রায়গঞ্জ, 30 জুন: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে সালিশি সভা ডেকে যুবক-যুবতীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল বিধায়কের খাস লোকের বিরুদ্ধে ৷ মারধরের ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ৷ সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকে ৷ এই ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের খাস লোক ৷ পরে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় ৷
চোপড়ায় সালিশি সভা ডেকে যুগলকে মারধরের অভিযোগ ৷ (ইটিভি ভারত) পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে হঠাৎ ওই যুবক-যুবতীকে ডেকে পাঠানো হয় ৷ এরপর সালিশি সভা বসিয়ে বিচারের নামে দু’জনকেই মারধর করা হয় ৷ চড়, লাথি, ঘুষি কিছুই বাদ যায়নি ৷ সবশেষে চলে চাবুক অস্ত্র দিয়ে আঘাত ৷ সোশাল মিডিয়ায় যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দেখা গিয়েছে মূলত যুবতীর উপরেই বেশি অত্যাচার করা হয়েছে ৷ আর এই ঘটনায় মারধর চালানো ব্যক্তি আর কেউ নন, চোপড়া বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ডানহাত বলে পরিচিত 'জেসিবি' ৷ এলাকায় ওই নামেই পরিচিত সে ৷
অভিযোগ, এই জেসিবি-র বিরুদ্ধে ইসলামপুর পুলিশ জেলার একাধিক থানায় খুন, সন্ত্রাসের মামলা দায়ের হয়েছে ৷ কিন্তু, বিধায়কের খাস লোক হওয়ায়, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না ৷ আর অভিযোগটা অমূলক নয় ৷ স্বয়ং হামিদুল রহমান ক্যামেরার সামনে তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা করলেন ৷
এমনকী বিধায়ক নিজেই ঠিক-বেঠিক বিচার করতে বসলেন ৷ তাঁর বক্তব্য, "আপনারা সংবাদমাধ্যমে বিষয়টা নিয়ে বেশি খুঁচিয়ে বেড়াচ্ছেন ৷ ওই মহিলা নিজে তো অভিযোগ দায়ের করেননি ৷ আর ওই মহিলা স্বামীকে ছেড়ে, অসামাজিক কাজ করেছিল ৷ আর তাই গ্রাম্য বৈঠক ডেকে যেমন হয়, তেমন বিচারসভা বসেছিল ৷"
তৃণমূলের এই বিধায়ক অবশ্য মহিলা এবং তাঁর প্রেমিককে মারধরের ঘটনাকে সামান্য বাড়াবাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন ৷ তবে, পর মুহূর্তেই ফের একবার নির্যাতিতা মহিলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন হামিদুল রহমান ৷ তাঁর কথায়, "গ্রামবাসীদের তরফে একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে ৷ এর জন্য আমরা দুঃখিত ৷ ব্যাপারটা আমরা দেখছি... কিন্তু, ওই মহিলাও তো অন্যায় করেছেন ৷ স্বামী-সন্তান ছেড়ে দুঃশ্চরিত্রা হয়েছেন ৷ এখন আমাদের সমাজের মধ্যে একটা বিচার হয়েছে ৷"
এই ঘটনায় হামিদুল রহমান এবং তাঁর ডানহাত জেসিবির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার বিজেপি নেতৃত্ব ৷ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি সুরজিৎ সেন অভিযোগ করেছেন, মূল অভিযুক্ত জেসিবির বিরুদ্ধে একাধিক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৷ কিন্তু, বিধায়কের খাস লোক হওয়ায় পুলিশ তাঁকে স্পর্শও করে না ৷ যদিও, ইসলামপুর পুলিশ জেলার এসপি জবি থমাস ফোনে জানান, "আমরা ইনফরমেশন পেয়েছি ৷ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কেস স্টার্ট করা হয়েছে ৷ যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে ৷ আমরা ভিডিয়ো দেখে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি ৷ আইন যারা নিজের হাতে তুলবে, তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রং অ্যাকশন নেওয়া হবে ৷"