কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: একই পরিবারের তিন সদস্যের অস্বাভাবিক মৃত্যু হল কলকাতায় ৷ ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হয়েছে তিনজনের দেহ ৷ নিহতদের মধ্যে দু’জন মহিলা ও একজন নাবালিকা ৷
কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, নিহতদের মধ্যে দুই মহিলার নাম রোমি দে ও সুদেষ্ণা দে ৷ দুই মহিলার গলা-বুক হাতে ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে । পাশাপাশি এঁদের হাতের শিরা কাটা ছিল । সুদেষ্ণা ও রোমির ঠোঁটেও গভীর ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে ট্যাংরার 21/সি অতুল সুর রোডের একটি আবাসনে তিনজনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷ প্রথমে স্থানীয়রা দেহ তিনটি দেখেন ৷ তাঁরাই পুলিশকে খবর দেন ৷ পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ৷ ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে ৷ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে যান ৷ কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা, গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার-সহ একাধিক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৷
এই ঘটনা নিয়ে যখন চারিদিকে হইচই পড়েছে, সকলেই যখন জানতে উৎসুক যে কেন এই ঘটনা ঘটল, তখনই জানা যায় যে ইএম বাইপাসে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ সেই গাড়িতে তিনজন ছিলেন ৷ তার মধ্যে একজন নাবালক ৷ তিনজনই আহত হয়ে ভর্তি বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৷
আহতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে যে ট্যাংরার ঘটনার সঙ্গে বাইপাসের গাড়ি দুর্ঘটনার যোগ রয়েছে ৷ গাড়ি দুর্ঘটনায় আহতদের নাম প্রসূন দে ও প্রণয় দে ৷ তাঁরা ট্যাংরার ওই 21/সি অতুল সুর রোডের আবাসনের বাসিন্দা ৷ ট্যাংরায় নিহত রোমির স্বামী প্রসূন এবং সুদেষ্ণার স্বামী প্রণয় ৷
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে মঙ্গলবার রাতে পায়েস খান দে পরিবারের সদস্যরা ৷ তার পর দুই মহিলা ও এক নাবালিকার হাতের শিরা কাটা হয় ৷ বুধবার সকালে তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার করা হয় ৷ ঠিক কী কারণে মৃত্যু, তা জানতে আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে পুলিশ ৷ তাছাড়া প্রসূন ও প্রণয়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷ প্রয়োজনে মনোবিদেরও সাহায্য নেওয়া হতে পারে ৷ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘প্রসূন-প্রণয়ের সঙ্গে কথা বলেছি । তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হচ্ছে । ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে ।’’
লালবাজার সূত্রে খবর, দে পরিবার চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৷ বেশ কিছুদিন ধরে তাঁদের ব্যবসায় মন্দা চলছিল ৷ এমনকী ঋণের সমস্যাতেও জর্জরিত ছিলেন তাঁরা ৷ মঙ্গলবার রাতেও মনোজ নামে একজন পাওনাদার এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে ৷ তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন যে 2020 সালে প্রণয়-প্রসূনদের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল ৷ 2023 সাল পর্যন্ত তাঁকে চামড়ার জোগান দিতেন তাঁরা ৷
পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন যে তার পর লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় ৷ তবে তিনি দে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন ৷ 2024 সালের জুন মাসের মধ্যে 70 শতাংশ ঋণ শোধ করা হয় ৷ বাকিটা পড়েছিল ৷ সেটাই নিতে মঙ্গলবার আসেন তিনি ৷ কিন্তু কারও সাড়াশব্দ না-পেয়ে চলে যান ৷
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ঋণে জর্জরিত একটি পরিবারের সদস্যরা নিজেদের শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলেই মনে করছে ৷ তবে অন্যদিকগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ কলকাতার নগরপাল এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন লালবাজারে ৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব দিকগুলি খতিয়ে দেখছি । এই ঘটনার নেপথ্যে ব্যবসায়িক শত্রুতা থাকতে পারে কিংবা পারিবারিক কলহ থাকতে পারে । সেটি তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার । এছাড়াও আমরা অতিরিক্ত বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি, সেগুলি এখনই প্রকাশ্যে আনতে চাইছি না ।’’