বর্ধমান, 15 জুলাই: বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানাগার থেকেই সম্ভবত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করবেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। রবিবার অর্ণবকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। সোমবার দুপুর নাগাদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ভর্তি হওয়ার কথা আছে।
কীভাবে পড়াশোনা চলবে অর্ণবের সেই সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কিছু আলোচনা চলছিল। কারা বিভাগ, বিচার বিভাগ সকলে মিলে সহযোগিতা করেছে বলেই সে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে বলেও জানা যাচ্ছে। পরবর্তী ধাপে যাতে সে মূলস্রোতে ফিরতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে প্রশাসনিক মহল থেকে ৷ তবে পিএইচডি করতে হলে ক্লাস করতেই হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে অর্ণবকে হুগলি সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান জেলা সংশোধানাগারে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে বলেও আলোচনা হয়েছে একপ্রস্থ ৷
সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অবশ্য কারা কর্তৃপক্ষকে। অর্ণব সরাসরি উপস্থিত হয়ে ক্লাস করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্রও অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপাচার্যের মতে, অর্ণবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ব্যবহার করে পড়াশোনা করতে হবে। শুধুমাত্র ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়াশোনা করা যাবে না। ইন্টারনেটে অনেক ভুল তথ্য থাকে। তাঁর কথায়, "বছরের পর বছর আমরা লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করে পিএইচডি করেছি। সময় মেনে ডিপার্টমেন্টে আসতে হবে, গাইডের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সেগুলোর ব্যবস্থা জেল কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তো সদিচ্ছা আছেই। কারণ একজন ছাত্রকে পড়ানোর জন্যই তো বিশ্ববিদ্যালয়। যে পড়তে চাইবে তাঁকে বাধা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন অর্ণব। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট 250 জন প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসেছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন অর্ণব। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত মাওবাদী নেতা কিষেনজির ঘনিষ্ঠ ছিলেন অর্ণব। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক মাওবাদী হামলায় তাঁর নাম জড়ায়। 2012 সালে আসানসোল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। এছাড়া তিনি জেল থেকেই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট (সেট)-এও উত্তীর্ণ হন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, "অর্ণব দামকে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য সরকার, বিচারবিভাগ, কারাবিভাগ সকলের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে ৷ সাধুবাদ জানাই এই উদ্যোগকে। তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সমাজের আমাদের সকলের কর্তব্য।"