কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর: রাজ্যজুড়ে নারী নির্যাতন ও আরজি কর মেডিক্যালের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিজেপির জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের দফতর ঘেরাও অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি উত্তর থেকে দক্ষিণে ৷ ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় ধরা পড়ল রাজ্যজুড়ে আজকের কর্মসূচির টুকরো টুকরো ছবি ৷
শিলিগুড়ি: বিজেপির মহকুমাশাসকের কার্যালয় ঘেরাও অভিযানকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় শহরে । পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা । বিজেপির মাল্লাগুড়ির জেলা দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল করে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা মহকুমাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত যায় । কার্যালয়ের সামনে পৌঁছতেই পুলিশি ব্যারিকেডে বাধাপ্রাপ্ত হয় আন্দোলনকারীরা । ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে যায় বিজেপির মিছিল । এতে তুমুল ধস্তাধস্তিতে জড়ায় দু'পক্ষ । বেশ কিছুক্ষণ চলার পর বিশাল পুলিশবাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করতে সক্ষম হয় । এই বিষয়ে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেন, "আমাদের দাবি এক, দফা এক । আরজিকর কান্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই আমরা । 4 সেপ্টেম্বর প্রতি ব্লকে, শিলিগুড়ি পুরনিগমে একইভাবে অবস্থান বিক্ষোভ, ঘেরাও আন্দোলন সংগঠিত হবে । যতক্ষণ পর্যন্ত না মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে ।"
আলিপুরদুয়ার:ব্যারিকেড ভেঙে জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার চেষ্টা বিজেপি কর্মীদের ৷ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানোর অভিযোগ পুলিশ বিরুদ্ধে । ওয়াটার ক্যানন দিয়ে আলিপুরদুয়ারে জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ । এই বিষয়ে বিজেপির সাংসদ তথা আলিপুরদুয়ার বিজেপির জেলা সভাপতি মনোজ টিজ্ঞা বলেন, "আজ জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও ছিল । শান্তিপূর্ণ মিছিলে আমাদের আটকে দেয় । পুলিশ জল কামান ছেড়ে লাঠিচার্জ করেছে । পুলিশ যা করল তাতে আমাদের কর্মীরা আহত হয়েছেন । মহিলা কর্মীদের মেরেছে ৷ 10-12 জন কর্মী অসুস্থ হয়েছেন ।"
মালদা:বিজেপির জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও অভিযানকে ঘিরে সকাল থেকে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল প্রশাসনিক ভবন চত্বর । মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী । দুপুর 1টা নাগাদ বিজেপির জেলা কার্যালয় থেকে একটি মিছিল সারা শহর পরিক্রমা করে । মিছিলে পা মেলান উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু, বিধায়ক গোপাল চন্দ্র সাহা, বিজেপির দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ও পার্থসারথি ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা । খগেন মুর্মু বলেন, "রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মানুষকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন । আমরা অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি । আরজিকর মেডিক্যালের ঘটনার প্রতিবাদে সারারাজ্যের মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করছে । রাজ্যজুড়ে প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে । হবিবপুরে ঘটনায় তৃণমূলের জেলা ও ব্লক সভাপতি টাকা নিয়ে রফা করতে যাচ্ছেন । এই সরকার দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে রফা করতে চাইছে । আজ আমরা জেলাশাসকের অফিস ঘেরাওয়ের অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছিলাম । জেলাশাসক ভয় পেয়ে সামনে বাঁশ পুঁতে ব্যারিকেড করেছেন, পিছনে লোহার ব্যারিকেড । আরজি করের ঘটনার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে ।"
কোচবিহার:বিজেপির জেলাশাসকের অফিস অভিযান ঘিরে কোচবিহারে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে জলকামান ছোড়া হয় । নিশীথের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে পুলিশের । পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোড়া হয় । পালটা কাদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ । আটক করা হয় নিশীথ প্রামাণিক-সহ 22 জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । এদিনের এই কর্মসূচিতে আহত হয়েছে 15 জন পুলিশকর্মী । আহত হয়েছে বিজেপির বেশ কয়েকজন কর্মীও । যদিও এদিনের কর্মসূচি নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করতে চায়নি ।
