কোচবিহার, 12 জুন:লোকসভানির্বাচনে হেরে গিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ৷ তারপরেই কোচবিহারে বিজেপি কর্মীদের দুর্বিসহ অবস্থা ৷ বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । বিশেষত নিশীথের অনুগামীদের উপরে এই হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ এই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের ফলে জেলায় ঘরছাড়া কয়েকশো বিজেপি কর্মী ৷ ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে তাঁদের ৷ অভিযোগ, দুঃসময়ে অনুগামীদের পাশে নেই নিশীথও । তিনি এখনও জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা উপভোগ করছেন ৷ এদিকে দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তা কোথায়, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে ৷
জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ শুরু হয় ৷ এরপরেও ঘর ছেড়ে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের কয়েকশো বিজেপি সমর্থক আশ্রয় নেন দলীয় অফিসে । তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় জেলা বিজেপির পক্ষ থেকেই । তবে কতদিন চলবে এভাবে ? তাই জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য তাঁরা ভিন রাজ্যের পথে হাঁটা দিচ্ছেন ৷ কবে আবার বাড়ি ফিরতে পারবেন, তা জানেন না কেউ ৷
2019 সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন ৷ এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে শেয়ানে শেয়ানে টক্কর চলে । অভিযোগ, এবারে নিশীথ হেরে যাওয়ার পর কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন দলীয় কর্মীরা । এবার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার কাছে 39 হাজার 250 ভোটে হেরে যান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক । এই অবস্থায় বিজেপির দখলে থাকা গ্রামপঞ্চায়েতগুলিতে তালা মারতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনহাটা ব্লকের এক বিজেপি কর্মী তথা নিশীথের অনুগামী বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের পর আমাদের বাড়িতে ফেরা দায় হয়ে গিয়েছে । প্রতিদিনই বাড়িতে আমাদের খোঁজে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন আসছেন । বাড়ি ফিরলেই মারধর করা হবে বলে জানানো হয়েছে । বর্তমানে আমি বাড়ি ছাড়া । আমি এই মুহূর্তে দক্ষিণ ভারতে কাজের সন্ধানে এসেছি । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাড়ি ফিরব । নিশীথ প্রামাণিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে । তিনি বলেছেন, আমাদের সাবধানে থাকতে ।"
দিনহাটার বেশ কিছু এলাকায় বিজেপি বুথ ও মণ্ডল সভাপতিরাও বাড়ি ছাড়া । তাঁদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । বিজেপির কোচবিহারের দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক তথা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ক্লাস্টার ইনচার্জ নিখিলরঞ্জন দে বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের পরেই জেলাজুড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । সন্ত্রাসের ফলে আমাদের দলীয় কর্মী সমর্থকদের একটা বড় অংশ বাড়িতে ঢুকতে পারছে না ।"
শুধু তাই নয়, তাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে । টোটো রিক্সা নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে । দোকান ঘর তালা মেরে দেওয়া হয়েছে । দোকান ঘর খুলতে চাইলে টোটো রিক্সা ফেরত চাইলে টাকা দাবি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন নিখিলরঞ্জন দে । তাঁর কথায়, "আমার বিধানসভাতেও প্রচুর মানুষ ঘর ছাড়া । তারা বাধ্য হয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা ফিরবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন । ইতিমধ্যেই আমরা এই নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি । দলীয় কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ফেরাতে পুলিশকে বলেছি । আগামী 15 তারিখ কোচবিহারে সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আসবেন । আমরা বিস্তারিতভাবে তাঁকে সব কিছু জানিয়েছি । জেলার বিভিন্ন এলাকার কর্মী সমর্থকরা সন্ত্রাসের ফলে প্রাণ বাঁচতে আমাদের দলীয় অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন ।"
এ দিকে এই ঘটনাটি নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক বলেন, "সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেই চলেছে এটা ঠিক । তবে এ বিষয়ে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্তারিত মন্তব্য করব ।" যদিও বিজেপির তোলা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক । তিনি বলেন "যে সকল বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে দুষ্কৃতীদের হামলা হয়েছে আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি ।" তিনি দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে বিজেপি থেকে দলে দলে নেতা কর্মী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা তৃণমূলে যোগদান করছেন ।