ে হস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে । এই ধরনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ইতিহাস বইতে পড়েছি । বাবার মুখে গল্প শুনেছি । আর এখন অনুভব করছি কত কঠিন পরিস্থিতি চলছে ।

তাঁর বক্তব্য, "বন্ধুদের এটাও পরামর্শ দিয়েছি, যদি বেশি টাকা দিয়েও কোন ভাড়া গাড়ি পাওয়া যায় তাহলে ময়মনসিংহ থেকে পাবনা চলে আসতে । কিন্তু তাঁরা আসতে রাজি নয় । তাঁরা বলছে এই আন্দোলন তাদের সকলের আন্দোলন । ফেরার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না । তাই আন্দোলন ছেড়ে আসবে কী করে ! তাঁরা আন্দোলনে সামিল হচ্ছে । তারপর থেকে তাঁদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ নেই । ফলে তাঁরা কেমন আছে তা নিয়ে একটা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে । আমি আমার বন্ধুকে অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেছি ফোনে পাওয়া যায়নি । একের পর এক ম্যাসেজ করে রেখেছি । সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ হয়নি । সে আমার সেই ছোট্টবেলার বন্ধু । জানি না আজ সে কী অবস্থায় আছে ।"

এরকম অনেক বন্ধুদের নিয়েই উৎকন্ঠায় দিন কাটছে প্রিয়াঙ্কার । তিনি বলেন, "মাঝে জানতে পেরেছি এক বন্ধু আন্দোলন করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে । সেলাই পড়েছে । চোট আশংকাজনক । সেই ছোট থেকে যাদের সঙ্গে বড়ো হয়েছি তাঁদের এই অবস্থা চলছে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছি না । সবসময় একটা উৎকন্ঠার মধ্যে আছি । আসলে বন্ধুদের নিয়ে ভয়টা বেশি । তাঁরা প্রকাশ্যে আন্দোলনের মধ্যে আছে । কখন কী ঘটে যায় জানি না । আজ তাঁরা জীবন হাতে করে বসে আছে । সরকার দেড়শো মৃতের সংখ্যা ঘোষণা করলেও সেটা প্রায় চারশো ছাড়িয়ে গেছে বলেই শুনেছি ।"

তাঁর সংযোজন, "আমার কাকার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছে । সেখানকার ভিডিয়োয় দেখছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট লক করা আছে । গেটের ভিতর দিয়ে পুলিশ বন্দুক ঢুকিয়ে গুলি চালাচ্ছে । আর আমি এখানে বসে বুঝতে পারছি না সে বাড়িতে ফিরেছে নাকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে আটকে আছে । এরকম যারা হস্টেলে আছে তাঁরাও নিরাপদে নেই । কাউকে কাউকে নাকি ছাদ থেকেও ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে ভিডিয়ো দেখেছি । যা দেখে শিউরে উঠেছি ।"

ইটিভি ভারতের মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা সরকার আবেদন করেন, "যেহেতু বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই । তাই সেখানকার কোন ভিডিয়ো এ দেশে আসা সম্ভব নয় । কিন্তু অনেকে এর সুযোগ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে । পুরোনো ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়িয়ে দিচ্ছে । ফলে এ দেশের লোকজন বাংলাদেশের উপরে রেগে যাচ্ছে । আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না যে এই সময় সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কেউ কিছু পাঠাতে পারছে না । আমরা তো স্বীকার করি বাংলাদেশের সমস্যায় ভারতকে পাশে দরকার । তাই আমি চাই দুটো দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরে আসুক ।"

বাংলাদেশের রংপুর কুড়িগ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস সরকার । বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া তিনি । ইটিভি ভারতকে এই এমএ-র পড়ুয়া বলেন, "পরিবারের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন যোগাযোগ নেই । ইন্টারনেট বন্ধ নেটওয়ার্ক সমস্যা সব কিছু মিলিয়ে যোগাযোগ বন্ধ । কিছুই জানি না কী চলছে সেখানে ৷ বাংলাদেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বন্ধু আছে । দিনকয়েক আগে যখন ঝামেলা শুরু হয়নি তখনই শুনেছি একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে । সেখানে কতজন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি । তবে তিন চারশোর কাছাকাছি বলে শুনেছি ।"

তাঁর কথায়, "প্রথমে আবু শাহিদ নামে যে ছাত্রটির মৃত্যু হয় তাঁকে চিনতাম । রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সে ইংরেজির ছাত্র ছিল । ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু দূরেই আমার বাড়ি । ওর ডিপার্টমেন্টের বেশ কিছু ছেলেও আমার বন্ধু । ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরও এক বন্ধু ফয়সাল আহমেদকে পুলিশ মারধর করে । সে আহত হয়েছে । বেশ কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে । সবাই কী অবস্থায় আছে জানি না । এদিকে বাংলাদেশে ব্যাংকিং পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক লেনদেন বন্ধ । ফলে সমস্যা বাড়ছে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details