"আমি প্রাণহানির আশঙ্কা করছি । কোচবিহারের পুলিশ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিলে এই চক্রান্ত করেছে ।" বেইল বন্ডে চারঘণ্টা জামিনের পর সোমবার রাতে বিজেপির কোচবিহার জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এমনটাই জানালেন প্রাক্তন মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক । তিনি বলেন, "যেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর কোনওভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে পারবে না । আটকাতে পারবে না । অথচ এদিন বিজেপি নেতা কর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করল । আমাকে টানা হ্যাচড়া করে নিয়ে যাওয়া হল । যেভাবে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল, চার ঘন্টা বসিয়ে রাখা হল এতে আমি আমার প্রাণহানির আশঙ্কা করছি ।"
যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে তাকে কটাক্ষ করেছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক । এদিন তিনি বলেন, "গত 5 বছরে কোচবিহারের মানুষ নিশীথ প্রামাণিককে দেখেননি । তাই মানুষ তাকে পরাজিত করেছে । এখন হেরে গিয়ে এসব নাটক করছেন । এসব করে লাভ হবে না ।"
জলপাইগুড়ি:জেলাশাসকের দফতর ঘেরাওয়ে উত্তাল জলপাইগুড়িও । প্রায় 8-9 ফুট উঁচু লোহার ব্যারিকেড ভেঙে জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার চেষ্টা বিজেপির । 3 নং ঘুমটি অবস্থিত কংগ্রেস পাড়ার মাঠ থেকে বিজেপি কর্মীরা জমায়েত শুরু করে । মিছিলে ছিলেন বিজেপি জলপাইগুড়ির সাংসদ ডা: জয়ন্ত কুমার রায় , বিজেপির জেলা সভাপতি বাপী গোস্বামী-সহ নাগরাকাটার বিধায়ক পুনা ভেংরা-সহ দলীয় পদাধিকারিরা ৷ এদিন সাংসদ ডা: জয়ন্ত কুমার রায় অভিযোগ করেন, "আরজি করের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে ৷ আমরা জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও করতে এসেছিলাম । কিন্তু লোহার প্রাচীর দিয়ে রাস্তা বন্ধ করেছে পুলিশ । আগে বাঁশের ব্যারিকেড থাকত এখন লোহার প্রাচীর করেছে । বিজেপিকে কতটা ভয় পেলে এটা হয় ।"
রায়গঞ্জ:বাদ গেল না রায়গঞ্জও ৷ বিজেপির জেলা শাসক দফতর ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তর দিনাজপুরেও উত্তেজনা ছড়াল ৷ এই ঘেরাও কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার, জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস ঘোষ ও নিমাই কবিরাজ-সহ অন্যান্য বিজেপি কর্মী সমর্থকরা । এদিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা উদয়পুরের কৃষি মান্ডির সামনে জমায়েত হয় ৷ তাদের মিছিল জেলাশাসক দফতরের সামনে পৌঁছতে ওই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা । সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে গেরুয়া শিবিরের কর্মী সমর্থকরা । এই ঘটনার জেরে জেলাশাসক দফতরের সামনেই রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে কর্মীরা । এই বিষয়ে জেলা বিজেপি সভাপতি বাসুদেব সরকার জানান, বাংলার পুলিশকে দিয়ে পুলিশমন্ত্রী তার দলের ক্যাডারদের কাজ করাচ্ছেন ৷ এই ঘটনায় যারা প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদেরকে পুলিশকে দিয়ে আটকাচ্ছেন এই পুলিশমন্ত্রী ।
বাঁকুড়া:বিজেপির জেলাশাসকের দফতর ঘেরাওকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় বাঁকুড়াতেও । বাঁকুড়া হিন্দু হাইস্কুল ময়দান থেকে মিছিল করে এদিন বিজেপি কর্মীরা জেলাশাসকের দফতরে যাওয়ার চেষ্টা করে । আইজি অফিস মোড়ে একের পর এক ব্যরিকেড করে মিছিলের পথ অবরোধ করে পুলিশ । দফায় দফায় পুলিশের ব্যরিকেড ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা । পরে ব্যারিকেডের সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা । আন্দোলনকারী বিজেপি কর্মীদের দাবী আর জি করের নির্যাতিতার বিচার যতক্ষণ পর্যন্ত না হচ্ছে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে । ব্যরিকেড করেও এই আন্দোলন দমানো যাবে না ।
পুরুলিয়া:জেলাশাসকের কার্যালয় ঘেরাও অভিযান নিয়ে পুরুলিয়াতেও কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । এদিন পুরুলিয়া শহরের জুবিলি ময়দানে জমায়েত শুরু করে সেখান থেকে বিজেপি দলের নেতা কর্মীরা পুরুলিয়া শহর পরিক্রমা করেন । তারপর জেলাশাসক কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হলেই পুলিশ তাদের বাধা দেয় । দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ ও বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি চলে । দলের কর্মীদের উপর পুলিশ লাঠি চার্জ করে বলে অভিযোগ বিজেপির ৷ এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, "পুলিশ আমাদের অভিযানে লাঠি চালিয়েছে যার ফলে আমাদের বলরামপুরের মণ্ডল সভাপতি আহত হয়েছেন । আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি ।" যদিও লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ ।