দুর্গাপুর, 23 ডিসেম্বর: বালি চুরি ঠেকাতে প্রায়ই প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে বারবার সতর্কবার্তা দেওয়া হয় ৷ সক্রিয় করা হয় পুলিশকে ৷ কিন্তু তার পরও বালি চুরিতে রাশ টানা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ ৷
এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় হতেই বালি চুরির কৌশলই বদলে ফেলা হচ্ছে ৷ যার জেরে চুরি ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের ৷ যদিও তাঁদের দাবি, কাউকেই রেয়াত করা হবে না ৷ নতুন কৌশলও বানচাল করে দেওয়া হবে ৷
পাচার রুখতে প্রশাসন সক্রিয় হতেই বদলে গেল বালি চুরির কৌশল ! (ইটিভি ভারত) উল্লেখ্য, একসময় অভিযোগ উঠত, পশ্চিম বর্ধমান জেলার অজয়, দামোদর-সহ ছোট নদ-নদীগুলোতে বালি চুরির ৷ যন্ত্র বসিয়ে ডাম্পার, লরি, ট্রেলারে বালি ভরাট করে নিয়ে যাওয়া হতো ৷ নদীবক্ষে পাথর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে ব্যাপকভাবে বালি চুরি হচ্ছিল । দুর্গাপুরের অন্ডালের রামপ্রসাদপুর, কুটীরডাঙা, মদনপুরে, দুর্গাপুরের ওয়ারিয়া, রাতুড়িয়া, শ্যামপুর, কাঁকসার বিভিন্ন এলাকায়, বুদবুদের বিভিন্ন এলাকায় দামোদর নদ থেকে ব্যাপক বালি চুরি হচ্ছিল ।
অন্যদিকে অজয় নদে আসানসোলের জামুড়িয়া, দুর্গাপুরের পাণ্ডবেশ্বরে, ফরিদপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বহু বালিঘাট তৈরি করে বালি মাফিয়াদের রমরমা কারবার চলছিল । বালি মাফিয়াদের লোভের প্রকোপে পড়ে ছোট ছোট নদ-নদীগুলিও । এরা টুমনি, গাড়ুই, কুনুর নদী থেকেও অবাধে বালি চুরি শুরু করে বলে অভিযোগ ।
তবে প্রশাসনের শীর্ষস্তরের নির্দেশের পর বালি চুরি রুখতে সক্রিয় হয় পুলিশ ও প্রশাসন ৷ তার পরই বালি চুরির কৌশল বদলে গেল । দুর্গাপুরের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের পরে এবার শহর দুর্গাপুরে দামোদরের বুক থেকে কিংবা দামোদরের সেচখাল থেকে বস্তায় করে বালি চুরি অবাধে চলছে বলে অভিযোগ ।
কীভাবে চলছে এই কাজ ?
অভিযোগ, স্থানীয়দের নিয়োগ করে এবার দুর্গাপুরে দামোদর নদের সেচ ক্যানেল থেকে চলছে দেদার বালি চুরি । আর সবটাই হচ্ছে দিনেদুপুরে । দুর্গাপুর ব্যারেজকে ঘিরে রয়েছে দামোদর নদ ৷ একপাশে দামোদর নদ আর অন্যপাশে বর্ধমান সেচ খাল, এই সেচ খালের জল পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান-সহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায় চাষের জলের কাজে ।
এখন জল কম বর্ধমান সেচ ক্যানেলে আর সেই সুযোগে সেচ ক্যানেলের মাঝেই দিনেদুপুরে বালি চোররা হাজির বালি কাটতে, বস্তা বস্তা বালি এরপর এক জায়গায় স্টক করে তা চড়া দরে পৌঁছে যাচ্ছে বাজারে সিন্ডিকেট সিস্টেমের মাধ্যমে, এমনটাই উঠছে অভিযোগ । দুর্গাপুর নগর নিগমের 41 নম্বর ওয়ার্ডের মহানন্দ কলোনিতে পৌঁছে গেলেই এই বস্তাবন্দী বালির খোঁজ মিলবে বলেও দাবি করছেন অনেকে ৷
সেচ খাল থেকে এভাবেই বালি পাচার চলছে বলে অভিযোগ৷ (নিজস্ব চিত্র) বেআইনি বালি চুরির ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দেড় থেকে দু’কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কোকওভেন থানা আর মাত্র হাফ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের হেড অফিস ৷ কিন্তু এই দুই সরকারি অফিসের কর্তাদের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে এই কাজ চলছে বলে অভিযোগ ৷
দুর্গাপুর সেচ দফতরের আধিকারিক সঞ্জয় মজুমদার অবশ্য জানাচ্ছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না ৷ পুলিশ তার নিজের মতো করে কাজ করুক । অন্যদিকে, দুর্গাপুর তিন নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি ভীম সেন মণ্ডলের বক্তব্য, প্রশাসন তাঁর নিজের মতো করে কাজ করুক ৷
তবে শাসক দলের মদতেই দুর্গাপুরের দামোদর নদের বর্ধমান সেচ ক্যানেল থেকে দিনেদুপুরে দেদার বালি চুরি হচ্ছে অভিযোগ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের । একই অভিযোগ ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরও ৷
এখন দেখার এই বালি চুরি বন্ধে পুলিশ-প্রশাসন কতটা সদর্থক ভূমিকা নেয় !