সন্দেশখালি, 30 ডিসেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেশখালি সফরের আগেই উলটপুরাণ ৷ সন্দেশখালির প্রতিবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুজয় মাস্টার ওরফে সুজয় মণ্ডল যোগ দিলেন শাসক শিবিরে ৷ রবিবার রাতে সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লক তৃণমূল পার্টি অফিসে গিয়ে তিনি নাম লেখান তৃণমূলে ৷ তাঁর হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন শাসকদলের ব্লক সভাপতি দিলীপ মল্লিক ৷
উল্লেখ্য, এই সুজয় মাস্টারই বসিরহাট লোকসভায় পরাজিত বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন ৷ এমনকি সন্দেশখালি আন্দোলনের সময় বিজেপির এই নেতাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ ৷ তবে, সন্দেশখালির প্রতিবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর রীতিমতো উজ্জীবিত শাসক শিবির ৷ তৃণমূল মনে করছে, সুজয় মাস্টারের মতো লোক তাদের শিবিরে যোগ দেওয়ায় সন্দেশখালিতে তৃণমূলের সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে ৷
যোগদানের পর সুজয় মণ্ডল বলেন, "বর্তমানে সন্দেশখালির পরিস্থিতি শান্ত ৷ আগের যে অশান্ত পরিস্থিতি এখানে ছিল, তা এখন নেই ৷ মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন তিনি সন্দেশখালির মাটিতে একদিন পা-রাখবেন ৷ সেই কথা উনি রেখেছেন ৷ আমি মনে করি, স্বাধীনতার পর প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালিতে আসছেন ৷ এজন্য সন্দেশখালির বাসিন্দা হিসেবে আমরা গর্বিত ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাজে আস্থা রেখে এবং সন্দেশখালিতে ফের শান্তি বিরাজ করায় আমি তৃণমূলে যোগদান করেছি ৷ আজ থেকে আমি শাসকদলের হয়ে কাজ করতে পারব ৷ এটা ভেবেই ভালো লাগছে ৷"
তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, "সন্দেশখালির আন্দোলন বিপথগামী হয়ে পড়েছিল ৷ সেটা বুঝতে পেরেই সুজয় মাস্টার নাম লিখিয়েছেন আমাদের দলে ৷ সন্দেশখালির আরও অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন একসময় ৷"
যদিও, সুজয় মণ্ডলের তৃণমূলে যোগদানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ৷ এর পিছনে অন্য কোনও অভিসন্ধি আছে বলে দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব ৷ এই বিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "কোনও চাপের কাছে উনি নতি স্বীকার করেছেন কি না, সেটা দেখতে হবে ৷ নইলে কী এমন হল যে, প্রতিবাদী আন্দোলন থেকে বেরিয়ে শাসকদলে যোগ দিতে হবে তাঁকে ? নিশ্চই এর পিছনে কোনও না-কোনও কারণ রয়েছে বলে মনে করছি আমরা ৷"
প্রসঙ্গত, প্রায় এক বছর আগে সন্দেশখালির মাটিতে যে আন্দোলনের বীজ বপন হয়েছিল, তার সূত্রধর ছিলেন পাত্র পাড়ার বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল ৷ তাঁর নেতৃত্বেই পাত্র পাড়া-সহ আশপাশের এলাকায় শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল পরবর্তী সময়ে ৷ দফায়-দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালি ৷
নারী নির্যাতন, জমি জবরদখলের বিরুদ্ধে সেসময় গর্জে উঠেছিলেন গ্রামের মহিলারা ৷ চাপে পড়ে রাজ্য সরকার শেখ শাহজাহান ও তাঁর দলবলকে একে-একে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় বলে দাবি করে বিজেপি ৷ এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে সন্দেশখালিতে রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সংগঠনকে মজবুত করে তুলতে শুরু করে বিজেপি ৷
যদিও, তা বিফলে যায় লোকসভা নির্বাচনে ৷ লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্রে মুখ থুবড়ে পড়ে পদ্ম শিবিরের নির্বাচনী কৌশল ৷ রেখা পাত্রকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে পরাজিত হতে হয় প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের কাছে ৷ তবে, বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে সন্দেশখালি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি ৷
এদিকে, সন্দেশখালি-কাণ্ডের প্রায় এক বছরের মাথায় সেখানে পা-রাখতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বসিরহাট লোকসভার প্রচারে গিয়ে কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচনে জিতে তবেই সন্দেশখালিতে যাবেন ৷ সেই কথা তিনি রাখছেন ৷ সোমবার সন্দেশখালি যাচ্ছেন তিনি ৷ আর তার আগের রাতে প্রতিবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুজয় মাস্টারের শাসকদলে যোগদান, নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ৷