কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর: বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার লালবাজার অভিযানে পা মিলিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ যাঁর পদত্যাগ চাইছেন, তাঁর হাতেই সেই নিয়ে ডেপুটেশন তুলে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা ৷ প্রায় 22 ঘণ্টা পর বিনীত গোয়েলের সাক্ষাৎ পেলেও সন্তুষ্ট নন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ কারণ, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি, আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে নিজের ভূমিকায় খুশি বলে জানিয়েছেন নগরপাল ৷ এমনকী পুজোর প্রসঙ্গ টেনে এবার আন্দোলনে ইতি টানার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি ৷
আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তে নিজের কাজে খুশি নগরপাল (ইটিভি ভারত) এ দিন প্রায় দেড় ঘণ্টা লালবাজারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের সঙ্গে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের 22 জনের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয় ৷ সেই বৈঠকেই উপস্থিত থাকা আন্দোলনকারীদের একজন লহরী সরকার ইটিভি ভারতকে বলেন, "বিনীত গোয়েল ওঁর নিজের কাজে খুশি ।’’ যদি বদলি করে দেওয়া হয়, সেই সিদ্ধান্তও মেনে নিতে নগরপাল প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন, এমনটাই দাবি লহরীর ৷
তাঁর অভিযোগ, ‘‘বরং উনি এই বিচারের দেরি হওয়ার পিছনে আমাদের দায়ী করছিলেন । আমরা আন্দোলন করছিলাম বলেই নাকি ওঁদের সমস্যা হচ্ছিল । ওঁর কথায় উনি স্বচ্ছ তদন্ত করেছেন । এমনকি আমাদের বৈঠকের মাঝে দু’বার পুজোর কথাও বলেন উনি । সামনে পুজো তাই আমাদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা বলছিলেন তিনি । এর প্রতিবাদ করেছি আমরা ।"
জুনিয়র চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযান (নিজস্ব চিত্র) শুধু লহরী নন, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফে লালবাজারে বৈঠকের পর যে সমাবেশ করা হয় ফিয়ার্স লেনে, সেখানেও একই দাবি করেন আরও এক চিকিৎসক ৷ তাঁর এই দাবি শুনে সেখানে উপস্থিত অন্য চিকিৎসকরা ‘শেম শেম’ স্লোগান দেন ৷
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গত 9 অগস্ট চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকেই আন্দোলন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷ মোট পাঁচ দফা দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা ৷ সেই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ ৷ সেই দাবিতেই সোমবার তাঁরা লালবাজার অভিযান করেন ৷
জুনিয়র চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযান (নিজস্ব চিত্র) কিন্তু ফিয়ার্স লেনে ব্যারিকেড তৈরি করে তাঁদের আটকে দেওয়া হয় ৷ আন্দোলনকারীরা সেখানেই বসে পড়েন ৷ তাঁরা বিনীত গোয়েলের সাক্ষাতের দাবি করেন ৷ সেই সাক্ষাতেই তাঁরা বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ সংক্রান্ত ডেপুটেশন দেবেন বলে জানান ৷ কিন্তু পুলিশের তরফে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয় আন্দোলনকারীদের ৷ কিন্তু তাঁরা নিজেদের দাবিতে অনড় ছিলেন ৷
সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত, রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর হয়ে যায় ৷ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন চলতে থাকে ৷ ফিয়ার্স লেনে বসেই কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে, বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা ৷ শেষে দুপুরের পর ব্যারিকেড খুলে দেয় পুলিশ ৷ ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় 22 ঘণ্টা ৷ মিছিল করে লালবাজার যান জুনিয়র চিকিৎসকরা ৷
জুনিয়র চিকিৎসকদের লালবাজার অভিযানে পুলিশি নিরাপত্তা (নিজস্ব চিত্র) তার পর তাঁদের 22 জনের প্রতিনিধি দল গিয়ে বৈঠক করে নগরপালের সঙ্গে ৷ বিনীত গোয়েলের হাতেই তাঁর পদত্যাগের দাবি সংক্রান্ত ডেপুটেশন তুলে দেওয়া হয় ৷ বেরিয়ে এসে আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরা অনড় থাকায় বিনীত গোয়েল শেষপর্যন্ত দেখা করতে বাধ্য হয়েছেন ৷ তাই নিজেদের দাবি আন্দোলনে এভাবেই তাঁরা আন্দোলনে অনড় থাকতে চান ৷