পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ই সাইবার ক্রাইমে হাত পাকিয়েছিলেন রানিগঞ্জ ডাকাতিকাণ্ডে 'মাস্টার মাইন্ড' সোনু - Raniganj Robbery Case

Raniganj Robbery Case: বিহারে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার সময় সাইবার ক্রাইমে হাত পাকায় সোনু ৷ সেখান থেকেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করে রানিগঞ্জ ডাকাতিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ৷ পুলিশের হাতে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷

Raniganj Robbery Case
রানিগঞ্জ ডাকাতিকাণ্ডে 'মাস্টার মাইন্ড' সোনু (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 20, 2024, 12:35 PM IST

আসানসোল, 20 জুন: অবশেষে রানিগঞ্জ ডাকাতিকাণ্ডে মাস্টার মাইন্ড সোনু সিংকে হেফাজতে পেল পুলিশ । ডাকাতির ঘটনার দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল মূল অভিযুক্ত সোনু । তখন থেকে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিল সে । মঙ্গলবার বিকেলে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেওয়া হয় । এরপর ওইদিনই তাকে আসানসোল আদালতে তোলা হয়েছিল । বিচারক তাকে 14 দিনের পুলিশ হেফাজত দেন । বুধবার থেকে সোনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ । একদা পঞ্জাব, রাজস্থান-সহ এ রাজ্যে ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত সোনু ৷ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে ৷

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনো করা সোনু ধীরে ধীরে কুখ্যাত ব্যাংক ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। পরনে সাদা জামা, ডেনিম জিনস ও স্নিকার । হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র । রানিগঞ্জ ডাকাতিকাণ্ডের দিন জামুড়িয়ার শ্রীপুর ফাঁড়ির আইসি মেঘনাদ মণ্ডলের গুলির আঘাতে সোনুর পড়ে যায়, সেই দৃশ্য সবার দেখা । এরপর সঙ্গীদের সঙ্গে বাইকে উঠে পালিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে। পরে আসানসোলের মহিশীলায় আহত সোনুকে নিয়ে পালাতে একটি চারচাকা গাড়ির মালিককে গুলি করে তার সঙ্গীরা ৷ তারপর ওই গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় সকলে । কিন্তু আহত সোনুরও সঙ্গ ছাড়ে বাকি সঙ্গীরা ।

জিপিএস ট্র‍্যাক করে পুলিশ দুষ্কৃতীদলের পিছু ধাওয়া করলে ঝাড়খণ্ডের একটি জঙ্গলে সঙ্গীরা ফেলে পালায় সোনুকে । সকালে কাঠকুড়ানিরা জঙ্গলে গুলিবিদ্ধ সোনুকে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসীরা । পুলিশ এসে সোনুকে উদ্ধার করে ধানবাদের একটি হাসপাতালে ভরতি করে । খবর পেয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ সেখানে পৌঁছয় । সোনুকে গ্রেফতার করে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে । মঙ্গলবার সোনুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় । ওইদিনই তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ।

পুলিশ হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে রানিগঞ্জে সোনার দোকানে ডাকাতির আগে মে মাসে 12 দিন ধরে অন্ডাল থানা এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে ছিল এই ডাকাতির মূল মাথা সোনু সিং । তার সঙ্গে ছিল আরও দুই সহযোগী ৷ তবে তারা স্থানীয় কেউ নয় । সেই 12 দিন অন্ডালে থাকার সময় তারা রানিগঞ্জ ছাড়াও দুর্গাপুর, বরাকর, আসানসোল এলাকার বড় শো-রুমে ডাকাতি করার জন্য রেইকি করেছিল। বিভিন্ন জায়গায় রেইকি করলেও রানিগঞ্জকেই টার্গেট হিসাবে বেছে নিয়েছিল মাস্টার মাইন্ড সোনু । কারণ প্রচণ্ড গরমে বেলা বারোটার পর এখানকার বাজার রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায় । সেটাই তারা নজরে রেখেছিল ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, 9 জুন রবিবার বেলা সাড়ে বারোটায় সোনু-সহ দলবল ডাকাতি শুরুও করেছিল । কিন্তু ডাকাতি শুরু করার দু'মিনিটের মাথায় পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করবে এটা তারা ভাবতেই পারেনি । এ দিকে শ্রীপুর ফাঁড়ির ওসি মেঘনাদ মণ্ডলের অভ্রান্ত নিশানায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোনু এবং তার দুই সঙ্গী ঝাড়খণ্ডের কৈরিডিহি জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছিল । কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গুলিবিদ্ধ সোনুকে জঙ্গলে ফেলে তার দুই সঙ্গী পালিয়ে যায় । পুলিশকে সোনু জানিয়েছে, তার কাছে মোবাইল ছিল ৷ সেই মোবাইল থেকে সে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্কুটি নিয়ে জঙ্গলে আসতেও বলেছিল । কিন্তু তার আসার আগেই পুলিশ চলে আসে ।

পুলিশ সোনুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে সোনু বিহারের ছাপড়ার কাশি বাজারের একটি লজে থেকে পড়াশোনা করত । সেই সময়ই সাইবার ক্রাইমে হাত পাকায় এবং সেখান থেকেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করে বলে পুলিশ জেনেছে । ইতিমধ্যেই অন্ততপক্ষে 6টি ডাকাতির মামলায় তার নাম জড়িয়েছে । 2019 সালের 11 অক্টোবর বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মীর কাছ থেকে 68 হাজার 955 টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল সে । আবার 2022 সালে ব্যাংকে লুটের ঘটনাতেও জড়িয়ে ছিল সোনু । এছাড়াও মোটরবাইক চুরি-সহ বিভিন্ন মামলায় সে অভিযুক্ত হয়ে আছে । ‌

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, 2022 সালের 29 মে গোপালগঞ্জে ডাকাতির ঘটনাতেও নাম ছিল সোনুর । শেষ পর্যন্ত 200 সালে পিস্তল, আটটি কার্তুজ এবং 530 গ্রাম ব্রাউন সুগার-সহ সে ধরা পড়ে ৷ জেলও হয়েছিল তার । জেল থেকে বেরিয়েই আবার ডাকাতির মতলব ফাঁদে সোনু । রানিগঞ্জকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত 4 জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ । এর মধ্যে তিনজনই বিহারের কুখ্যাত দুষ্কৃতী । একজন অণ্ডালের । সে এই ডাকাতিতে সোর্স হিসেবে কাজ করেছে । পুলিশের আশা সোনুকে আরও টানা জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য মিলবে ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details