পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

হাজার বছরের রীতি মেনে তোপধ্বনিতে মল্লরাজ পরিবারে শুরু মৃন্ময়ীর আরাধনা - Durga Puja 2024 - DURGA PUJA 2024

Mallaraj Family Durga Puja: দশভূজার আগমনের সপ্তাহ দুয়েক আগেই শুরু হয়ে গেল মল্লরাজাদের কুলদেবী মৃন্ময়ীর আরাধনা ৷ পুরনো রীতি মেনে আজও তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা হল এখানে ৷ নবমী তিথিতে দেবীর আগমন ঘটল শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরে ৷

Mallaraj Family Durga Puja
মল্লরাজ পরিবারের পুজো (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 26, 2024, 7:23 PM IST

বিষ্ণুপুর (বাঁকুড়া), 26 সেপ্টেম্বর: আকাশে পেঁজা সাদা তুলোর মতো মেঘ ৷ সঙ্গে মাঠের ধারে কাশফুলের দোলা । জানান দিচ্ছে দেবী দশভূজার আগমন আসন্ন । তবে পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে এখনও সপ্তাহ দুয়েক বাকি ৷ এরই মধ্যে উৎসবের মেজাজ বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে । প্রায় হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন রীতি মেনে বৃহস্পতিবার থেকে দেবী মৃন্ময়ীর পুজো শুরু হল । দেবী মৃন্ময়ী হলেন মল্লরাজ পরিবারের কুলদেবী । সারা বছরই তিনি বিষ্ণুপুর শহরে রাজ পরিবারের যে মন্দির রয়েছে সেখানে অধিষ্ঠান করেন ।

মল্ল পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস সূত্রে জানা গিয়েছে, 997 খ্রিস্টাব্দের আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায় । 997 সালের কোনও এক সময়ে মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকার করতে বেরিয়ে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন । কথিত আছে, পথের খোঁজ করতে গিয়ে ক্লান্ত জগৎমল্ল একসময় বটগাছের তলায় বসে পড়েন । সেখানেই নানা অলৌকিক কাণ্ডকারখানার মুখোমুখি হতে হয় রাজাকে । শেষে রাজা ওই বটগাছের নীচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করার দৈববাণী পান । নির্দেশ মতো রাজা জগৎমল্ল বটগাছের নীচেই দেবীর সুবিশাল মন্দির তৈরি করেছিলেন ।

তোপধ্বনিতে মল্লরাজ পরিবারে শুরু মৃন্ময়ীর আরাধনা (ইটিভি ভারত)

পাশাপাশি ঘন জঙ্গল কেটে জগৎমল্ল রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে । তারপর দীর্ঘ 1028 বছর ধরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী রয়েছেন দেবী মৃন্ময়ী । পরবর্তীতে মল্ল রাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলে শব্দকে ব্রহ্ম জ্ঞান করে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয় । সেই প্রথা আজও চলে আসছে । পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট আজও ঘোষিত হয় তোপধ্বনির মাধ্যমে । কিন্তু এখানে পুজোতে রয়েছে এক অন্য রীতি ।

সারা রাজ্যে দুর্গাপুজা কালিকাপুরাণ মতে হলেও শুরুর দিন থেকে বিষ্ণুপুরের রাজপরিবার দেবী মৃন্ময়ীয় পুজো করে একটি প্রাচীন বিশেষ পুঁথি অনুসারে । 'বলিনারায়ণি' নামে সেই পুঁথির নিয়ম নীতি মেনেই মল্লরাজ পরিবারের পুজো হয় এখনও । রাজার পুজো, তাই পুজোর নিয়ম কানুনও ভিন্ন ধরনের । এই পুজো শুরু হয়, জিতাষ্টমীর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথি ধরে । এই বছরও তার অন্যথা হল না । আজ নবমাদি কল্পারম্ভে সাত সকালে দেবীর আগমন ঘটে প্রাচীন মন্দিরে । প্রাচীন রীতি অনুসারে আজ রাজ দরবার সংলগ্ন গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে ।

নবমী তিথি ধরে পুজো হয় মল্লরাজ পরিবারে (নিজস্ব ছবি)

দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী । সপ্তমীর দিন আনা হবে ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাসরস্বতীকে । এই তিন ঠাকুরানি আসলে স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি বিশেষ পট । আরাধানা শুরু হয় নিয়ম মেনে । কালের নিয়মের সঙ্গে রাজার রাজপাট চলে গিয়েছে, মাটিতে মিশেছে মল্লদের রাজপ্রাসাদ । গড়ের আকারে থাকা প্রাচীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুর আজ একটি আধুনিক শহর । তবুও রয়ে গিয়েছে মল্লদের ফেলে যাওয়া সেই আদি নিদর্শন ।

1027 বছর ধরে মৃন্ময়ীর আরাধনা হয়ে আসছে মল্লরাজ পরিবারে (নিজস্ব ছবি)

আজও দেবীর আগমনে মল্লভূম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ । এক সময় যে তোপের শব্দ শুনে দূর দূরান্তের প্রজারা জানতে পারতেন দেবীর আগমন বার্তা, তার পরিসর ছোট হয়েছে ৷ তবে বন্ধ হয়নি তোপধ্বনির সেই রেওয়াজ । মা মৃন্ময়ী মন্দিরের পাশে গোপালসায়েরে পাড়ে কামান দাগা হয় আজও । আনন্দে মেতে ওঠে প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ । নেই রাজত্ব, নেই রাজাও, তবুও নিষ্ঠা ভরে পালিত হয়ে আসছে শতাব্দী প্রাচীন মল্লরাজের পরিবারের পুজোর রীতিনীতি ।

স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে (নিজস্ব ছবি)

ABOUT THE AUTHOR

...view details