মালদা, 19 নভেম্বর: প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আগে একাধিকবার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল ৷ কিন্তু, কোনও অজানা কারণে পদক্ষেপ করেনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ৷ অভিযুক্ত সেই প্রধান শিক্ষিকার প্রয়োজন পড়েছিল ঋণের ৷ কিন্তু, তার জন্য সার্কেলের ইন্সপেক্টর অফ স্কুলসের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন ৷ অতীতের কথা চিন্তা করে ওই প্রধান শিক্ষিকাকে ঋণ গ্রহণের অনুমোদন দেননি এসআই ৷ তাই তাঁর সিল ও স্বাক্ষর জাল করে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঋণের আবেদন করেন প্রধান শিক্ষিকা ৷ বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় ৷
প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এসআই ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ৷ তবে এখনও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি ৷ গোটা ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছে মালদা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা মহলে ৷
অভিযুক্তের নাম সুলতানা খাতুন ৷ মানিকচক 1 নম্বর সার্কেলের অধীনস্থ মানিকচক ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তিনি ৷ বছর দু'য়েক আগে তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তির অভিযোগ উঠেছিল ৷ তারও আগে অভিযোগ উঠেছিল, টাকা না দেওয়ায় তিনি খুদে পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসতে দেননি ৷ অভিভাবকদের সভায় তাঁর উপস্থিতিতে তাঁর এক অনুগামী অন্যদের কাছে টাকা চান ৷ সেই ঘটনার ভিডিয়ো ক্লিপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের হলেও প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ কেন, কেউ জানে না ৷ তবে তাঁর সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের উপর মহলের যোগাযোগের কথা শিক্ষকদের মুখে মুখে ফেরে ৷
এহেন সুলতানার প্রয়োজন পড়েছিল গৃহঋণের ৷ তিনি মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ঋণের আবেদন জানান ৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, গৃহঋণ পেতে গেলে তাঁকে সার্কেলের এসআই-এর সিল ও স্বাক্ষর লাগবে ৷ সেইমতো তিনি এসআই-এর কাছে আবেদন জানান ৷ কিন্তু অতীতের কথা চিন্তা করে তাঁর গৃহঋণের আবেদন পত্রে সিল ও স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করেন এসআই সঞ্চয়িতা মণ্ডল ৷ এরপরেই সঞ্চয়িতাদেবীর সিল ও স্বাক্ষর জাল করে আবেদন পত্র ব্যাঙ্কে জমা দেন প্রধান শিক্ষিকা ৷ গত 12 নভেম্বর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে সেই খবর পেয়ে আকাশ থেকে পড়েন সঞ্চয়িতাদেবী ৷ 14 নভেম্বর তিনি সুলতানা খাতুনের বিরুদ্ধে মানিকচক থানায় এফআইআর করেন ৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানার বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে মানিকচক থানার পুলিশ ৷
প্রতিক্রিয়া পেতে একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন ৷ তবে সঞ্চয়িতাদেবী বলেন, "আমার সিল ও স্বাক্ষর জাল করার জন্য আমি প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ এর বেশি আমার পক্ষে আর কিছু বলা সম্ভব নয় ৷ যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে ৷"
এই ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি বাসন্তী বর্মনের প্রতিক্রিয়া, "ঘটনার কথা শুনেছি ৷ তবে এখনও পর্যন্ত আমার কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷" যদিও বাসন্তীদেবীর এই মন্তব্য অবাক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা মহলের একাংশকে ৷ তাঁদের বক্তব্য, যে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হল, পুলিশ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করল, সেই ঘটনা শিক্ষা সংসদের সভাপতি বিশদে জানেন না, এমনটা কী করে হতে পারে ?