কলকাতা, 3 অক্টোবর: সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় বামপন্থার পুনর্জাগরণের শপথ নিল সিপিএম। সীতারামের দেখানো পথেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে শেষ করার শপথ নিয়েছেন প্রকাশ কারাত, মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে বিমান বসুরা। বৃহস্পতিবার সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে কলকাতা জেলা কমিটির সদর দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ইয়েচুরির স্মরণ সভা আয়োজন করা হয়। সেই সভায় ইয়েচুরিকে স্মরণ করে তাঁর দেখানো পথে চলার অঙ্গীকারের কথা বলেন বক্তারা। সভায় সভাপতিত্বে ছিলেন বিমান বসু।
সীতারাম ইয়েচুরিকে স্মরণে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় ৷ বিমান বসু বলেন, "খুব অল্প বয়স থেকেই পার্টির ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করতেন না। দেশের সরকারের নীতি যখন কর্পোরেটের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে কুন্ঠাবোধ করেনি। সংসদের ভিতরে-বাইরে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইন্ডিয়া জোট তৈরি করা এবং বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে কী ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন সেটাও উল্লেখ যোগ্যভাবে করে গিয়েছেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তাঁকে যথাযথ সম্মান জানাতে গেলে পার্টির দরদী কর্মীদের বলব পার্টিকে আরও বেশি করে সময় দিন।"
অন্যদিকে, সিপিএমের কনভেনার প্রকাশ কারাত বলেন, "ছাত্র জীবনে খুবই মেধাবী ছিলেন। তিনি আইএএস অফিসার হতে পারতেন । অন্য যে কোনও বড় পদে চাকরিও করতেন পারতেন। কিন্তু, তিনি তা করেননি। তিনি মার্ক্সবাদী রাজনীতিতে যোগ দেন। নিবেদিত মার্কসিস্ট ছিলেন। তাঁর জীবনটাই একটা শিক্ষা। 1973 থেকে আমি সীতারাম ইয়েচুরিকে চিনি। প্রায় 50 বছর ধরে তাঁর সঙ্গে আমার কাজ। মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী পার্টির কালেক্টিভ লিডারশিপদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সীতারাম ইয়েচুরির বহুমুখী প্রতিভার আজকে একদিনে চর্চা করা সম্ভব নয়। সারমর্ম করলে এটা দাঁড়ায়, গোটা দেশে হিন্দুত্ববাদীদের কী অবস্থা তা খুব ভালো করেই পর্যালোচনা করেছিলেন। 1993 সালে ইয়েচুরি একটা বই লিখেছিলেন। কিন্তু, আরএসএস সেই সময় বন্ধ করেছিল। এই মানুষটিকে স্মরণে রাখতে গেলে তার চিন্তাভাবনা ও কাজ জের বাস্তবায়ন করতে সঠিক ভাবে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সীতারামের দেখানো পথেই এগতে হবে।"
সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক রাজ্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "আমরা এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তা স্বাধীনতার পর এতবড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে আমরা যায়নি। ভুল না করলে সঠিক শেখা যায় না। যারা ভুল করেও ভুল শুধরায় না তারা অপরাধী। তাই, নিজেদের সমালোচনা, আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন। আমি যা বলছি সবটাই ঠিক মনে করাটা ঠিক নয়। ফলে, কোথায় ভুল তা আলোচনা-সমালোচনা করে ভুল সংশোধনের প্রয়োজন আছে। ইয়েচুরির দেখানো পথে পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। এ লড়াই লড়তে হবে। এ লড়াই আমরা জিতবই।"
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, "আমরা 5 সপ্তাহের মধ্যে দুই শিক্ষক নেতা, গুরু, সংগঠক, সহকর্মী এবং দাদাকে হারিয়েছি। শ্রদ্ধা জানাতে হলে আমাদের চোয়াল শক্ত করতে হবে। মুঠকে আরও শক্ত করতে হবে। শিক্ষালয়ের অঙ্কুরে সীতারামকে গড়ে তুলতে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সীতারাম যে চর্চা করে গিয়েছেন তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করে যেতে হবে। নিঃস্বার্থ জীবন নিয়ে মানুষের জন্য লড়ে যেতে হবে। শপথ নিয়ে যেতে হবে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য।"