দার্জিলিং, 27 নভেম্বর: শীতের মরশুমে ঘুরতে যেতে কার না মন চায় ৷ আর পাহাড় বললেই তালিকার উপর দিকে অবশ্যই থাকে সান্দাকফুর নাম ৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 11 হাজার 950 ফুট উচ্চতায় দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ৷
এখান থেকে হাত বাড়ালেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ৷ চারিদিকে খেলে বেড়ায় মেঘেরা ৷ সাদা বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে পথঘাট ৷ সোনালি রোদ গায়ে মেখে সেজে ওঠে স্লিপিং বুদ্ধা ৷ সেই সান্দাকফুতে আর চাইলেই বেড়াতে যেতে পারবেন না ৷ মানতে হবে একাধিক নিয়ম ৷ দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা ৷
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালেই মিলবে সান্দাকফু যাওয়ার অনুমতি (ইটিভি ভারত) কবে থেকে চালু নয়া নিয়ম ?
সম্প্রতি সান্দাকফু ও উত্তর সিকিমে তুষারপাত হয়েছে । আর তুষারপাতের কারণে পাহাড়ে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে পর্যটকদের মধ্যে । নভেম্বরের শেষ থেকেই পাহাড়ে ভিড় জমতে শুরু করেছে পর্যটকদের । ডিসেম্বরে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে । তাই পর্যটকদের জন্য ডিসেম্বর থেকে কড়া নিয়ম চালু করার পথে হাঁটতে চলেছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) প্রশাসন ।
সান্দাকফু যেতে কী পরীক্ষা দিতে হবে পর্যটকদের?
প্রথমেই করা হবে পর্যটকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ৷ মানেভঞ্জনে হবে এই পরীক্ষা ৷ সেখান থেকে পর্যটকদের সান্দাকফু যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে । পর্যটকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও প্রাথমিক কিছু নিয়ম মেনে চলার ব্যাপারেও জানানো হচ্ছে জিটিএর তরফে ।
কেন নিয়মে এত কড়াকড়ি ?
গত কয়েক বছরে সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজন পর্যটকের । চলতি মাসেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন কলকাতার ভবানীপুরের এক প্রৌঢ় । 2022 সালে মৃত্যু হয়েছিল ইজরায়েলের এক পর্যটকের । তারপর চলতি বছরের মে মাসে উত্তর দিনাজপুরের এক যুবকের সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে মৃত্যু হয় । আর এরপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে । সরব হন পর্যটন সংস্থা ও ট্যুর অপারেটররা । প্রায় 12 হাজার ফুট উচ্চতায় সান্দাকফুতে উঠে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগেন অনেক পর্যটক ।
সান্দাকফুতে আরও কড়াকড়ি হচ্ছে নিয়ম (নিজস্ব ছবি) এ রাজ্যের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সান্দাকফুতে ট্রেকিংয়ের 'হাতেখড়ি' হয় অনেকের । কিন্তু কোনওরকম গাইডলাইন না মেনেই সব কিছু চলে বলে অভিযোগ । তাই ডিসেম্বর মাস থেকেই পর্যটকদের জন্য বেশকিছু বিধিনিষেধ চালু করতে চলেছে জিটিএ প্রশাসন ।
প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, মানেভঞ্জনে পর্যটকদের শারীরিক সক্ষমতা যাচাই করার এখনও কোনও সরকারি পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি । এর আগে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে । কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি । অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমে অংশ নিলেও নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ না মানার কারণেই সান্দাকফুতে পর্যটকদের মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক কর্তারা ।
হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এমন একটা জিনিস যেখানে সুরক্ষার বিষয়টি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত । কিছু নিয়মাবলী তৈরি করা উচিত অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে । তবে সেটা প্রক্রিয়ায় আছে । এই মুহূর্তে যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম স্পট রয়েছে সেগুলোকে কীভাবে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি, গাইডলাইনগুলো কত দ্রুত চালু করতে পারি, সেটা দেখা উচিত ।"
সান্দাকফু যেতে হলে মানতে হবে গাইডলাইন (নিজস্ব ছবি) তাঁর কথায়, "সান্দাকফুতে যাওয়ার আগে একটা হেলথ চেকআপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেটা আমরা জানতে পেরেছি । অনেক পর্যটক শিলিগুড়িতে নেমেই সোজা সান্দাকফু চলে যাচ্ছেন । ফলে সেটা বিপজ্জনক । যাঁরা ট্রেকিং নিয়ে কাজ করছেন তাঁদের এই বিষয়গুলো দেখা উচিত । আর কোনও পর্যটকের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে যাতে সেখানে থাকা গাইডরা জরুরিভিত্তিক কাজ করতে পারেন, সেই প্রশিক্ষণও থাকা উচিত ।"
কীভাবে যাবেন সান্দাকফু ?
শিলিগুড়ি কিংবা বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সরাসরি মানেভঞ্জনে যাওয়া যায় । মানেভঞ্জন থেকে ল্যান্ডরোভারে করে জিরো পয়েন্ট যেতে হয় । সেখান থেকে ট্রেকিং করে বা গাড়িতে যাওয়া যায় সান্দাকফু ।
জিটিএ'র মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, "এখন থেকে মানেভঞ্জনে বিশেষ ক্যাম্প থাকছে । সেখানে নির্দিষ্ট ফর্ম পাওয়া যাবে । সেই ফর্ম পূরণ করে পর্যটকদের ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে । কর্তব্যরত চিকিৎসক 'ফিট সার্টিফিকেট' দিলে তবেই সান্দাকফু যাওয়ার অনুমতি মিলবে । তবে, সান্দাকফু গিয়েও যদি কোনও পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকছে । শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্যেই 24x7 এই অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে মানেভঞ্জনে । অসুস্থ পর্যটককে দ্রুত নামিয়ে এনে যাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, সেই জন্যেই এই ব্যবস্থা ।"