দুর্গাপুর, 10 সেপ্টেম্বর: লোকসংস্কৃতির ভাণ্ডার পশ্চিমবাংলা। নাচ, গান বা হস্তশিল্প, সবক্ষেত্রেই লোকসংস্কৃতির খনি বাংলাজুড়ে। সেই লোকসংস্কৃতির অন্যতম রাঢ়বঙ্গের ভাদুগান। ভাদু উৎসবকে কেন্দ্র করেই এই গানের প্রচলন। ভাদু একজন সমাজসেবী ছিলেন। যাঁর এমন আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছিল। বাংলার এখন ভাদ্র মাস চলছে। তাই আরজি করের নির্যাতিতার সঙ্গে ভাদুর মিল খুঁজে পেয়ে লোকশিল্পী জীবন কিশোর চট্টোপাধ্যায় গান বাঁধলেন "চল ভাদু চল, আরজি করে চল, ডাক্তার বোনকে মেরে ফেলল হায়না-পিশাচ দল ৷"
ভাদু গানে প্রতিবাদ লোকশিল্পীর (ইটিভি ভারত) আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে দেশ তথা বিশ্ববাসী। পথে নেমেছে সমগ্র চিকিৎসক মহল, শিল্পী মহল, শিক্ষক মহলের, ছাত্র সমাজের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। সবাই নিজের মতো করে প্রতিবাদ করছে। মৌন মিছিল, রাত পাহারা, ভোর পাহারা, রাস্তায় ছবি এঁকে, গান, নাচ, আলো নিভিয়ে অন্ধকার করে দিয়ে চলছে প্রতিবাদ। আরজি করের ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে দুর্গাপুরের বিশিষ্ট বাউলশিল্পী জীবন কিশোর চট্টোপাধ্যায়ের ভাদু গান এখন ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায় ৷
ভাদুকথা-একসময় বাংলার গ্রাম্য জীবনে এই মাসে ভাদু পুজোর প্রচলন ছিল। আজ কোনওরকমে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর-সহ বীরভূম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে টিমটিম করে ভাদু পুজোর আয়োজন হয়। তবে এই উৎসবের নেপথ্যে রয়েছে কিছু গল্প-কথা ৷ সমাজসেবী ভাদুর আকস্মিক মৃত্যুতে পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজা নীলমণি সিংদেওয়র মেয়ে ভাদুর স্মৃতিকে মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতেই ভাদুগানের প্রচলন করেন বলে জানা যায়।
শিল্পীর পরিচয়-
- দুর্গাপুরের সুখ্যাত বাউল ও লোকগান শিল্পী জীবন কিশোর চট্টোপাধ্যায় বেতার ও দূরদর্শনের অতিপরিচিত একজন বাউল ও লোকগান শিল্পী। দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের এ-জোনের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একাধারে লোকগান ও লোকবাদ্যের শিক্ষক এবং অন্যদিকে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। তাঁর একমাত্র মেয়ে বৃতি চট্টোপাধ্যায় কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক সঙ্গীত নিয়ে মাস্টার্স করছেন।
- লোকশিল্পী জীবনবাবু বলেন, "ভাদুও একজন সমাজসেবী ছিলেন ৷ তাঁরও আকস্মিক মৃত্যু হয় ৷ তাই ভাদুর কাছে আমার আবেদন যে চল একবার আরজি করে কী হচ্ছে ।"
- তিনিও পেশাগতভাবে একজন সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গীতশিল্পীর মেয়ে বৃতির কথা, "আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আরজিকর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে এবং সুবিচার চেয়ে এই গান গাই ৷ যা এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সবার প্রতিবাদের ধরন আলাদা কিন্তু চাওয়া সেই একটাই, 'জাস্টিস ফর/আরজি কর'। আরজি করের নির্যাতিতার জীবনে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি আজ জানাচ্ছি গানে গানে।"