কলকাতা, 23 সেপ্টেম্বর: পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বদল। অধীর চৌধুরীর জায়গায় দায়িত্বে শুভঙ্কর সরকার। বঙ্গের ইন্ডিয়া জোটের শরিক ও প্রদেশ কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে তাঁর গলায় শোনা গেল সুকৌশলের সুর ৷ কিন্তু এ ব্যাপারে কী বলছেন শুভঙ্কর সরকারের রাজনৈতিক 'বন্ধু'রা ? সিপিএমের বক্তব্য, কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা নাক গলাতে চায় না। আবার তৃণমূলের তরফে, শুভঙ্কর সরকারকে বিশেষবার্তা দিলেন 'বন্ধু' কুণাল ঘোষ।
লোকসভা ভোটের আগে 'ইন্ডিয়া' জোট গঠিত হলেও বাংলায় তার বিশেষ প্রভাব পড়েনি ৷ তৃণমূল একলা চলো নীতিতে চলে লোকসভা ভোটে বৈতরণি পেরিয়েছে ৷ ঘাসফুল শিবির আগের থেকে বেশি আসনও জিতেছে একা লড়ে ৷ বিজেপির আসন কমেছে। আর কংগ্রেস ও সিপিএম জোট বেঁধে লড়াই করেছে ৷ কিন্তু লাভের থেকে ক্ষতি হয়েছে বেশি ৷ কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলই বাংলার রাজনীতিতে আরও কোণঠাসা হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরিও হেরে যান।
সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া (ইটিভি ভারত) সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "কংগ্রেস কাকে দায়িত্ব দিচ্ছে বা কী করছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আগে অধীর চৌধুরী সভাপতি ছিলেন ৷ এখন শুভঙ্কর সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি প্রদেশ কংগ্রেস চালাবেন। ভারতবর্ষে বিজেপি বিরোধী শক্তিকে একজোট করে চলতে হবে। এই বিষয়টা আমরা যেমন বুঝি, কংগ্রেসও তেমন বোঝে। তবে, আমাদের রাজ্যে তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে যে বিজেপি-বিরোধিতায় কাজের কাজ হবে না ৷ কংগ্রেসের কর্মীরা সেটা জানেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাই, তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে হবে। মানুষের স্বার্থে লড়াই হবে।"
তিনি আরও বলেন, "কংগ্রেসের মধ্যে কে চরমপন্থী, কে নরমম্পন্থী তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে ৷ সেই চর্চা আমাদের মানায় না ৷ আমরা করছিও না। তবে, কংগ্রেসকে মনে রাখতে হবে 2011 সালে তৃণমূলের সঙ্গেও হাত মিলিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়েছিল। পরবর্তীকালে সেই কংগ্রেসকে এ রাজ্যে শেষ করেছে তৃণমূলই। সেটা বুঝেছিল অধীর চৌধুরী। সেটাও শুভঙ্কর-সহ কংগ্রেস নেতাদের বুঝতে হবে। আমাদের বিষয় নয়।"
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডেলে কংগ্রেসের নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন। কুণাল লিখেছেন, "শুভঙ্কর সরকারকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার জন্য অভিনন্দন। যদিও অন্য দল, কিন্তু বন্ধুস্থানীয়, দীর্ঘপরিচয়, মাঝেমধ্যে কথা হয় ৷ আলাদা রাজনৈতিক মঞ্চ হলেও শুভেচ্ছা থাকল বন্ধু ৷ নতুন প্রজন্ম নেতৃত্বের দায়িত্ব পেলে দেখতেও ভালো লাগে। আশাকরি, বঙ্গরাজনীতির বাস্তবতা প্রতিফলিত থাকবে তোমার পদক্ষেপে।"
চেয়ারে বসেই বঙ্গে কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলেই জানিয়েছেন শুভঙ্কর সরকার ৷ তিনি বলেন,"আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছি ৷ ভোটের সময় পোলিং বুথে এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছি ৷ আমি জানি, ওই পোলিং এজেন্ট কিংবা আরও নিচুস্তরের গুরুত্বপূর্ণ কাজে দায়িত্ব প্রাপ্তদের খোঁজ কেউ রাখে না ৷ কিন্তু, আমি চেষ্টা করব। বুথের কংগ্রেসের ঝান্ডাধারী কংগ্রেস নেতা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্য, সমস্ত স্তরের কর্মীদের সঙ্গে কাজ করার ৷ আমি জানি বাংলায় কংগ্রেসের শক্তি কম ৷ আমি প্রথমেই রাজ্যের জেলা কংগ্রেসের প্রতিটি কার্যালয়ে গিয়ে জেলা সভাপতি ব্লক স্তরের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। আমার মনে হয় বাংলার মানুষ কংগ্রেসকে চায়। কংগ্রেস মানুষের জন্য কথা বলে।"
আসন সমঝোতা নিয়ে বিতর্কর বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি সবসময় চাই, আমার দল শক্তিশালী হোক। বাকিটা আগামিদিনে বলব।" বাম ও তৃণমূলের রসায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বিজেপি বা আরএসএস-এর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল 'ইন্ডিয়া' জোট তৈরি করেছে। সেই দলের শরিক কংগ্রেসের সঙ্গে আমার রাজ্যের দুই দল । একটি দলের সঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়েছে ৷ অন্যটির সঙ্গে হয়নি ৷ তবে, এখন শুধু আমি চালক হিসেবে দলের সংগঠনকে মজবুত করতেই চাই।" তৃণমূলের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের এরাজ্যে অবস্থান বিষয়ে নবনিযুক্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "রাজ্যের যে দুটি দল আছে, তাদের কাজকে সমর্থন আমি করি না ৷ আমি তার চরম বিরোধিতা করি। তবে রাজ্য বা কেন্দ্র যদি কোনও শিল্প আনতে চায় তাহলে আমি তার সমর্থন করি ।"