মালদা, 2 নভেম্বর: জাতীয় সড়কের পাশের জঙ্গল থেকে ধড় ও মুণ্ডু আলাদাভাবে উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় নরবলির অভিযোগ উঠেছিল ৷ কিন্তু পুলিশি তদন্তে উঠে এল একেবার অন্য তথ্য ৷
পুলিশি তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা তথ্য উঠে এসেছে, তাতে নরবলির সম্ভাবনা খারিজ হয়ে গিয়েছে ৷ বরং দুর্ঘটনার তত্ত্বই সামনে আসছে ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্তকারীরা ৷
গাজোলে ধড়-মুণ্ডু আলাদাভাবে উদ্ধারের ঘটনার আসল কারণ জানালো পুলিশ (ইটিভি ভারত) শনিবার সন্ধ্য়ায় এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সম্ভব জৈন ৷ তাঁর কথাতেই বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে ৷ তিনি বলেন, ‘‘গতকাল (শুক্রবার) মুণ্ডু ও ধর উদ্ধারের খবর পেয়েই গাজোল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয় । ঘটনাস্থলের পাশ থেকে একটি গাড়ির যন্ত্রাংশও উদ্ধার হয় । সেই যন্ত্রাংশকে হাতিয়ার করে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামের ভিতর থেকে চারচাকার গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে । তার মালিককে থানায় ডেকে পাঠানো হয় । কথা বলা হয় গাড়ির চালকের সঙ্গেও । এরপরেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজোলের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে সৌম্যজিৎ সরকার (22), আশিস চৌধুরী (19) এবং আবদুল ফারুককে (28) গ্রেফতারও করা হয় । এই আবদুল ফারুকই গাড়িটির চালক ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সম্ভব জৈন আরও বলেন, ‘‘জেরায় তারা (ধৃতরা) জানিয়েছে, সেদিন তারা গাড়িতে চারজন ছিল । প্রত্যেকেই আকণ্ঠ মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিল । হঠাৎ গাড়ি এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মারে । অভিঘাতে তাঁর দেহ বনেটের উপর উঠে যায় । সামনের কাচ ভেঙে মাথা গাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় । তারা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে । রাস্তার পাশে একটি জঙ্গলে গাড়ি ঢুকে যায় । সেখানে তারা ওই ব্যক্তির দেহটি টেনে বাইরে বের করার চেষ্টা করতেই মুণ্ডুটি ধর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গাড়ির ভিতরে পড়ে যায় । এরপর তারা ধর ও মুণ্ডু সেখানে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় ।’’
তবে এখনই যে ধৃতদের কথায় বিশ্বাস করছে না পুলিশ, তা সম্ভব জৈনের বক্তব্য স্পষ্ট হয়েছে ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ডিএনএ ম্যাচের আবেদন জানিয়েছি । তবে কীভাবে ওই ব্যক্তির ধর ও মুণ্ডু আলাদা হল তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে । পুলিশের তরফে ফরেন্সিককেও খবর দেওয়া হয়েছে ।’’
এদিকে নিহতের পরিচয়ও জানতে পেরেছে পুলিশ ৷ নিহতের নাম কৃষ্টপদ রায় । বয়স 62 বছর । বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলবাড়ি অধিকারী পাড়ায় । তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন । 20 বছর ধরে বহরমপুরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল । তবে অর্থের অভাবে সম্প্রতি চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন পরিবারের লোকজন ।
নিহতের ভাই দয়ালু রায় বলেন, ‘‘দাদা কোনও কাজ করত না । ওর মাথাও সঠিক কাজ করত না । সারাদিন খাবার খেয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করত । বুধবার রাত একটা নাগাদ ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল । তারপর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না । আমার এক শ্যালক ওর ছবি দিয়ে ফেসবুকে নিখোঁজের পোস্ট করে । ওই ছবি দেখে পুলিশ ফোন করে আমাদের গোটা ঘটনা জানায় । তখনই আমরা জানতে পারি, গাজোলে ওর কাটা লাশ উদ্ধার হয়েছে । বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ওর শরীরে হাফ প্যান্ট, হাফ গেঞ্জি আর গামছা ছিল । আমরা আজ লাশ নিতে এসেছি ।’’
দয়ালু রায়ের সঙ্গে গাজোল থানায় উপস্থিত ছিলেন বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ধোলু অধিকারী ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এনিয়ে কিছুই বুঝতে পারছি না । প্রশাসনের তদন্তের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে । তাই এই ঘটনায় পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে না ।’’