চন্দননগর, 2 ফেব্রুয়ারি: সরস্বতী বন্দনায় মেতে উঠেছে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সেই বন্দনায় স্কুলে সকলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারাও ৷
ভেদাভেদ ভুলে সকলেই ব্রতী বিদ্যাদেবীর আরাধনায় ৷ চন্দননগর দুর্গাচরণ রক্ষিত বঙ্গ বিদ্যালয়ে তেমনই ছবি ধরা পড়েছে ৷ সেই ছবিই তুলে ধরল ইটিভি ভারত।
ইতিহাসের পাতা থেকে ...
ইতিহাস বলে, চন্দননগরের বণিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল প্রতিপত্তি ছিল দুর্গাচরণ রক্ষিতের । তাঁরই হাত ধরে চন্দননগরে একাধিক উন্নয়নের কাজ হয় । 1885 সালে প্রতিষ্ঠা হয় চন্দননগর দুর্গাচরণ রক্ষিত বঙ্গ বিদ্যালয়ে । স্কুলে আগাগোড়াই সরস্বতী পুজোর চল ছিল । পুজো উপলক্ষে আলাদা অনুভূতি থাকে পড়ুয়াদের মধ্যে । ঠাকুর আনা থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত সকলেই কাজে ব্যস্ত থাকে ৷ এই পুজোকে কেন্দ্র করেই দেখা যায় সম্প্রীতির ছবি । এই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নূর আলম, নবমের আফরোজ আলি ও রাহুল দাস-সহ সমস্ত ছাত্ররা আলপনা দেওয়া থেকে ঘর সাজানো সবই করে ৷
বিদ্যায় ভেদাভেদ নেই, বলছে ছাত্ররা :
নূর আলম ও আফরোজ আলিদের কথায়, "স্কুল হল বিদ্যার জায়গা । এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই । আর এটা করা উচিতও নয় । আমরা হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সকলেই একসঙ্গে থাকি । আমরা যে পুজোটা করি সেটা বিদ্যার জন্য । পড়াশোনা যাতে ভালো হয় সেই জন্যই প্রার্থনা করা । আগেরবারও পুরো দায়িত্বই আমাদের উপর ছিল। একসঙ্গে ঠাকুর আনলাম ৷ ভিতরে আলপনা-সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সাজানো হল । বন্ধুদের সঙ্গে আমরা পুষ্পাঞ্জলিও দিই । প্রার্থনা করি যেন ভালো করে পড়াশোনা করতে পারি । আমরা সকলে মিলে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাহায্যে এই পুজো করি ৷ পুজো উপলক্ষে স্কুলে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন হয় ৷ মজা হয় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ।"
আরেক ছাত্র রাহুল দাস বলে, "শিক্ষার জন্য সবাই স্কুলে আসে । এখানে কোনও জাতি-ধর্ম বলে কিছু নেই । আমরা ক্লাস ওয়ান থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করি । সকলে মিলে সরস্বতী পুজোয় অংশগ্রহণ করি ৷ এ বছর আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা বলে ভাইদের সাহায্যের জন্য এসেছি ৷ গত বছরেও আমাদের স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে সরস্বতী পুজো করেছিল এই স্কুলেরই ছাত্র আরশাদ । এটাই আমাদের কাছে গর্ব ।"
প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য :
এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বিভাস কুমার মণ্ডল বলেন, "দুর্গাচরণ রক্ষিত বঙ্গ বিদ্যালয় 150 বছরের পুরনো ৷ এখানে আলাদা একটা ঐতিহ্য রয়েছে । প্রতিষ্ঠাতার নামেই এই স্কুল আর সেই ঐতিহ্য মেনেই সরস্বতী পুজো চলে আসছে। এই স্কুলে সমস্ত সম্প্রদায়ের ছাত্ররা এই পুজোয় অংশ নেয় । সকলেই জানে মা সরস্বতী বিদ্যার দেবী ৷ সেই বিদ্যার আরাধনা করার জন্যই হিন্দু মুসলিম একত্রিত হয়ে পুজো করে । সেই জন্যই আমাদের স্কুল বিবিধের মাঝে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দেয় ৷"
পাশে শিক্ষকরাও :
স্কুলের এক শিক্ষিকা ঊর্মি দাস বলেন, "আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ ৷ আমরা সকল ধর্মের ছাত্রদের শিক্ষা দিয়ে থাকি। সকলেই মানুষ । ছাত্রদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই । সরস্বতী পুজো উপলক্ষে সমস্ত ছাত্ররাই একসঙ্গে কাজ করছে । আমরা কেবলমাত্র সাহায্য করছি । আমাদের স্কুলের পুজোয় শেখ নূর আলম, আফরোজ আলি ও আনসার আলিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অংশ নেয় । পুজোটা যেহেতু তাদের জন্য তাই সকলেই অংশ নেয় ।"