মালদা, 18 জানুয়ারি: রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জেলা ছাড়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই কালিয়াচকের তৃণমূল নেতা আতাউল হক ওরফে হাসাকে খুনে মূল অভিযুক্ত জাকির শেখকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ শনিবার ধৃতকে জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক 7 দিনের পুলিশি হেফাজত দেন ৷ তবে যেভাবে ডিজি ফিরে যাওয়ার পরেই জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷
শুক্রবার রাতে 12 নম্বর জাতীয় সড়কের ধার থেকে 61 বছর বয়সি স্থানীয় কাশিমনগর গ্রামের বাসিন্দা জাকির শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ 14 দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে শনিবার তাকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন ৷ পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “কালিয়াচকের খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জাকির শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এ নিয়ে ওই ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করা হল ৷ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে ৷”
মকর সংক্রান্তির সকালে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সালেপুর গ্রামের মোমিনপাড়ায় একটি সরকারি রাস্তার উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বকুল শেখ, তাঁর ভাই তথা ওই পঞ্চায়েতের সদস্য এসারুদ্দিন শেখ ৷ ছিলেন বকুলের ছায়াসঙ্গী হাসা-সহ আরও অনেকে ৷ সেখানে ড্রেন নির্মাণের টেন্ডার নিয়ে বকুলের সঙ্গে ঝামেলা বাধে পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী নাসিউর শেখের ৷ নাসিউর হলেন বকুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জাকির শেখের ঘনিষ্ঠ ৷ ঝামেলা চলাকালীন বকুল নাকি নাসিউরকে সামান্য মারধরও করেন ৷ এরপরেই জাকিরের দলবল বকুলদের উপর চড়াও হয় ৷ বাধা দিতে গেলে আতাউল হক ওরফে হাসাকে ইট দিতে মাথা থেঁতলে খুন করা হয় ৷ ঘটনাস্থলে চলে গুলিও ৷ আহত হন বকুল ও তাঁর ভাই এসারুদ্দিন ৷ এখনও তাঁরা মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ৷ মেডিক্যাল সূত্রে খবর, এসারুদ্দিন খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলেও বকুলের পরিস্থিতি এখনও খারাপ ৷ তিনি উন্মাদের মতো আচরণ করছেন ৷ হাসপাতালের ওয়ার্ডে কার্যত তাণ্ডব চালাচ্ছেন ৷ কোনওরকমে তাঁকে শান্ত রাখা হচ্ছে ৷
এদিকে ঘটনার পরেই এলাকা থেকে উধাও হয়ে যান জাকির ও তাঁর অনুগামীরা ৷ জাকিরের খোঁজ পেতে পুলিশ ড্রোন ব্যবহার করে ৷ কিন্তু তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন পুলিশকর্তারা ৷ পুলিশের দাবি, এই ঘটনায় প্রথমদিনই ধরা হয়েছিল মহম্মদ আমির হামজা নামে এক দুষ্কৃতীকে ৷ তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখেই জাকিরের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল ৷ অবশেষে শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
শুক্রবার বিকেলেই কালিয়াচকের নওদা যদুপুর এলাকায় থাকা মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের দফতরে গিয়েছিলেন ডিজি রাজীব কুমার ৷ সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তিনি এলাকার পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন ৷ তিনি বেরিয়ে যাওয়ার ঘণ্টাতিনেক পরই জাকির শেখের গ্রেফতারির খবর পুলিশের তরফে জানানো হয় ৷ এতে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা ৷ বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “এই ঘটনা প্রমাণ করে ওই খুনের ঘটনায় প্রথমে জাকির শেখকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল ৷ জাকির তৃণমূলের নেতা ৷ ফলে তৃণমূলের কোনও প্রভাবশালীর নির্দেশেই পুলিশ তাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিল ৷ পরে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের কথা মাথায় রেখে ডিজি-র নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পুলিশ যে এখন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে, এই ঘটনা তার বড় প্রমাণ ৷”