পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

দার্জিলিংয়ের নামে হু হু করে বিকোচ্ছে নেপালি চা, রুখতে উদ্যোগী রাজ্য - TEA TESTING LABORATORIES

দুটি টি টেস্টিং ল্যাবরেটরির জন্য প্রায় 55 কোটি টাকা বরাদ্দ করছে রাজ্য সরকার ৷ একটি ল্যাবরেটরি হবে ভারত-নেপাল সীমান্তে ৷ আরেকটি পশ্চিমবঙ্গ-অসম সীমানায় হবে ।

Tea Testing Laboratories
দার্জিলিংয়ের নামে নেপালের চা বিক্রি রুখতে টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি খুলছে সরকার (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 24, 2024, 6:50 PM IST

দার্জিলিং, 24 ডিসেম্বর:দার্জিলিংয়ের চায়ের সুনাম জগৎ জোড়া ৷ সেটাই নষ্ট করার চেষ্টা চলছে ৷ তিস্তার জলের মতো হু হু করে ভারতে ঢুকে পড়ছে নেপালের চা । এর ফলে উদ্বিগ্ন চা শিল্পপতিরা । নেপালের চা যে দার্জিলিংয়ের চা'কে বদনাম করছে, সম্প্রতি পাহাড় সফরে গিয়ে সেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই এবার খোলা বাজারে বাইরের চা বিক্রি আটকাতে দুটো টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার ।

জিটিএ প্রধান অনিত থাপার উপস্থিতিতে চা উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । টি টেস্টিং ল্যাবরেটরির একটি তৈরি করা হবে ভারত-নেপাল সীমান্তে এবং আরেকটি হবে পশ্চিমবঙ্গ-অসম সীমানায় । যার জন্য প্রায় 55 কোটি টাকা বরাদ্দ করছে রাজ্য সরকার ।

দার্জিলিংয়ের নামে নেপালের চা বিক্রি আটকাতে তৎপর সরকার (ইটিভি ভারত)

দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ উঠছিল, দার্জিলিং চায়ের নামে রাজ্যের খোলা বাজার তো বটেই গোটা দেশ ও বিদেশেও বিক্রি করা হচ্ছে নেপালের চা । নেপালের চায়ের গুণগতমান পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা না থাকায়, এর মুনাফা সম্পূর্ণভাবে নেপাল লুট করছে বলে অভিযোগ । এতে একদিকে যেমন দার্জিলিং চায়ের নাম খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে রাজকোষেও এর প্রভাব পোহাতে হচ্ছে সরকারকে । তাই চা এবার কেন্দ্রীয় সরকারের ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার নির্ধারিত মানে পৌঁছচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করা হবে ।

নেপালের চা উৎপাদনে মূলত কীটনাশক ব্যবহার করা হয় । পাশাপাশি তার গুণগত মানও অনেক নিম্ন হয় । আর মুক্ত সীমান্ত হওয়ার কারণে কোনওরকম রাজস্ব ছাড়াই নেপাল থেকে চা ভারতে ঢুকে পড়ছে । নেপালের চায়ের দাম কম হওয়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ী মোটা লাভের আশায় নেপালের চা'কে দার্জিলিংয়ের চায়ের নামে বিক্রি করছেন ।

দার্জিলিংয়ের চা বাগান (নিজস্ব ছবি)

এই বিষয়ে কনফেডারেশন অফ স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর 40 কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে । গোটা দেশের মোট উৎপাদনের 35 শতাংশ চা দার্জিলিংয়ে উৎপাদন হয় । অথচ অর্গানিক এই চাকে নেপালের চা বদনাম করছে । 1 কোটি কেজি নেপালের চা ঢুকছে ভারতে ৷ কোনওরকম রাজস্ব ছাড়াই নেপালের চা ভারতে ঢুকে পড়ছে । তাই এবার অন্তত ল্যাবরেটরি হলে চায়ের গুণগত মান প্রকাশ্যে আসবে ।"

দার্জিলিংয়ের চা জগৎ বিখ্যাত (নিজস্ব ছবি)

মকাইবাড়ি টি এস্টেটের ম্যানেজার লাল্টু পুরকাইতের কথায়, "দার্জিলিংয়ের চায়ের নামে নেপালের চা বিক্রি হওয়ায় দার্জিলিংয়ের চা গরিমা হারাচ্ছে । রাজ্যে টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরি হলে দার্জিলিংয়ের 87টি চা বাগানেরই সুবিধা হবে ৷ যাতে নেপালের চা কোনওরকম ক্ষতি কর‍তে না পারে তাই টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি দরকার ।"

প্রসঙ্গত, নভেম্বর মাসে উত্তরবঙ্গ সফরে এসে দার্জিলিংয়ে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "আমি যখন বিদেশে গিয়েছিলাম, তখন দার্জিলিং চা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল । কিন্তু এখন দার্জিলিংয়ের চা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে । দার্জিলিংয়ের চাকে বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আমি সেটা কোনও জায়গায় হতে দেব না । তার জন্য পদক্ষেপ করা হবে ।" মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশের পরেই দুটো টি টেস্টিং ল্যাবরেটরি তৈরির উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার ৷

দার্জিলিংয়ে চায়ে মজে আট থেকে আশি (নিজস্ব ছবি)

উল্লেখ্য, দার্জিলিংয়ের চা এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা প্রতি কেজি দর পর্যন্ত বিক্রি হয় । সেখানে নেপালের চায়ের মান খারাপ হওয়ায় দেড়শো থেকে দুশো টাকা প্রতি কেজির বেশি দাম ওঠে না । নেপালে প্রতি বছর মোট 80 লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে । তার মধ্যে প্রায় 50 থেকে 55 লক্ষ কেজি ভারতে রফতানি হয় । অন্যদিকে, দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন প্রতি বছর 60 লক্ষ কেজি । নেপালের চা যাতে বিদেশে ও ভারতের খোলা বাজারে দ্রুত বিক্রি হয়, তার জন্যই অসাধু ব্যবসায়ীরা দার্জিলিংয়ের চায়ের নাম করে নেপালের চা বিক্রি করছে বলে অভিযোগ । রাজ্য সরকারের নয়া উদ্যোগে এই ব্যবসা বন্ধ হয় কি না সেটাই দেখার ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details